বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াতের উপকারিতা অপরিসীম। এতে যেমন শারীরিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে, তেমনি বন্ধুদের সাথে গল্প করতে করতে যাওয়া যায় বলে মনও ভালো থাকে। আবার যানবাহন ব্যবহার হয় না বলে পরিবেশ দূষণেরও আশঙ্কা নেই। কিন্তু নিরাপদ পরিবেশ না থাকায় হেঁটে যাতায়াতের ক্ষেত্রে প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের নানাবিধ বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়। এসব সমস্যার সমাধান করে হেঁটে বিদ্যালয়ে যাতায়াতের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।

রোববার ‘সুস্থতার জন্য হেঁটে যাই, স্কুলে হেঁটে যাতায়াতের নিরাপদ পরিবেশ চাই’ শীর্ষক স্লোগানে রায়ের বাজার হাই স্কুল কর্তৃক একটি অবস্থান কর্মসূচি এবং ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুল কর্তৃক আয়োজিত একটি র‌্যালি থেকে শিক্ষার্থীরা এ দাবি জানায়। শিক্ষার্থীদের হেঁটে বিদ্যালয়ে যাতায়াতে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে প্রতি বছর অক্টোবর মাসটিকে ‘একটিভ এন্ড সেফ রুট টু স্কুল’ মাস হিসেবে পালন করা হয়।

রায়ের বাজার হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মেহেরুন্নেসা, শিক্ষক মাহমুদুল হাসান, ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা এম এ মান্নান মনির, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর কমিউনিকেশন অফিসার শানজিদা আক্তার, প্রকল্প কর্মকর্তা প্রমা সাহা, সহকারি প্রকল্প কর্মকর্তা মো মিঠুন, সহকারী প্রকল্প কর্মকর্তা বাঁধন ঘোষ এবং রায়ের বাজার হাই স্কুল ও ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচির আয়োজন করে।

'ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট' এর একটি গবেষণা থেকে দেখা যায়, রায়ের বাজার এলাকার ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী হেঁটে যাতায়াত করে। ৬৯.৬৯ শতাংশ শিক্ষার্থী ভাঙ্গাচোড়া রাস্তা, ৭৩.২১ শতাংশ শিক্ষার্থী আবর্জনা, এবং ৭৬.১৯ শতাংশ শিক্ষার্থী দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে সমস্যার মুখোমুখি হয়।

আয়োজনে বক্তারা বলেন, তুলনামূলক ভালো এবং সুনামসম্পন্ন বিদ্যালয়ে ভর্তির আগ্রহ থেকে অভিভাবকরা সন্তানদের শহরের এক প্রান্তে থেকে অন্য প্রান্তের বিদ্যালয়ে ভর্তি করেন। এর ফলে ট্রিপের সংখ্যা ও ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। প্রতিটি এলাকা সমমানের বিদ্যালয় নিশ্চিত করা হলে হেঁটে বিদ্যালয়ে যাতায়াত সহজ হবে। এতে এলাকাভিত্তিক যানজট কমে যাবে, ব্যক্তিগত গাড়ির উপর নির্ভরতা কমে যাবে এবং জ্বালানি সাশ্রয় হবে। সম্প্রতি গ্যাজেটেড হওয়া বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় ‘বিদ্যালয়ভিত্তিক অঞ্চল ধারণা’বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। এ ধারণাটি বাস্তবায়ন হলে হেঁটে বিদ্যালয়ে যাতায়াতের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত হবে।

বক্তারা আরো বলেন, ঢাকা শহরে ৬০ শতাংশ মানুষ কোন কোনভাবে হেঁটে যাতায়াত করে। ঢাকা আরবান ট্রান্সপোর্ট নেটওয়ার্ক ডেভেলপমেন্ট স্টাডি ২০১০ অনুযায়ী, ঢাকা শহরে ৩০ শতাংশ স্কুল ট্রিপ হয় হেঁটে।  যাতায়াতের নানা প্রতিবন্ধকতা স্বত্ত্বেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ হেঁটে যাতায়াত করেন। শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াতের পরিবেশ নিশ্চিত হলে সামগ্রিকভাবে সকল বয়স ও সামর্থ্যের মানুষ উপকৃত হবেন। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক একটি পথচারী নিরাপত্তা প্রবিধানমালা খসড়া করা হয়েছে। ড্যাপের পাশাপাশি এটিও দ্রুত প্রণয়ন সম্পন্ন করে বাস্তবায়ন করা জরুরি।

বিষয় : নিরাপদে হাঁটা একটিভ এন্ড সেফ রুট টু স্কুল’ 'ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট

মন্তব্য করুন