ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসি, অপরাজেয় বাংলা, কার্জন হল, কলাভবনে আছে তাঁদের কত শত স্মৃতি! কিন্তু এখন সবাই প্রাক্তন। মাঝেমধ্যে মায়ার টানে কেউ ক্যাম্পাসে এলে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন। তবে মেলে না সহপাঠীর সাহচর্য। শুক্রবার সহপাঠী ও সতীর্থদের সঙ্গে পুনরায় সাক্ষাৎ হওয়ায় মাতলেন আনন্দ-উল্লাসে। এ যেন সুখ-দুঃখের মিলনমেলা। খুলে বসা গল্পের ঝাঁপি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দর্শন বিভাগ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের ১৩তম পুনর্মিলনীতে এমন দৃশ্যের অবতারণা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) দিনব্যাপী নানা আয়োজনে হয় এ পুনর্মিলনী।

সকাল ৯টার আগেই টিএসসি চত্বরে জড়ো হতে থাকেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। ফটোসেশন, কোলাকুলি, পরস্পর আলাপের পর ১০টায় অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি অ্যালামনাইদের অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের সহায়তায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। উপাচার্য বলেন, আর্থিক প্রতিকূলতার কারণে কোনো শিক্ষার্থীর পড়াশোনা যেন ব্যাহত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রাক্তনদের নিজ নিজ বিভাগের শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়াতে হবে। অ্যালামনাইদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা ও পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ. কে. আজাদ। তিনি বলেন, অনেক আগেই আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে বের হয়েছি। নামমাত্র খরচে এত বড় ডিগ্রি পেয়েছি। এ প্রতিষ্ঠানের প্রতি আমাদের দায়িত্ব আছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখনও ঢাবির ধারেকাছে আসতে পারেনি। এর পরও সেসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা অনেক ব্যয়বহুল। এত ব্যয়বহুল হলে আমার বাবা আমাদের পড়াতে পারতেন না। যে বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে সম্মানিত এবং সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়তা করেছে, সেই প্রতিষ্ঠানের প্রতি আমাদের অবশ্যই কর্তব্য আছে; অবদান রাখতে হবে।


অ্যালামনাইদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সব প্রাক্তন শিক্ষার্থীর তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে। তাঁরা যেখানেই থাকুন না কেন; কমিটি তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে। পুনর্মিলনীতে আপনারা বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কী অবদান রেখেছেন, তা দেখান। এতে শিক্ষার্থীরাও আকৃষ্ট হবে। ঢাবি অ্যালামনাইয়ের বৃত্তির বেশিরভাগ দাতা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের। তাই অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকর্মীদের আহ্বান করলে তাঁরাও অবদান রাখবেন।
ঢাবি দর্শন বিভাগ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুলতানা মুনিরা জাহানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূইয়া, ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ ও মহাসচিব মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাউসার। উপস্থিত ছিলেন প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী ও দর্শন বিভাগ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজা চৌধুরী বাবলী।
এদিকে একই দিন ঢাবির পরিসংখ্যান বিভাগ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সপ্তম পুনর্মিলনী কাজী মোতাহার হোসেন ভবন প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রধান অতিথি হিসেবে উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান দিনব্যাপী এ পুনর্মিলনীরও উদ্বোধন করেন।
অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুব জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সৈয়দ শাহাদাত হোসেন, পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক সায়েমা শারমিন, অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক লুৎফর রহমান ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. জাহিদা গুলশান। দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে ছিল স্মৃতিচারণ, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।