‘ওমেন অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ ফেস্টিভ্যাল (ওয়াও ফেস্টিভ্যাল) বাংলাদেশে তাদের পরবর্তী আয়োজনের তারিখ ঘোষণা দিয়েছে। আগামী ২৪-২৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মূল মাঠ ও চিত্রশালা ভবনে অনুষ্ঠিত হবে দুই দিনব্যাপী এই উৎসব। নারীভিত্তিক উৎসবটির আয়োজক হিসেবে ইউকে চ্যারিটি-ওয়াও ফাউন্ডেশনের সঙ্গে অংশীদারত্বে থাকছে ব্রিটিশ কাউন্সিল, মঙ্গলদীপ ফাউন্ডেশন এবং সিসিডি বাংলাদেশ।

সোমবার ব্রিটিশ কাউন্সিলে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ব্রিটিশ কাউন্সিলের কালচারাল এনগেজমেন্ট প্রোগ্রাম ম্যানেজার ইফরা ইকবাল, মঙ্গলদীপ ফাউন্ডেশনের ফাউন্ডিং চেয়ারপারসন সারা যাকের, সিসিডি বাংলাদেশের জয়েন্ট-ডিরেক্টর শাহানা পারভীন, ক্রিয়েটিভ পাথওয়েজ বাংলাদেশের ম্যানেজিং ডিরেক্টর জাকিয়া হক এবং জনপ্রিয় রক ব্যান্ড চিরকুটের কণ্ঠশিল্পী শারমিন সুলতানা সুমি প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, উৎসবের উদ্বোধন করবেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম ও সিলেটের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি কমলা কালেকটিভ (ইউকে); কোটেক বাংলাদেশ; প্রাচ্যনাট; বহ্নিশিখা-আনলার্ন জেন্ডার; স্বয়ং; ক্রিয়েটিভ পাথওয়েজ বাংলাদেশ; আসিফুজ্জামান খান এবং ফৌজিয়া মাহিন চৌধুরী পারফর্ম করবেন। বর্ণবাদের প্রভাব, নারীবাদ নিয়ে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ধারণা ও উপলব্ধি ইত্যাদি বিষয়ে প্যানেল আলোচনা হবে। আলোচনায় প্যানেলিস্ট হিসেবে থাকবেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন; জনপ্রিয় অ্যাক্টিভিস্ট শিরিন হক প্রমুখ। আয়োজনে লিঙ্গ সমতার বিষয়ে শিশুদের আলোকিত করা, নারী ক্ষমতায়নের উদ্ভাবনী পন্থা খুঁজে বের করা, বিভিন্ন সম্প্রদায়কে নারী অধিকার সম্পর্কে বোঝাতে অংশগ্রহণমূলক মজাদার কর্মসূচি পরিচালনা করা হবে। অংশগ্রহণকারীরা বিশেষজ্ঞদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানার ও পরামর্শ গ্রহণের সুযোগ পাবেন।

উৎসবটি লিঙ্গ বৈষম্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে এবং স্থানীয় নারী উদ্যোক্তাদের সমর্থনে একটি বিশেষ মার্কেটপ্লেসের যাত্রা শুরু করবে। এ ছাড়া, উত্সবে দর্শকরা প্রদর্শনী, সংগীত পরিবেশনা, চলচ্চিত্র প্রদর্শন, পারফরম্যান্স আর্ট এবং সুদীপ চক্রবর্তী পরিচালিত একটি প্রতিবন্ধী আর্ট থিয়েটার নাটিকা ‘স্বর্ণবোয়াল’ উপভোগ করবেন। ওই নাটিকায় কিংবদন্তি অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর অভিনয় করবেন। মূল আকর্ষণ হিসেবে দেশের জনপ্রিয় রক ব্যান্ড ‘চিরকুট’-এর কনসার্টের মধ্য দিয়ে ‘ওয়াও বাংলাদেশ ২০২৩’ সমাপ্ত হবে।

সংবাদ সম্মেলনে ব্রিটিশ কাউন্সিলের কালচারাল এনগেজমেন্ট প্রোগ্রাম ম্যানেজার ইফরা ইকবাল বলেন, ওমেন অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের আর্টস পোর্টফোলিওর অধীনস্থ নারীদের সমর্থন করে আমাদের কাজকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে। লিঙ্গ সমতা অর্জন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, উন্মুক্ত এবং সমৃদ্ধ সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

