- রাজধানী
- জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদে সভাপতি সনজীদা, সম্পাদক শর্মিলা
জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদে সভাপতি সনজীদা, সম্পাদক শর্মিলা

সনজীদা খাতুনকে সভাপতি ও ড. আতিউর রহমানকে নির্বাহী সভাপতি করে জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের ৬১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে৷ এবারের কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক পদে এসেছেন বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী শর্মিলা বন্দোপাধ্যায়, কোষাধ্যক্ষ পদে এসেছেন নাসেহুন আমীন।
রোববার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় জাতীয় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সারা দেশের ৫০টি শাখা থেকে রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের প্রতিনিধিরা সেখানে অংশ নেন৷
রোববার ছিলো ৪০তম জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলনের সমাপনী দিন৷ এদিনের আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষাবিদ অধ্যাক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের নির্বাহী সভাপতি ড. আতিউর রহমান। সূচনা বক্তব্য দেন বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী বুলবুল ইসলাম। দুই গুণীর শংসাবচন পাঠের সময় জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনজুড়ে শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েন রবীন্দ্র সংগীত শিল্পীরা। বিনম্র শ্রদ্ধায় তারা স্মরণ করেন সংস্কৃতি ক্ষেত্রে তাদের অনন্য ভূমিকার কথা।
সেগুনবাগিচায় জাতীয় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের প্রতিনিধি সম্মেলন
এ দিন জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের 'রবীন্দ্র পদক' পান প্রয়াত দুই রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী ও সংগঠক মিতা হক ও নীলোৎপল সাধ্য। সম্মাননা গ্রহণ করেন মিতা হকের মেয়ে রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী ফারহিন খান জয়িতা ও নীলোৎপল সাধ্যের স্ত্রী ঝর্ণা মল্লিক।
গত শুক্রবার সকালে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আকরম হোসেন এবারের সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। রোববার বিকেলে এবারের সম্মেলনে রবীন্দ্রসংগীত প্রতিযোগিতার ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এ সময় রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদের নির্বাহী সভাপতি ড. আতিউর রহমান পরবর্তী সম্মেলন হবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত নওগাঁর পতিসরে আয়োজনের ঘোষনা দেন।
এবারের জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলনে কিশোর বিভাগ ও সাধারণ বিভাগে রবীন্দ্রসংগীত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিশোর বিভাগে 'অনন্য মান' পেয়েছেন ময়মনসিংহের আনুস্কা চক্রবর্তী, সাধারণ বিভাগে 'অনন্য মান' পেয়েছেন পূরবী দে সিমন্তি। এদের হাতে 'জাহিদুর রহিম স্মৃতি পুরস্কার' তুলে দেন অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও ড. আতিউর রহমান। কিশোর বিভাগে প্রথম মান পেয়েছেন ১৭ জন প্রতিযোগী, দ্বিতীয় মান ৬ জন, সাধারণ মান পেয়েছেন ৫ জন। সাধারণ বিভাগে প্রথম মান ৯ জন, দ্বিতীয় মান ৯ জন, সাধারণ মান পেয়েছেন তিন জন প্রতিযোগী। তাদের হাতেও পুরস্কার তুলে দেন অনুষ্ঠানের অতিথিরা।
করোনার সময়ে দুই শতাধিক সংস্কৃতিসেবীর প্রয়াণে শোকার্ত শিল্পীরা তাদের স্মরণ করেন পুরস্কার বিতরণীর পর।
সম্মেলনে প্রস্তাবনা পাঠ করেন প্রাবন্ধিক ও গবেষক মফিদুল হক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের পুরোধা লীলা রায়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্ত্রী প্রমিলা নজরুল ও ভূ পর্যটক রামনাথ বিশ্বাসের ভিটেমাটি দখলমুক্ত করে সংস্কার করে নবরূপে উপস্থাপনের দাবি জানায় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ। এছাড়া আগামী শিক্ষাবর্ষে দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সংস্কৃতি ও শরীরচর্চা শিক্ষার জন্য 'শিল্প ও সংস্কৃতি চর্চা' প্রকল্প শুরু হচ্ছে। রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের শিল্পীরা যেন স্বেচ্ছায় ওই প্রকল্পের অধীনে স্ব স্ব এলাকায় সম্পৃক্ত হন, তার আহ্বান আসে সম্মেলনের প্রস্তাবনায়।
সম্মেলনের ঘোষণায় জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের বিদায়ী কমিটির সহ সভাপতি ডা. সারওয়ার আলী বলেন, সমাজে এক অশুভ শক্তি নারী বিদ্বেষী ও বাঙালি প্রচারণা জোরেশোরে শুরু হলো তখন সমাজ ও রাষ্ট্রের নির্লিপ্ততা আমরা প্রত্যক্ষ করছি। ধর্মবিদ্বেষী নানা প্রচারণা কারো কারো মনোজগতে প্রভাব ফেলছে, তাতে সামাজিক অবক্ষয় প্রান্তরেখা অতিক্রম করছে৷ বিশ্বময় সংঘাতে অর্থনৈতিক সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে। সমাজ ও সংস্কৃতির এমন বিপন্ন অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আমরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দ্বারস্থ হতে পারি।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, সমাজে প্রতিবাদী চরিত্র জাগাতে গেলে আমাদের সবার আগে জাগাতে হবে শিল্পের আলো, সংস্কৃতির আলো। শিক্ষার আলো গভীর অন্ধকার এক সুড়ঙ্গ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য উজ্জ্বল রেখা দেখাবে। সংস্কৃতির আলো মানুষের মধ্যে সুন্দরের প্রতি ভালোবাসা ও নিষ্ঠা জাগাবে৷ তবেই না জাগবে প্রতিবাদী চরিত্র।
তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেভাবে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন, গানে-কবিতায় যেভাবে সংস্কৃতির মূল্যবোধ ও নানন্দিকতার চর্চা করে গেছেন জীবনভর, তা আমাদের জীবনে ধারণ করতে হবে। রবীন্দ্রনাথের চর্চা আরও গভীরভাবে ভাবতে হবে।
১৯৭৯ সালে শিল্পী জাহিদুর রহিমের প্রয়াণ দিবসে কাজ শুরু হয়েছিল 'জাহিদুর রহিম স্মৃতি পরিষদ'-এর। দেশব্যাপী বৃহত্তর পরিসরে কর্মকান্ড পরিচালনা করার লক্ষ্য নিয়ে পরবর্তীকালে বাঙালির চিরকালের সঙ্গী রবীন্দ্রনাথের নাম যুক্ত করে সংগঠনের নাম করা হয় জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ।
এরপর এ সংগঠনের মূল লক্ষ্য হয়ে উঠেছে সকল প্রকার প্রতিবন্ধকতা দূর করে বাঙালির জাতীয় সংস্কৃতির সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক বিকাশের ধারাকে সমৃদ্ধ ও গতিশীল করে তোলার উদ্দেশ্যে সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করা।
মন্তব্য করুন