ময়মনসিংহের ত্রিশাল থেকে কাজের সন্ধানে ঢাকায় আসেন পঞ্চাশোর্ধ্ব রফিকুল ইসলাম। পেশায় তিনি রাজমিস্ত্রি। মা, স্ত্রী এবং ছেলেমেয়েকে নিয়ে তাঁর সংসার। মাঝেমধ্যে ক্ষেত-খামারে দিনমজুর হিসেবে কাজ করতেন। এখন নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় জীবন সংগ্রামে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি।

এলাকায় কাজ না থাকায় সংসার চালাতে পারছিলেন না রফিকুল। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। তাই জীবিকার সন্ধানে এসেছেন রাজধানী শহর ঢাকায়। কিন্তু পরিচিত লোক না থাকায় কারও বাসায় মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়নি। এই ঠান্ডার রাতে গুটিসুটি মেরে তিনি ঘুমান রাজধানীর নিউমার্কেটের বারান্দায়।

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরছিলেন রফিকুল। টিএসসিতে কার পার্কিংয়ে কোনো গাড়ি বা মোটরসাইকেলের সামনে কাউকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলে গাড়ির মালিক মনে করে ছুটে যাচ্ছিলেন। গাড়িটা মুছে দেওয়ার বিনিময়ে কিছু টাকার জন্য অনুনয়-বিনয় করছিলেন। পেটে খিদে, কিছু কিনে খেতে চান। কারও কাছে কাঙ্ক্ষিত কাজ না পেয়ে কলাভবনের দিকে হাঁটতে থাকেন।

ডাক দিতেই কাজের আশায় এগিয়ে এলেন রফিকুল। খাবারের দোকানে একসঙ্গে খাবার খেতে খেতে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি জানান, পাঁচ সদস্য নিয়ে অভাবের সংসার। ছেলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে আর মেয়ের বয়স ৯ বছর। এলাকায় রাজমিস্ত্রি ও ক্ষেত-খামারে কাজ করে কোনো রকম চলছিল তাঁর সংসার। এরপর এলাকায় কোনো কাজ পাচ্ছিলেন না। তাই সাত-পাঁচ না ভেবে কাজের খোঁজে ঢাকায় চলে আসেন। কিন্তু ঢাকায় আসার পর তাঁর করুণ অবস্থা। কোনো কাজ পাননি তিনি। ধান কাটার মৌসুমে এলাকায় গিয়ে কাজ পাওয়ার আশা করছেন। তার আগে ঢাকায় তিনি অন্য কাজ জোগাড় করতে চান।

শুরুর দিকে রফিকুল মহাখালীতে কাজ খুঁজতেন এবং রাতে একটি মার্কেটের বারান্দায় ঘুমাতেন। সেখানে কাজ না পাওয়ায় নিউমার্কেট এলাকায় এসেছেন। এখন মার্কেটের বারান্দায় থাকছেন। কথায় কথায় জানালেন, সকালে একজনের গাড়ি ঠেলে দিয়ে ১০০ টাকা পেয়েছিলেন, সেটা দিয়ে খাবার খেয়েছেন। এরপর আর কোনো কাজ পাননি।

বাড়িতে পরিবার কীভাবে চলছে- জানতে চাইলে রফিকুল জানান, বাড়িতে কিছু চাল আছে, কিছু সবজিরও চাষ করেছেন। সেটা দিয়ে কোনোভাবে তাঁরা খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছেন। ঢাকায় কোনো কাজ না পেলে বাড়িতে ফিরে যাবেন। তবে বাড়িতে ফিরে যাওয়ার টাকাও তাঁর কাছে নেই। ধান কাটার মৌসুম আসার আগ পর্যন্ত কীভাবে সংসার চলবে, তা তিনি জানেন না। শুধু রাজমিস্ত্রির কাজই জানেন, অন্য কোনো কাজও জানেন না।

রফিকুল বলেন, আগে পরিবার নিয়ে কোনো রকম খেয়ে-পরে থাকতেন। কিন্তু জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কারণে একবেলা না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। চোখের সামনে পরিবারের এমন কষ্ট তাঁর সহ্য হচ্ছে না। এ সময় তাঁর চোখ দিয়ে পানি গড়াতে দেখা যায়।