গৃহবধূ দোলনা বেগমকে এক সপ্তাহ ধরে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এর মধ্যে তাঁর সন্ধান চেয়ে রাজধানীর কদমতলী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন স্বামী দেলোয়ার হোসেন। পুলিশ নানা জায়গায় তাঁর খোঁজ করে ব্যর্থ হয়। অবশেষে মঙ্গলবার রাতে শ্যামপুরের একটি বাড়ির নির্মাণাধীন পঞ্চম তলায় রাখা বালুর স্তূপে পাওয়া যায় তাঁর বস্তাবন্দি গলিত লাশ। তদন্তে বেরিয়ে আসে, পারিবারিক কলহের জেরে স্বামীই তাঁকে হত্যার পর লাশ লুকিয়ে রাখেন। এর পর সাজান নিখোঁজ হওয়ার নাটক।

কদমতলী থানার ওসি প্রলয় কুমার সাহা সমকালকে বলেন, নিজেকে সন্দেহের বাইরে রাখতে জিডি করে পুলিশকে ধোঁকা দিতে চেয়েছিলেন হত্যায় জড়িত দেলোয়ার। তবে লাশ উদ্ধারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তিনি সব স্বীকার করেন। আজ বুধবার তিনি আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

পুলিশ ও স্বজনরা জানান, শ্যামপুরের নবারুণ গলির ১৩/১৫ নম্বর বাড়ির তৃতীয় তলায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন ৫০ বছর বয়সী দোলনা। তার স্বামী দেলোয়ার ওই বাড়ির কেয়ারটেকার হিসেবে কাজ করেন। পাশাপাশি তিনি অনিয়মিতভাবে মাছের ব্যবসাও করেন। ২০ বছর আগে তাঁদের বিয়ে হয়। তাঁদের স্কুলপড়ূয়া দুটি মেয়ে রয়েছে। দোলনার এর আগেও একবার বিয়ে হয়েছিল। ওই সংসারে তার দুটি ছেলে রয়েছে। তাঁরা আলাদা থাকেন। তাঁর একটি ছেলে মাদকাসক্ত। তিনি প্রায়ই এসে টাকার জন্য ঝামেলা করতেন। গত ১ সেপ্টেম্বর সকালেও তেমনি তিনি এসে মায়ের কাছে টাকা চান। মা টাকা না দেওয়ায় তিনি সৎবাবার কাছে টাকা চান। দু'জনই টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে গালাগাল করে চলে যান। এর পর দেলোয়ার বিরক্ত হয়ে স্ত্রী দোলনাকে গালাগাল করেন। তাঁকে বিয়ে করার কারণে বছরের পর বছর মাদকাসক্ত ছেলের অত্যাচার সহ্য করতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন। এ সময় দোলনা প্রতিবাদ করতে গেলে দু'জনের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। তখন দেলোয়ার রেগে তাঁকে মারধর করেন এবং দেয়ালের সঙ্গে চেপে ধরে শ্বাসরোধ করেন। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পরে তিনি স্ত্রীর মৃতদেহ বস্তায় ভরে ভবনের পঞ্চম তলায় নিয়ে যান। সেখানে নির্মাণকাজের জন্য রাখা বালুর ভেতর বস্তাটি ঢুকিয়ে দেন।

ঘটনার সময় দুই মেয়ে স্কুলে থাকায় তারা এ বিষয়ে কিছু জানতে পারেনি। দেলোয়ার সবার কাছে দাবি করেন, তাঁর স্ত্রী বাসা থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন। গত ৩ সেপ্টেম্বর তিনি জিডিও করেন। স্ত্রীকে খুঁজে বের করার জন্য পুলিশকে বারবার তাগাদা দেন।

কদমতলী থানার এসআই আঙ্গুরা বেগম সীমা জানান, মৃতদেহ পচে দুর্গন্ধ ছড়ালে বাড়ির লোকজনের সন্দেহ হয়। তাঁদের মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ বালু সরিয়ে বস্তাটি দেখতে পায়। সেটি খুলে পাওয়া যায় গলিত লাশ। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে লাশ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য তা পাঠানো হয় সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড হাসপাতাল) মর্গে।

নিহতের চাচা আবদুল হামিদ সমকালকে জানান, ১ সেপ্টেম্বর থেকে পরিবারের কারও সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি দোলনার। এর পর মঙ্গলবার ভাতিজির লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে তিনি ছুটে যান। এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার চান তিনি। নিহতের গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ীর নেত্রাপাতি এলাকায়।