মঙ্গলদীপ ফাউন্ডেশনের ফাউন্ডিং চেয়ারপারসন সারা যাকের বলেন, ওয়াও ফেস্টিভ্যাল একটি সাংস্কৃতিক মিলনমেলা। এটি বিশ্বজুড়ে নারীদের জন্য নানা সুযোগ সুবিধা তৈরি এবং নারীদের সম্ভাবনা অর্জনে তাদের আরও দক্ষ ও আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।

ওয়াও ফাউন্ডেশনের ফাউন্ডার ও সিইও জুড কেলি বলেন, ফেস্টিভ্যাল, ইভেন্ট, প্রোগ্রামসহ আরও অনেক আয়োজনের মধ্য দিয়ে ওয়াও ফাউন্ডেশন বিশ্বব্যাপী একটি ধারণাকেই প্রতিষ্ঠিত করতে চায় যে-লিঙ্গ সমতা ইতোমধ্যেই অর্জিত হয়েছে এবং এই ধারণাকে পুঁজি করে সাধারণ মানুষ নিজ নিজ অবস্থান থেকে বিশ্ব পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ করে যাবে বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।

‘ওমেন অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ ফ্যাস্টিভ্যালের প্রতিষ্ঠাতা জুড কেলি। এটি একটি বৈশ্বিক উৎসব, যা নারী এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের কৃতিত্ব ও অর্জনসমূহ তুলে ধরে এবং বিশ্বব্যাপী সমাজে যেসব বাধা বা সমস্যা সৃষ্টি হয় সেদিকে বিশেষ নজর প্রদান করে। এই বছর ‘ওয়াও বাংলাদেশ ২০২৩’ এ নারীদের সাহসিকতা এবং স্থিতিস্থাপকতা ও শক্তি, কর্মক্ষমতা, কর্মকাণ্ড, সংগীতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনুপ্রাণিত করার মাধ্যমে নারীদের অর্জনগুলো তুলে ধরা হবে। এই উৎসবের লক্ষ্য হলো সমাজে বিদ্বেষ ও বৈষম্যময় পরিস্থিতিগুলো মোকাবিলা করতে মানুষকে একত্রিত করা এবং উৎসাহ-অনুপ্রেরণার মাধ্যমে বাক-স্বাধীনতাবান্ধব একটি নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তুলতে সাহায্য করা।

ওয়াও ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা জুড কেলি ২০১০ সালে এর সংস্থার যাত্রা শুরু করেন। সে সময় তিনি লন্ডনের সাউথব্যাংক সেন্টারের আর্টিস্টিক ডিরেক্টর হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। এটি সবচেয়ে বড়, জনপ্রিয় ও তাৎপর্যপূর্ণ একটি নারীভিত্তিক উৎসব, যেখানে নারীদের অর্জনগুলো উপস্থাপন এবং তাদের পাশাপাশি সংখ্যালঘু ও অবহেলিত জনগোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিতে প্রচার-প্রচারণা ও কাজ করা হয়। এ বছর ওয়াও ফেস্টিভ্যাল পাকিস্তান, গ্রিসের এথেন্স এবং যুক্তরাজ্যের লন্ডন, রদারহ্যাম ও লিডসসহ বেশ কিছু স্থানে আয়োজনের পাশাপাশি বছরজুড়ে আরও কিছু বিশেষ আয়োজনের পরিকল্পনাও রয়েছে।

ওয়াও প্ল্যাটফর্ম সর্বস্তরের নারীদের সংগ্রাম ও সাফল্যের গল্পগুলো তুলে ধরে লিঙ্গবৈষম্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এটি স্থানীয় নারীদের প্রতিনিধিত্ব প্রদানসহ একটি বৈশ্বিক উৎসব পরিচালনায় সহায়তা করে। ওয়াও ফাউন্ডেশন ২০১৭ থেকে দেশের চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর এবং সিলেটে বিভাগীয় কার্যক্রম পরিচালনা এবং ২০১৯ সাল থেকে ঢাকায় সম্পূর্ণ জাতীয় পর্যায়ে উৎসব উদযাপন শুরু করে। সাম্প্রতিক মহামারিতেও দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে নারী প্রতিনিধিদের নিয়ে ভার্চুয়াল ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর থেকে সম্মিলিতভাবে ৫০ হাজারেরও বেশি দর্শক এই উৎসবে অংশগ্রহণ করেছে।

বিষয় : ওয়াও ফেস্টিভ্যাল ওমেন অব দ্য ওয়ার্ল্ড

মন্তব্য করুন