সংস্কার চলছে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের, আর তাতেই যেন দেশের 'হোম অব ফুটবল' হয়ে উঠেছে কমলাপুর স্টেডিয়াম। কিন্তু অতিমাত্রায় ম্যাচ আয়োজন আর সকাল-বিকেল সব দলের অনুশীলনে যেন হাফিয়ে উঠেছে স্টেডিয়ামটির প্রায় আট বছরের পুরোনো আর্টিফিসিয়াল টার্ফ ! এই মাঠে খেলেই ভুটান-নেপালের চার নারী ফুটবলার হাসপাতালে। আয়োজকদের লজ্জা দিয়ে দুই দলের কোচই অভিযোগ করেছেন, যে অভিযোগ কয়েক বছর ধরে করে আসছেন দেশি ফুটবলাররাও। 

কমলাপুর তাঁদের কাছে 'চোটের ফাঁদ' হলেও পাড়া-মহল্লার ছেলেদের জন্য অবশ্য সান্ধ্য আড্ডার আকর্ষণীয় ভেন্যু! আসলে এই মাঠ দেখভাল করার কোনো অভিভাবকই যে নেই। বাফুফের অনেক স্ট্যান্ডিং কমিটি থাকলেও মাঠ দেখভালের জন্য গ্রাউন্ডস কমিটিই যে নেই। তাই প্রিমিয়ার লিগ, নারী ফুটবলসহ যখন যে প্রতিযোগিতা চলে, তখন সেই সংশ্নিষ্ট কমিটি মাঠের বিষয়টি দেখে।

অফিসিয়াল ম্যাচ শেষে কিংবা ছুটির দিনে কমলাপুর স্টেডিয়ামটা চলে যায় পাড়া-মহল্লার ছেলেদের দখলে। ঈদুল আজহার সময়ে এই মাঠে বসে 'গরুর হাট'। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিচর্যার অভাবে বসানোর কয়েক বছরের মধ্যেই খেলার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে কমলাপুরের টার্ফ। চতুর্থ মেয়াদে বাফুফে সভাপতি হওয়ার পর কাজী সালাউদ্দিন অনেক স্ট্যান্ডিং কমিটি করলেও গ্রাউন্ডস কমিটি করেননি; যা নিয়ে আছে নানা প্রশ্ন। তবে মানহীন কমলাপুরের টার্ফ নতুন করে আলোচনায় এসেছে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে।

২০১৫ সালের ডিসেম্বর থেকে কমলাপুর টার্ফে সব ধরনের ফুটবল প্রতিযোগিতা হয়ে আসছে। উদ্বোধনের পর থেকে পেশাদার লিগ, মেয়েদের লিগ, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তর লিগসহ আন্তর্জাতিক অনেক টুর্নামেন্টই হয়ে আসছে কমলাপুরে। অথচ ঢাকার বাইরে ভেন্যু থাকলেও 'আর্থিক সংকটের' কথা তুলে ধরে মেয়েদের আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টগুলো কমলাপুরে আয়োজন করছে ফেডারেশন। যখন একটি মাঠ নিয়ে বিদেশি দল আপত্তি তুলে, তখন এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে দেশের সম্মানও।

সাধারণত একটি টার্ফ যেখানে দুই ঘণ্টার বেশি ব্যবহার করা যায় না, সেখানে কোনো দিন চার-পাঁচটি ম্যাচ পর্যন্ত হচ্ছে। আর ৮-১০ বছর পর্যন্ত স্থায়ী থাকে টার্ফের শক্তি। কিন্তু অতি ব্যবহারে অনেক আগেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অথচ ২০১৬ সালে একবার কমলাপুর টার্ফ পরিদর্শনে গিয়ে বিস্মিত হয়েছিলেন ফিফার প্রতিনিধিরা। তখন সংস্কারের কথাও উঠেছিল, কিন্তু বাফুফে কর্তাদের মাঠ নিয়ে উদাসীনতায় এবড়ো-থেবড়ো হয়ে পড়েছে কমলাপুরের টার্ফ। পর্যবেক্ষক নেই বলে আরও বেহাল দশা।

অথচ কাজী সালাউদ্দিনের আগের তিন মেয়াদে ছিল গ্রাউন্ডস কমিটি। কিন্তু দায়িত্ব দেওয়ার মতো উপযুক্ত ব্যক্তি খুঁজে পাননি বলে বাফুফে কর্তারা এই কমিটি করার কোনো চেষ্টায়ই করেননি! মাঠের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও তাঁদের অবহেলায় বিস্মিত ফুটবলবোদ্ধারা। আর কমলাপুরে টার্ফ বসানোর সময় গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন ফজলুর রহমান বাবুল। মানহীন টার্ফ বসানোর দায়টা তাঁরও।

যদিও বাবুল দায় চাপিয়েছেন ফেডারেশনের কর্মকর্তাদের ওপর, 'আমার অজান্তে, আমার পরামর্শ ছাড়া তাঁরা নিজেরাই টার্ফ বসিয়েছেন। নিম্নমানের সরঞ্জাম দিয়ে আর্টিফিসিয়াল টার্ফ স্থাপন করা হয়েছিল। এর পর আমি নিজ উদ্যোগে অনেক কিছু করেছি। এটা দুঃখজনক, টার্ফটা ভালো মানের হয়নি। সেই সময় যদি ভালোমানের সরঞ্জাম দিয়ে টার্ফ বসানো হতো, তাহলে আজকে বিদেশি দলের কোচরা সমালোচনা করতেন না।' টার্ফ নিয়ে বিদেশি দলগুলোর অভিযোগের পর সংস্কার করার আশ্বাস বাফুফে নারী ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণের, 'আমাদের তো আর বিকল্প মাঠ নেই। তাই করার কিছু নেই। আমি বাফুফে সভাপতির সঙ্গে কথা বলব, যাতে করে দ্রুতই কমলাপুরের টার্ফ সংস্কার করার উদ্যোগ নেয়।'

বছরের পর বছর যায়, সংস্কারের কথা মুখে বললেও তা বাস্তবায়নে নেই বাফুফে কর্তাদের উদ্যোগ।