রাজধানীর পল্লবীতে গত ২২ জানুয়ারি দিনদুপুরে একটি ফ্ল্যাটে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটে। ফ্ল্যাট থেকে ১৮ লাখ টাকা ও ১৭ ভরি স্বর্ণ লুট হয়। ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে ৮ বন্ধুর একটি চোরের দলের তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ঘুরতে ঘুরতে তারা টার্গেট ঠিক করে।
এর পর ২-৩ মিনিটের মধ্যে চুরির মিশন সম্পন্ন করে ফেলে।

এ চক্রের আব্দুল্লাহ আল মামুন ও মোহাম্মদ আলী নামে দু'জনকে গতকাল নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। আর রনি নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পল্লবী থানা পুলিশ।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশিদ বলেন, পল্লবীর ঘটনায় কারা, কীভাবে জড়িত ছিল সব বের করা গেছে। সব আসামিকে গ্রেপ্তার করা হলে দেশের বিভিন্ন এলাকার আরও কয়েকটি মামলার রহস্য উদ্ঘাটন করা সম্ভব হবে।

ডিবির মিরপুর বিভাগের ডিসি মানস কুমার পোদ্দার সমকালকে জানান, তথ্য-প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড়া থেকে মামুন ও আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। আসামিদের কাছ থেকে পল্লবীর ৬ নম্বর সেকশনের ২ নম্বর রোডের ১৭ নম্বর বাড়ির তৃতীয় তলার বাসা থেকে চুরি করে নেওয়া একটি মোবাইল ফোনসেট ও সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। একই চক্রের আরও ২-৩ জনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

গ্রেপ্তার অভিযানে অংশ নেওয়া ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদ হাসান জানান, এ চক্রটি দিনে-রাতে চুরি করতে পারদর্শী। কোনো বাসার গেট খোলা দেখলে দু'জন ওপরে ওঠে। দ্রুত একজন বাসায় গেটের তালা ভেঙে ভেতরে যায়। আরেকজন পাশের ফ্ল্যাট বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে রাখে। কেউ শব্দ পেলেও যাতে বের হতে না পারেন, সে জন্য এই কৌশল। আরেকজন বাসার নিচে অবস্থান করে। কেউ ওপরে উঠলে ফোনে খবর দেয়। পরে চুরি করে।

ডিবি জানায়, নোয়াখালী, গাজীপুর ও ঢাকায় মামুনের বিরুদ্ধে আরও তিনটি চুরির মামলা পাওয়া গেছে। কারাগার থেকে দুই মাস আগে বের হয়ে আবার চুরি করা শুরু করে সে। মামুন পেশায় নাপিত। আর আলী রেন্ট-এ কারের চালক। তার বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা রয়েছে। চুরির জন্য বের হওয়ার আগেই কে, কোন দায়িত্ব পালন করবে, তা ঠিক করা থাকে। ঘুরে ঘুরে রাজধানীসহ সারাদেশে তারা চুরি করে। কোনো এলাকা ঠিক হওয়ার পর গ্রুপের সব সদস্য একত্র হয়।

ডিবির কর্মকর্তারা জানান, সর্বশেষ পল্লবীর ওই বাসা চুরি হওয়া স্বর্ণালংকার এখনও উদ্ধার করা যায়নি। তবে অল্প সময়ের মধ্যে উদ্ধারের ব্যাপারে তাঁরা আশাবাদী। পল্লবী বিভাগের সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল হালিম বলেন, রনিকে গ্রেপ্তার করে দু'দিনের হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে তাকে দেখা গিয়েছিল। চুরির মালপত্র তার এক 'গুরুর' কাছে রয়েছে বলে দাবি করছে সে।

পল্লবীর ওই বাসার গৃহকর্ত্রী হোসনা আক্তার সমকালকে জানান, ২০০৮ সাল থেকে ওই বাসায় ভাড়া থাকেন তাঁরা। দুই ছেলে ও স্বামীকে নিয়ে তাঁর সংসার। কয়েক দিনের জন্য বেড়াতে যান তাঁরা। বাসা ফাঁকা ছিল। ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট কেনার চিন্তাভাবনা করছিলেন। সম্প্রতি গ্রামের বাড়ি থেকে জমি বিক্রি করে আনা ১০ লাখ টাকা বাসায় ছিল। আর ব্যাংক থেকে ৫ লাখ টাকা তুলেছিলেন। সব মিলিয়ে বাসায় নগদ ১৮ লাখ টাকা রাখা ছিল। আর স্বর্ণালংকার হবে ১৭-১৮ ভরি। এসব উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের দুশ্চিন্তা কাটবে না।