মোহাম্মদপুর মিরপুর সাভার দাপাচ্ছে কিশোর গ্যাং
লেভেল হাই, দে ধাক্কা, লও ঠ্যালা গ্রুপসহ বিভিন্ন চক্রের ৫৭ সদস্য গ্রেপ্তার

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা কিশোর গ্যাংয়ের একাংশ। শনিবার বসিলার র্যাব কার্যালয়ে সমকাল
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ০০:২২ | আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ০৯:০০
কোনোভাবেই কিশোর গ্যাংয়ের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। মাঝেমধ্যেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাই, চাঁদাবাজি, হামলা ও খুনাখুনি ঘটায় এসব গ্যাং। ৪০-৫০ বছর বয়সের ব্যক্তিও কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য কিংবা নিয়ন্ত্রক। বিচিত্র নাম এসব গ্রুপের। ‘পাটালি গ্রুপ’, ‘লেভেল হাই’, ‘দে ধাক্কা’, ‘ডায়মন্ড’, ‘লও ঠ্যালা গ্রুপ’, ‘ল্যাংড়া নুরু’, ‘পটেটো রুবেল’, ‘কিং শাওন’সহ নানা নামে গ্রুপ রয়েছে। এসব গ্যাং অস্ত্র-মাদক কারবার, ছিনতাই-চাঁদাবাজি, অপহরণ, ডাকাতি, ভূমি দখলসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত। মোহাম্মদপুর, মিরপুর ও সাভারে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এ রকম ১০টির বেশি সন্ত্রাসী চক্র।
গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর, আদাবর, হাজারীবাগ, মিরপুর ও দারুস সালাম এবং সাভার এলাকা থেকে বিভিন্ন কিশোর গ্যাংয়ের ৫৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তাদের বয়স ২০ থেকে ৪৮ বছরের মধ্যে। র্যাব-২ গ্রেপ্তার করে ৩৬ জনকে ও র্যাব-৪ ধরে ২১ জনকে। গ্রেপ্তারকৃতদের কেউ গাড়িচালক কিংবা হেলপার, কেউ দোকান কর্মচারী, কেউবা নির্মাণ শ্রমিক। আবার কেউ পুরোনো মালপত্র ক্রেতা বা সবজি বিক্রেতা। এসব পেশার আড়ালে তারা ছিনতাইসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাত বলে জানিয়েছে র্যাব।
র্যাব বলছে, এসব গ্রুপ দলবদ্ধভাবে মোটরসাইকেলের মহড়া দিয়ে এলাকায় ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে। তারা রিকশা, ভ্যান, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও বাসযাত্রীদের টার্গেট করে ছিনতাই করে। হরহামেশা কাউকে গুলি করতেও দ্বিধা করে না তারা। প্রশাসনের লোক পরিচয় দিয়ে তারা সাধারণ পথচারীদের মাদকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ও করে।
র্যাবের তথ্যমতে, সম্প্রতি মোহাম্মদপুর এলাকায় বেশ কয়েকটি ‘কিশোর গ্যাং’ তাণ্ডব চালায়। প্রকাশ্যে সশস্ত্র মহড়া দিয়ে ছিনতাই ও চাঁদাবাজি করে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় বছিলা গার্ডেন সিটি এলাকায় একই কায়দায় দলবদ্ধ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ওই সময় ছিনতাইকারীরা পথচারীসহ রাস্তার পাশের অন্তত ২০টি দোকানের মালপত্র লুট ও ভাঙচুর চালায়। গত ১৯ ডিসেম্বর মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় সশস্ত্র দলবদ্ধ ছিনতাই হয়। বেড়িবাঁধ থেকে চাঁদ উদ্যান হাউজিং এলাকার প্রধান সড়কের প্রায় দেড় কিলোমিটারজুড়ে ছিনতাই করে তারা। তাদের হামলায় অন্তত ১০ জন আহত হন।
