গ্লোবাল ফিনডেপের তথ্যানুযায়ী, আর্থিক পরিষেবা সংক্রান্ত বিষয়াবলীতে নারী ও পুরুষের যে ব্যবধান ছিল, গত এক দশকে তা প্রথমবারের মত নেমে এসেছে ৪ শতাংশে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে, এই ব্যবধানটি ৬ শতাংশের চেয়ে কিছুটা বেশি। সেখানে দেখা গেছে, ৭৪ শতাংশ পুরুষের বিপরীতে ৬৮ শতাংশ নারীর একটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে।

বুধবার বিশ্বব্যাংকের ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ গ্রুপ এবং বিশ্বব্যাংক গ্রুপের বছরব্যাপী জেন্ডার ইকুয়্যালিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট +১০: অ্যাপিলারেট ইকুয়ালিটির সাথে বিআইজিডি সম্মিলিতভাবে 'এপপ্যান্ডিং উইমেন'স ফিনান্সিয়াল ইনক্লুশনঃ গ্লোবাল ইমপ্লিকেশানস অফ দ্য ফিনডেপ জেন্ডার নোট ২০২১' শীর্ষক একটি ওয়েবিনারের আয়োজন করে।

ওয়েবিনারে বিশ্বব্যাংকের ডেভলপমেন্ট রিসার্চ গ্রুপের মুখ্য অর্থনীতিবিদ এবং গ্লোবাল ফিনডেপের প্রতিষ্ঠাতা লিওরা ক্ল্যাপার ফিনডেপ, জেন্ডার নোট ২০২১-এর বৈশ্বিক ফলাফল তুলে ধরেন। শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাবিদদের পাশাপাশি ওয়েবিনারে আর্থিক পরিষেবা বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিরাও অংশ নেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন।

উইমেন'স ওয়ার্ল্ড ব্যাংকিং এর প্রেসিডেন্ট ও সিইও, ম্যারি অ্যালেন ইসকেন্ডেরিয়ান তার উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, 'এখন আনুষ্ঠানিক আর্থিক ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত নারীদের সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক বেশি। তবে এটিও মনে রাখতে হবে, নারীদের এক্ষেত্রে ধরে রাখতে এবং তাদের অংশগ্রহণের হার বৃদ্ধিতে যা যা প্রয়োজনীয়, সেসব প্রণোদনাও আমাদের দিতে হবে। আর্থিক সেবা প্রদানকারী ও সেবাগ্রহীতাদের মাঝে বৃহত্তর আস্থা, সচেতনতা এবং প্রাসঙ্গিকতা তৈরিতে আমাদের অবশ্যই মনোযোগী থাকতে হবে।'

বিশ্বব্যাংকের ডেভলপমেন্ট রিসার্চ গ্রুপের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ও গ্লোবাল ফিনডেপের প্রতিষ্ঠাতা লিওরা ক্ল্যাপার জানান, উন্নয়নের জন্য আর্থিক অন্তর্ভুক্তি প্রয়োজনীয়। এটির বিস্তার নারীদের সঞ্চয়ে উৎসাহিত করবে এবং তখন তারা নিজেরাই ডিজিটাল লেনদেন করতে সক্ষম হবে। একইসাথে এটি নারীদের আয়-ব্যয়ের প্রক্রিয়াকে সহজ করবে, ফলশ্রুতিতে তারা পরিবারকে আর্থিক সহায়তাও করতে পারবে।

ওয়েবিনারে বিআইজিডি'র উই-ডিফাইন'র অন্তর্ভুক্ত কিছু গবেষণা তুলে ধরা হয়। এই গবেষণাগুলো গ্লোবাল সাউথে ডিজিটাল আর্থিক পরিষেবা এবং নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের যোগসূত্র অন্বেষণ করে। ইউনিভার্সিটি অফ কেন্ট, ক্যান্টারবেরি থেকে জাকি ওয়াহহাজ, আফ্রিকান পপুলেশন অ্যান্ড হেলথ রিসার্চ সেন্টারের ক্যারোলিন ওয়াইনানা, সেভ দ্য চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনাল থেকে মুন্সি সুলাইমান, বিআইজিডি থেকে লোপিতা হক এবং বিশ্বব্যাংকের জেভিয়ার জিনি তাঁদের প্রকল্প সম্পর্কে ওয়েবিনারে কথা বলেন।

এসময় বাংলাদেশের ডিজিটাল আর্থিক খাতে কিভাবে এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো নারীদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে অবদান রাখছে সে বিষয়ে বিকাশের চিফ এপটার্নাল অ্যান্ড কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার শেখ মো. মনিরুল ইসলাম আলোকপাত করেন।

এমসিটি ফিনান্সিয়াল সেক্টর রিজিওনাল ইন্ডাস্ট্রি হেড মোমিনা আইজাজউদ্দিন বলেন, 'নারীদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকে উৎসাহিত করতে, আমাদের পণ্য-কেন্দ্রীক চিন্তা থেকে বেরিয়ে গ্রাহক-কেন্দ্রীক মনোভাব যেটি নারীগ্রহীতাদের চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, সেটি গ্রহণ করা দরকার। আরও লিঙ্গ নিরপেক্ষ আর্থিক সেবা নিশ্চিত করতে আমাদের একসাথে কাজ করাটাও বেশ জরুরি।'

বিআইজিডি'র নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন বলেন, 'কিছু ইতিবাচক চিত্র আজকাল আমরা দেখছি যা খুবই আশাব্যঞ্জক। কিন্তু আমাদের আরও বেশি করে কাজ করতে হবে যাতে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির এই ফলাফলগুলো নারীদের জন্য টেকসই ও অর্থবহ হয়।'