জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধন নিয়ে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রাজধানীর দুই মেয়র। তাঁরা বলেন, রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের তৈরি করা ওয়েবসাইটটি দিনভর ডাউন থাকে। কেউ ঢুকতে পারে না। তখন সাধারণ মানুষ দালালের আশ্রয় নেয়। সার্ভার ডাউনের কারণে সাধারণ মানুষ মেয়রদের ওপর ক্ষোভ উগরে দেন। এই দায় সিটি করপোরেশন নেবে নয়। জন্মসনদে ভুল হলে মানুষের বাড়তি ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এসব ভুল সংশোধনের ক্ষমতা কাউন্সিলরদের হাতে দেওয়া প্রয়োজন। এ জন্য আইন সংশোধন করতে হবে।

জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধন দিবস উপলক্ষে রোববার শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে স্থানীয় সরকার বিভাগ আয়োজিত আলোচনা সভায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকা স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামের উদ্দেশে তাঁরা বলেন, স্কুলে ভর্তির মৌসুম নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে জন্মনিবন্ধনের প্রচণ্ড চাপ হয়। এর আগেই সমস্যার সমাধান হওয়া দরকার।
তাজুল ইসলাম বলেন, 'এ ধরনের অভিযোগ আমিও পেয়েছি। এমনকি বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীও আমার কাছে অভিযোগ করেছেন।' এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন মন্ত্রী।
মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, 'দিনে জন্মনিবন্ধনের সার্ভার ডাউন থাকে। কখনও বন্ধও থাকে। আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতে ওই সময় লোকজন এসে নিবন্ধন করতে পারেন না। রাতে সার্ভার ঠিক থাকে। ফলে লোকজন নিশাচর দালালদের হাতে জন্মনিবন্ধনের কাজটি দিয়ে দেন। হটলাইন নম্বর থাকলেও কেউ ফোন ধরে না। সংশোধনের ক্ষেত্রে আরেক ধরনের ভোগান্তি হয়। আইন অনুসারে, ৯০ দিনের মধ্যে আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতে সংশোধন হয়। ৯০ দিনের বেশি হয়ে গেলে জেলা প্রশাসক বা স্থানীয় সরকারের উপপরিচালকের (ডিডিএলজি) কার্যালয়ে যেতে হয়।'
মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, 'জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন নিয়ে সাধারণ মানুষের অসন্তোষ ও ক্ষোভের রোষানলে পড়ি আমরা। কারণ, তাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। প্রক্রিয়া, আইন ও বিধিগত কিছু বিষয় থাকে, যেগুলোর তাৎক্ষণিক সমাধান দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই। বিদেশ থেকে বড় বড় ই-মেইল পাই। সমাধান দিতে পারি না। বহির্বিশ্বে ভাবমূর্তি নষ্ট হয়।'
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, 'যেসব সমস্যার কথা বলা হচ্ছে, তা নোট নিতে বলেছি। আপনাদের পক্ষ থেকে যা করার আছে করুন। মন্ত্রী হিসেবে আমার টাকা দেওয়ার নিজস্ব ক্ষমতা আছে। সার্ভারের জন্য টাকা চাইলে কেন দিতে পারব না?' তিনি আরও বলেন, বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ হচ্ছে। আর সার্ভারের জন্য ৫-৭ কোটি টাকা দেওয়া কোনো বড় ব্যাপার না। লোকজন তাদের কাজ ফেলে দিনের পর দিন জন্মনিবন্ধনের জন্য ঘোরেন। বহু মাত্রায় দুর্ভোগ হচ্ছে।'
রেজিস্ট্রার জেনারেল রাশেদুল হাসান বলেন, জনসংখ্যার চেয়ে জন্মনিবন্ধন বেশি হয়। এ নিয়ে প্রায়ই লোকজন প্রশ্ন করেন। জনশুমারি অনুযায়ী, দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটির বেশি। তবে জন্মনিবন্ধন হয়েছে প্রায় ২২ কোটি।