র্যাব-২ জানিয়েছে, ‘পাটালি গ্রুপ’, ‘লেভেল হাই’, ‘চান গ্রুপ’, ‘মাহি গ্রুপ’, ‘মাউরা ইমরান গ্রুপ’সহ বিভিন্ন গ্রুপের ৩৬ জনকে শুক্রবার মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে পাটালি গ্রুপের অন্যতম হোতা সুজন মিয়া ওরফে ফর্মা সজীব, লেভেল হাইর অন্যতম হোতা শরিফ ওরফে মোহন এবং মাউরা ইমরান গ্রুপের হোতা ইমরান ওরফে মাউরা ইমরান রয়েছে।
গ্রেপ্তার অপর ৩৩ জন হলো– রানা শিকদার, জুয়েল মিয়া, রাকিব ওরফে মুরগি রাকিব, সাগর, মারুফ, আল আমিন, সাকিব ওরফে প্রকাশ রিয়াম, জুয়েল, বিপ্লব রাজবংশী, মেঘদাত ওরফে মেঘ, সকাল আহমেদ, শরীফুল ইসলাম, হৃদয় ইসলাম, ইয়াসিন, রাব্বি মিয়াম, দুলাল ওরফে ডিশ দুলাল, সোহাগ, তারেক, হাসান, হৃদয়, রাকিব, নিশান, রাসেল, রাকিব, শাহাদাত হোসেন, সোহাগ ফরাজি, সুজন ইসলাম, রবিউল, আজগর, নাহিদ, সুজন ইসলাম, সোহান ও ফরহাদ। তাদের মধ্যে পাঁচজন পাটালি গ্রুপ, ছয়জন লেভেল হাই, ছয়জন চান গ্রুপ, পাঁচজন লও ঠ্যালা গ্রুপ এবং সাতজন মাউরা ইমরান গ্রুপের। বাকি সাতজন অন্য গ্রুপের সদস্য।
র্যাব বলছে, প্রতি গ্রুপে ২০ থেকে ২৫ সদস্য থাকে। পাটালি গ্রুপটি সুজন মিয়ার নেতৃত্বে দীর্ঘদিন পরিচালিত হয়ে আসছে। লেভেল হাই গ্রুপের নিয়ন্ত্রক শরিফের নেতৃত্বে সদস্যরা মোহাম্মদপুর, আদাবর, বেড়িবাঁধ ও ঢাকা উদ্যান এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালায়। পাটালি গ্রুপের হোতা সুজন মিয়ার নেতৃত্বে চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও মাদক কারবার হয়।
লেভেল হাই গ্রুপের নিয়ন্ত্রক শরিফ ওরফে মোহনের প্রধান সহযোগী হায়াত ওরফে টাকলা হায়াত। সে মোহাম্মদপুর এলাকায় মাদক কারবার, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতি ও অপহরণের সঙ্গে জড়িত। চান গ্রুপের অন্যতম সদস্য সাকিব ওরফে প্রকাশ রিয়াম ২০১৮ সালে বরিশাল থেকে ঢাকায় এসে অপরাধে জড়ায়। ইমরান ওরফে মাউরা ইমরান ২০২১ সালে নিজের নামেই গ্রুপ তৈরি করে।
র্যাব-৪ জানিয়েছে, তারা মিরপুর, দারুস সালাম এবং সাভার থেকে ল্যাংড়া নুরু, পটেটো রুবেল ও কিং শাওন গ্রুপের ২১ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা হলো– শাহ আলম ওরফে ল্যাংড়া নুরু, জাহিদুল ইসলাম রানা, আল আমিন, ফারুক প্রামাণিক, সোলাইমান, লালন রানা, ইমন ওরফে ফ্লাশ ইমন, উমর ফারুক, ইয়ামিন, শাওন খান, সোহান বেপারি, শাওন, নুর ইসলাম, আলামিন, আবদুল মান্নান, আজিম, পিয়াস হোসেন, রাকিবুল ইসলাম, সজীব হোসেন ও আলামিন।