স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে সামাজিক ও রাজনৈতিক উত্থান-পতন এবং অস্থিরতাকালীন কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ লিখেছিলেন, ‘জাতির পতাকা আজ খামচে ধরেছে সেই পুরোনো শকুন’। ঝাঁঝালো শব্দে কবিতার পঙক্তিতে প্রতিবাদের গর্জন তোলেন তরুণ কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ। তিনি এখনও তারুণ্য ও সাহসের প্রতীক।

শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় অকালপ্রয়াত এ কবির স্মরণে অনুষ্ঠিত হয় ‘তারুণ্যের দীপ্ত প্রতীক প্রয়াত কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ স্মরণে রুদ্রমেলা’। সেখানে বক্তারা এসব কথা বলেন। রুদ্র সংসদ আয়োজিত ‘প্রথমে পোড়াই চলো অন্তর্গত ভীরুতার পাপ’ শিরোনামে মেলার উদ্বোধন করা হয়। পরে আবৃত্তি, নাচ এবং গান পরিবেশন করা হয়।

উদ্বোধনী আলোচনায় রামেন্দু মজুমদার বলেন, রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ তারুণ্য ও সাহসের প্রতীক। রুদ্র প্রেমের কবিতা লেখেন; সেই সঙ্গে লেখেন বিপ্লবের কবিতা। কবিতার পঙক্তিতে অসম সাহসিকতার কথা তিনি যতটা স্পষ্ট করে বলে গেছেন, তা সমাজে বিরল।



রুদ্র সংসদের সভাপতি ও বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হদা বলেন, তারুণ্যের সৃষ্টিশীলতায় কবি রুদ্র কখনও অযৌক্তিক কিছু বলেননি। প্রতিবাদের শিল্পসম্মত কবিতার কথা যদি বলি, তবে প্রথমে রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর কথা স্মরণ করতে হবে।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ স্মৃতিচারণ করে বলেন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সূচনাকালে রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ অগ্রভাগে ছিলেন। ১৯৯১ সালের ২০ জুন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট গঠনের পরদিন রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। জোটের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে গোলাম কুদ্দুছ কবির মরদেহ বয়ে নিয়ে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি)।

কথাসাহিত্যিক ইকতিয়ার চৌধুরী ভিন্ন কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘কবিদেরও বেঁচে থাকার প্রয়োজনে নানান কিছু করতে হয়। আমি আর রুদ্র মিলে নির্মাণ ব্যবসা শুরু করেছিলাম। মোংলা বন্দরের ভিজিল্যান্স টাওয়ার নির্মাণের কাজটা আমরা পেয়েছিলাম। এক সময় আমরা ব্যবসায় পুরো পুঁজি খুইয়েছিলাম। এ হলো রুদ্রর অন্য জীবন।’

প্রিয় বন্ধুর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মোহন রায়হান বলেন, ‘স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে প্রতিটি আন্দোলন ও সংগ্রামে রুদ্র ছিল সম্মুখ সারিতে। স্বৈরতন্ত্র, আমলাতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে তিনি বুক চিতিয়ে দাঁড়াতেন। সামরিক শাসনের বুটের নিচে সংবিধান যখন ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল, তখন কবিতা লেখার মধ্য দিয়ে তিনি গর্জে করেছিলেন।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন কবির ছোট ভাই ডা. মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ। আলোচনা শেষে রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর কবিতা পাঠ করেন আবৃত্তিশিল্পী শিমুল মুস্তাফা, তামান্না সারোয়ার নিপা, লায়লা আফরোজ, দিলশাদ জাহান, মাহিনুর মুমু, ঝর্ণা আলমগীর, ফয়জুল্লাহ সাঈদ, মীর মাসরুর জামান রনি, বেলায়েত হোসেন, মুনমুন খান প্রমুখ।