- রাজধানী
- খাদ্য সহায়তার নামে প্রতারণার জাল
খাদ্য সহায়তার নামে প্রতারণার জাল

আম্বিয়া খাতুন শিলা
উচ্চমূল্যের বাজারে একটু কম দামে পণ্য পাওয়ার প্রচেষ্টা সবার থাকে। যদি বলা হয়, বছরব্যাপী নানা খাদ্যদ্রব্য বিনামূল্যে দেওয়া হবে- তাহলে তো কথাই নেই। এই লোভনীয় ফন্দিতে গ্রামের সহজ-সরল মানুষের কাছ থেকে ফ্রি খাবার প্যাকেজের নামে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। 'বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশন' নামে একটি সংগঠনের কথা বলে কথিত এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে মাঠকর্মীও। তাঁরা লোকজনের কাছ থেকে টাকা তুলছেন, আর আস্থা সৃষ্টিতে প্রাথমিক পর্যায়ের সহায়তা হিসেবে কাউকে দিচ্ছেন চার কেজি করে আটা। নিচ্ছেন ৬২০ টাকা করে।
ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় অভিনব এই প্রতারণার জাল বিছিয়েছেন উপজেলার বড়গ্রাম ইউনিয়নের কাতলসা গ্রামের মৃত সামাদ মাস্টারের মেয়ে আম্বিয়া খাতুন শিলা। তবে তাঁর এই সংগঠনের অস্তিত্ব পায়নি সমকাল।
জানা গেছে, শিলার বাড়ি কাতলসায় হলেও তিনি থাকেন ময়মনসিংহ শহরে। সেখান থেকেই নিজ উপজেলায় প্রতারণার নেটওয়ার্ক পরিচালনা করেন। তাঁর নিয়োগ করা প্রতিনিধিরা এলাকার নিরীহ মানুষ বেছে বেছে তাঁদের বোঝাচ্ছেন, বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশন থেকে আটা-তেলসহ নানা খাদ্যপণ্য বছরে তিনবার বিনামূল্যে দেওয়া হবে। কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছেন সংগঠনের ময়মনসিংহ বিভাগীয় সভাপতি শিলা। এ জন্য নিবন্ধন ও বার্ষিক ফিসহ মোট ৬২০ টাকা করে দিতে হবে। এভাবে পুরো উপজেলার ১০ হাজারের বেশি মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।
টাকা দেওয়ার কথা জানিয়ে একই ইউনিয়নের রায়থুরা গ্রামের বাসিন্দা লাভলী আক্তার বলেন, বছরব্যাপী খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে শুনে আমিসহ এলাকার অনেকেই ৬২০ টাকা করে দিয়েছি। এই গ্রামে নিবন্ধনের টাকা নিচ্ছেন হাসিনা আক্তার নামে এক নারী। তিনি নাকি মাঠকর্মী। এরপর অনেককে চার কেজি করে আটা দেওয়া হয়েছে।
কথিত মাঠকর্মী হাসিনা আক্তার জানান, এলাকার অনেকেই এই সহায়তা দেওয়ার কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজ করছেন।
নিজেকে বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের বিভাগীয় কমিটির সভাপতি দাবি করে শিলা বলেন, আমাদের সংগঠন থেকে গরিব মানুষকে বছরব্যাপী খাদ্যসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এখন নিবন্ধনের কাজ চলছে। এ জন্য উপজেলার সব গ্রামে মাঠকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২ হাজার মানুষের নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে, তাঁরা ৬২০ টাকা করে দিয়েছেন।
আদৌ এমন কোনো সংগঠনের অস্তিত্ব আছে কিনা জানতে চাইলে শিলা দাবি করেন, 'তাঁদের সংগঠনের নিবন্ধন নম্বর-১৭। এর কেন্দ্রীয় অফিস রাজধানীর পল্টনে। সভাপতি এস কে টুটুল ও সম্পাদক ফয়েজ উদ্দিন।' তাঁদের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বলে ফোন কেটে দেন।
মুক্তাগাছার ইউএনও একেএম লুৎফর রহমান বলেন, আগে কেউ আমার কাছে অভিযোগ করেনি। বিষয়টি শুনে অবাক হয়েছি। শিলাসহ সংশ্নিষ্টদের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে অভিযোগের সত্যতা পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন