জিগাতলা থেকে মতিঝিলের ভাড়া ১৬ টাকা হলেও আদায় করা হতো ২০ টাকা। একই স্থান থেকে বাসাবোর ভাড়া ২২ টাকা। তবে নেওয়া হতো ৩০ টাকা। ই-টিকিট চালুতে ভাড়া কমেছে। টিকিটের গায়ে টাকার অঙ্ক লেখা থাকায় যাত্রীর কাছ থেকে নির্ধারিত ভাড়াই নিতে হচ্ছে।

আজ মঙ্গলবার থেকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, গাবতলী ও আজিমপুর থেকে চলা ১৫ কোম্পানির বাসে চালু হয়েছে ই-টিকিট। সরেজমিন ঘুরে ভাড়া কমার তথ্য মিলেছে।

সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির ঘোষণা ছিল, মঙ্গলবার থেকে ১৫টি কোম্পানির ৭১১ বাসে ই-টিকিট চালু হবে। কিন্তু সরেজমিনে দেখা যায়, অধিকাংশ বাসে টিকিটিং মেশিন নেই। এর আগে গত ১৩ নভেম্বর মিরপুর অঞ্চলের ৩০টি কোম্পানির বাসে চালুর মাধ্যমে রাজধানীতে ই-টিকিটের যাত্রা শুরু হয়।

জিগাতলা মোড়ে মিডলাইন পরিবহনের লাইনম্যান মো. নাসির জানান, মোহাম্মদপুর থেকে এই পরিবহনের ৪২টি বাস চলে। মঙ্গলবার পর্যন্ত ছয়টি বাসে পজ মেশিন দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ১৩ নভেম্বর মিরপুর এলাকার ৩০টি কোম্পানির ১ হাজার ৬৪৩টি বাসে ই-টিকিটে ভাড়া আদায় করার কথা থাকলে তা হয়নি। সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ জানিয়েছেন, ৭০-৭৫ শতাংশ বাসে ই-টিকিট কার্যকর হয়েছে। আর হাতে ভাড়া তোলা যাবে না। যেসব বাস বাড়তি নেবে, সেগুলোর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান বলেছেন, প্রথম দিনে সব বাস মেশিন পায়নি। তবে মোহাম্মদপুর, গাবতলী ও আজিমপুর- সব বাসে দু-একদিনের মধ্যে মেশিন পৌঁছে যাবে।

মিরপুরের মতো মোহাম্মদপুর এলাকার বাসের কন্ডাক্টররাও ই-টিকিটে খুশি নন। মোহাম্মদপুর-ধূপখোলা রুটের মালঞ্চ পরিবহনের বাসের (ঢাকা মেট্রো-১৫৭৩৯৪) হেলপার মো. রুবেল জানালেন, কাঁধে মেশিন নিয়ে বারবার বাসে ওঠানামা পরিশ্রমের। মেশিন চালানোও সমস্যা। ভাড়া তুলতে বাড়তি শ্রম ও সময় যাচ্ছে। কিন্তু মজুরি বাড়েনি।

মেশিন মাঝেমধ্যে কাজ করে না, টিকিট প্রিন্টে সময় লাগে বলে অভিযোগ শ্রমিকদের। তবে ই-টিকিটং সেবা দেওয়া যাত্রী সার্ভিসেস লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট গোলাম ইসফাক সমকালকে বলেছেন, মেশিনে কোনো সমস্যা নেই। শ্রমিকদের আয়ত্তে আসতে কয়েক দিন সময় লাগতে পারে।

মোহাম্মদপুর থেকে ফার্মগেটের ভাড়া ১০ টাকা। এক হেলপার জানালেন, মেশিনে সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা। কিন্তু শিক্ষার্থীরা পাঁচ টাকার বেশি দিতে নারাজ। মেশিনে শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক ভাড়ার সুযোগ আছে। এর জন্য ১০ টাকার বেশি দূরত্বে যেতে হবে। এ নিয়ে সকাল থেকে বচসা লেগে আছে। তাঁর অভিযোগ, অনেক যাত্রী ভাড়া দিতে ই-টিকিট নিতে চান না। এ নিয়েও ঝগড়া হচ্ছে।

মোহাম্মদপুরের বাসের শ্রমিকরা দৈনিক ৪০০ ও চালকরা ৬০০ টাকা মজুরি পান। বিভিন্ন পরিবহনের লাইনম্যানরা বলেন, চালক বা শ্রমিকরা মাসে ২০-২২ দিনের বেশি কাজ পান না। তাঁদের মাসিক মজুরি ৮ থেকে ১২ হাজার টাকা। এতে ঢাকা শহরে সংসার চলে না। শ্রমিকরা দিনে ৪০০-৫০০ টাকা 'উপরি আয়' করতেন। এর হিসাব তাঁরা মালিককে দিতেন না। ই-টিকিট চালুতে মালিকদের আয় বাড়লেও শ্রমিকের উপরি বন্ধ হয়ে গেছে। মজুরি না বাড়ালে তাঁরা পেশায় টিকতে পারবেন না; থাকতে পারবেন না।

তরঙ্গ প্লাস পরিবহনের বাসে (ঢাকা মেট্রো-ব-১৩-১১৬৯) উঠলে যাত্রী কামরুল হক জানান, ভাড়া আগের চেয়ে দুই-চার টাকা কমলেও কিছু সমস্যা রয়েই গেছে। ভাড়া দিতে আগের চেয়ে বেশি সময় লাগছে। আবার টিকিটের গায়ে দূরত্ব লেখা নেই। এক কাউন্টার থেকে আরেক কাউন্টারের নাম লেখা। তাই বুঝতে পারছেন না, আসলেই সঠিক ভাড়া নেওয়া হচ্ছে কিনা! খন্দকার এনায়েত জানিয়েছেন, সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের কাছে এক বাসস্ট্যান্ড থেকে আরেকটির দূরত্বের তালিকা চাওয়া হয়েছে। পেলে টিকিটে দূরত্বও উল্লেখ থাকবে।

ডিজেলের দাম দুই দফা বৃদ্ধিতে বাসের ভাড়া বেড়ে এখন কিলোমিটারে ২ টাকা ৪৫ পয়সা। সর্বনিম্ন ১০ টাকা। কিন্তু অধিকাংশ বাসে তা মানা হতো না। হাজারো মামলা ও জরিমানাতেও পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছিল না। বাড়তি ভাড়ার জন্য দায়ী করা হতো ওয়েবিল পদ্ধতিকে। এ পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট দূরত্বে 'চেকার' রাখেন মালিকরা। যাত্রী যেখানেই নামুক, অনুমোদিত স্টপেজ নয়, চেকিংয়ের স্থান হিসেবে ভাড়া আদায় করা হতো। এতে অল্প পথে বেশি ভাড়া দিতে হতো যাত্রীকে। সমালোচনার মুখে ওয়েবিল বন্ধ করে মালিক সমিতি। চেকিং উঠে যাওয়ায় চালক-শ্রমিকদের কাছ থেকে যাত্রীর সঠিক হিসাব না পাওয়ায় মালিকের আয় কমে যায়। চুরি ঠেকাতে ই-টিকিট চালু করে মালিক সমিতি।