অপরিকল্পিত নগরায়ণ, সচেতনতার অভাব ও এক শ্রেণির অসাধু মানুষের লোভের বলি হয়ে দখল হয়েছে ঢাকার অনেক খাল। ময়লা-আবর্জনায় ভরাট হয়ে পানির প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। এতে বাড়ছে জলাবদ্ধতা। দিন দিন নগরীর আয়তন বাড়লেও ছোট হয়ে আসছে জলাশয় ও খাল। জলাবদ্ধতা বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে মশার বংশবিস্তার। এতে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মতো মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে। ছড়িয়ে পড়ছে পানিবাহিত নানা রোগ। এ পরিস্থিতিতে চারটি খাল সংস্কার করে নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এ নিয়ে এরই মধ্যে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা ব্যয়ের একটি প্রকল্প পাস হয়েছে।

প্রকল্পের অধীনে ঢাকা দক্ষিণ সিটির কালুনগর, জিরানী, মান্ডা ও শ্যামপুরের চারটি খালের ১৯ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার সংস্কার করা হবে। জলাবদ্ধতা নিরসন ও হাতিরঝিলের মতো খালের পাশে তৈরি করা হবে বিনোদন কেন্দ্র। এ নিয়ে গত ১১ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির বৈঠকে ৮৯৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকার প্রকল্প পাস হয়।

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, চার খালের মধ্যে কালুনগর খাল মুজিব সরকারি মহাবিদ্যালয় থেকে রায়েরবাজার স্লুইসগেট পর্যন্ত ২ দশমিক ৪ কিলোমিটার, জিরানী খাল নন্দীপাড়া ব্রিজ ত্রিমোহনী পর্যন্ত ৩ দশমিক ৯ কিলোমিটার, মান্ডা থেকে বেগুনবাড়ী পর্যন্ত ৮ দশমিক ৭ কিলোমিটার, শ্যামপুর খাল ৪ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার সংস্কার করা হবে। প্রথম ধাপে খালের ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার, পলি অপসারণ, স্লোপ প্রটেকশন, নিকাশ কাঠামো নির্মাণ, ল্যান্ডস্কেপিং ও সবুজায়ন করা হবে। দ্বিতীয় ধাপে নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি ও নাগরিক সুবিধা বাড়াতে আট ফুট উচ্চতার দৃষ্টিনন্দন সুরক্ষা বেষ্টনী নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া ৩৬টি পদচারী সেতু, ১৯টি গাড়ি চলাচল সেতু, ১০টি পাবলিক টয়লেট, ৩২ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে, চারটি প্লাজা, বাইসাইকেল লেন স্থাপন ও ৭৭১টি নান্দনিক বাতি স্থাপন করা হবে।

এ চার খালের উন্নয়নে প্রাথমিকভাবে পাস হওয়া অর্থ ব্যয়ে প্রকল্পটির কাজ চলতি বছরের ডিসেম্বরে শুরু হয়ে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে শেষ হবে। প্রকল্পের ৬২৯ কোটি ১১ লাখ টাকা দেবে সরকার এবং ২৬৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা ডিএসসিসির নিজস্ব অর্থায়নে ব্যয় হবে। সংশ্নিষ্টরা মনে করেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে নগরীর এ খালগুলোয় অবাধ পানিপ্রবাহের সৃষ্টি হবে। জলবদ্ধতা নিরসনের পাশাপাশি নান্দনিক পরিবেশ দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিবেশ, জলবায়ু, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খাইরুল বাকের সমকালকে বলেন, দখল ও দূষণে নগরীর খালগুলোয় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। ফলে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে মশার বিস্তারের সঙ্গে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়ায়। সিটি করপোরেশন নগরীর চারটি খাল উন্নয়নে প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে হাতিরঝিলের মতো দৃষ্টিনন্দন পরিবেশের সৃষ্টি হবে। তিনি বলেন, মানুষ ওয়াকওয়েতে হাঁটতে পারবে। পদচারী সেতুতে সময় কাটাতে পারবে। উন্মুক্ত মঞ্চে খালের ওপর সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় আড্ডাও জমবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহমেদ বলেন, চারটি খালের উন্নয়নে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভায় প্রকল্প পাস হয়েছে। টেন্ডারের মাধ্যমে ডিসেম্বরে খাল উন্নয়নে কাজ শুরু হবে।