- রাজধানী
- ঘুরতে ঘুরতে লক্ষ্য ঠিক করেন ৮ বন্ধু, চুরি করেন ২-৩ মিনিটে
ঘুরতে ঘুরতে লক্ষ্য ঠিক করেন ৮ বন্ধু, চুরি করেন ২-৩ মিনিটে

চুরির ঘটনায় গ্রেপ্তার দুইজন (মাঝে)
রাজধানীর পল্লবীতে ২২ জানুয়ারি দিন-দুপুরে একটি ফ্ল্যাটে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটে। ৬ নম্বর সেকশনের ২ নম্বর রোডের ১৭ নম্বর বাড়ির তৃতীয় তলার ফ্ল্যাট থেকে ১৮ লাখ টাকা ও ১৭ ভরি গহনা লুট হয়। ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে ৮ বন্ধুর একটি চোরের দলের তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ আল মামুন ও মোহাম্মদ আলী নামে দু'জনকে শনিবার নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। আর রনি নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পল্লবী থানা পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশিদ বলেন, পল্লবীর ঘটনায় কারা কীভাবে জড়িত ছিলেন সব বের করা গেছে। সব আসামিদের গ্রেপ্তার করা হলে দেশের বিভিন্ন এলাকার আরও কয়েকটি মামলার রহস্য উদ্ঘাটন করা সম্ভব হবে।
ডিবির মিরপুর বিভাগের ডিসি মানস কুমার পোদ্দার সমকালকে জানান, তথ্য-প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড়া থেকে মামুন ও আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। আসামিদের কাছ থেকে ওই বাসা থেকে চুরি করে নেওয়া একটি মোবাইল ফোন সেট ও সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। একই চক্রের আরও ২-৩ জনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
গ্রেপ্তার অপারেশনে সরাসরি অংশ নেওয়া ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদ হাসান জানান, এই চক্রটি দিনে-রাতে চুরি করতে পারদর্শী। ঘুরতে ঘুরতে তারা লক্ষ্য ঠিক করেন। কোনো বাসার গেট খোলা দেখলে দু'জন ওপরে ওঠেন। দ্রুত একজন বাসায় গেটের তালা ভেঙে ভেতরে যান। আরেকজন পাশের ফ্ল্যাট বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে রাখেন। কেউ শব্দ পেলেও যাতে বের হতে না পারেন সেই কারণে এই কৌশল নেন। আরেকজন বাসার নিচে অবস্থান করেন। কেউ ওপরে উঠলে ফোনে খবর দেন। ২-৩ মিনিটের মধ্যে তারা মিশন সম্পন্ন করতে পারেন।
ডিবি জানায়, নোয়াখালী, গাজীপুর ও ঢাকায় মামুনের বিরুদ্ধে আরও তিনটি চুরির মামলা পাওয়া গেছে। কারাগার থেকে দুই মাস আগে বের হয়ে আবার চুরি করা শুরু করেন তিনি। মামুন পেশায় নাপিত। আর আলী রেন্ট- এ কারের চালক। তার বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা রয়েছে। কোনো অপারেশনে বের হওয়ার আগেই কে কোন দায়িত্ব পালন করবেন তা ঠিক করা থাকে। ঘুরে ঘুরে রাজধানীসহ সারা দেশে তারা চুরি করেন। কোনো এলাকা ঠিক হওয়ার পর সব গ্রুপের সদস্যরা একত্রিত হন।
ডিবির কর্মকর্তারা জানান, সর্বশেষ পল্লবীর ওই বাসা চুরি হওয়া স্বর্ণালঙ্কার এখনও উদ্ধার করা যায়নি। তবে স্বর্ণালঙ্কার অল্প সময়ের মধ্যে উদ্ধারের ব্যাপারে তারা আশাবাদী।
পল্লবী বিভাগের সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল হালিম বলেন, রনি নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে দুই দিনের হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে তাকে দেখা গিয়েছিল। চুরির মালপত্র তার এক 'গুরুর' কাছে রয়েছে বলে দাবি করছেন তিনি।
গৃহকর্ত্রী হোসনা আক্তার সমকালকে জানান, ২০০৮ সাল থেকে ওই বাসায় ভাড়া থাকেন তারা। দুই ছেলে ও স্বামীকে নিয়ে তার সংসার। ছোট ছেলে হাসিন ইশরাক জিসান ও স্বামী আবদুর রশিদ ভুঁইয়াকে নিয়ে কয়েক দিন কুমিল্লার গ্রামের বাড়ি যান হোসনা। আর বড় ছেলে হাসনাত রহমান হিমেল শনিবার রাতে রাঙামাটির গিয়েছেন। এরপর থেকে বাসা ফাঁকা ছিল। ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট কেনার চিন্তাভাবনা করছিলেন। সম্প্রতি গ্রামের বাড়ি থেকে জমি বিক্রির ১০ লাখ টাকা ঢাকায় বাসায় ছিল। আর ব্যাংক থেকে ৫ লাখ টাকা তুলেছিলেন। সব মিলিয়ে বাসায় নগদ ১৮ লাখ টাকা রাখা ছিল। আর স্বর্ণালঙ্কার হবে ১৭-১৮ ভরি। স্বণালঙ্কার ও টাকা উদ্ধার করতে না হওয়া পর্যন্ত দুঃশ্চিন্তায় আছেন তারা।
মন্তব্য করুন