মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক বলেছেন, বিশ্বে বাংলাদেশের গৌরবময় ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রাখতে তরুণ প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। ২০২২ সালে বাংলাদেশের কিশোর, তরুণ ও নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে আন্তর্জাতিক খ্যাতি বয়ে এনেছেন তা অতুলনীয়। এই ধারা অব্যাহত রাখতে তরুণ প্রজন্মের অর্জনগুলোকে স্বীকৃতি দিতে হবে। তাদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

শুক্রবার আমরা একাত্তর আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ২০২২: গৌরবময় অর্জন উদযাপন’ উৎসবের প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। ২০২২ সালে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অর্জনগুলোকে উদযাপন করতে শুক্রবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তন প্রাঙ্গণে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, দেশের গৌরবময় অর্জনগুলোকে উদযাপনের মধ্যে দিয়ে দেশের গৌরবগাথা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। আমরা একাত্তর এই ব্যতিক্রমী আয়োজন করে দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর কাজ করছে। আবার তরুণ প্রজন্মকেও নিজেদের প্রতিভার বিকাশ ও চর্চায় উদ্বুদ্ধ করছে।

অনুষ্ঠানে ২০২২ সালে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রকৌশলী দল, দক্ষিণ এশিয়ায় সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়ন নারী ফুটবল দল, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটিজ ডিবেটিং চ্যাম্পিয়নশিপ বিজয়ী দল, সাত মহাদেশের সাত পর্বতশৃঙ্গ জয়কারী ওয়াসফিয়া নাজরীন, নাসা চ্যালেঞ্জ অ্যাপস প্রতিযোগিতায় বিশ্বজয়ী তরুণ দল, রোবোটিক্স অলিম্পিয়াড-এ স্বর্ণজয়ী কিশোর দল, বিশ্বখ্যাত অনুজীব বিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা এবং আমাদের নাগরিক জীবনধারায় আমূল পরিবর্তনের জন্যে মেট্রোরেলের প্রকৌশলী, প্রকল্প পরিচালক, নারী চালকসহ আটটি বিভাগে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রাজ্ঞজনকে সম্মাননা-স্মারক জ্ঞাপন করা হয়।

এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে মেট্রোরেল নির্মাণ দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হলি আর্টিজানে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার ৭ জাপানি নাগরিকের স্মৃতিতে জাপানি দূতাবাসের প্রতিনিধির হাতে স্মারক-সম্মাননা প্রদান করা হয়। জাপান সরকারের পক্ষে সম্মাননা গ্রহণ করেন জাপান দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত আইওয়ামা কিমিনোরি।

আমরা একাত্তরের চেয়ারপারসন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব জামান বলেন, পরবর্তী প্রজন্ম যাতে আমাদের মুক্তিযুুদ্ধের বিজয় গৌরব পতাকা এগিয়ে নিতে পার সেই উদ্দেশ্যে আমরা একাত্তর কাজ করছে।

তিনি বলেন, শিক্ষা, সাহিত্য, জ্ঞান-বিজ্ঞানে বাঙালি জাতির হাজার বছরের গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে। তরুণ প্রজন্ম আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যকে না জানলে, জাতির গৌরবের সঙ্গে একাত্ম না হলে পরবর্তী প্রজন্ম বিশ্বের কাছে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না। তরুণ প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করতে প্রতিবছর এ ধরনের অর্জন উৎসব আয়োজন করা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘ভিশন -২০৪১’ অর্জনে আমরা একাত্তর  আন্তরিকভাবে কাজ করবে।

জাপানি রাষ্ট্রদূত আইওয়ামা কিমিনোরি জাপান সরকার, সেদেশের জনগণ ও তাদের নির্মাণ দলের নিহত ব্যক্তিদের প্রতি সম্মাননা জ্ঞাপন করায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, এটি জাপান-বাংলাদেশের দীর্ঘ বন্ধুত্বের স্মারক। জাপানের মানুষ এটা স্মরণ রাখবে।

আমরা একাত্তর-এর প্রধান সমন্বয়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা হিলাল ফয়েজী বলেন, আমরা সমতার বাংলাদেশের জন্য কাজ করি। আমরা সমতার বিশ্ব প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখি। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নারী-পুরুষ সকল ক্ষেত্রে আমরা সমতায় বিশ্বাস করি।

তিনি দেশের উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে সবরকম নেতিবাচক প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের বাংলাদেশ গড়তে আজও আমরা তৎপর। আমৃত্যু আমরা এই আদর্শ গড়ার লড়াইয়ে থাকবো। আর এর সঙ্গে যুক্ত করে যাবো আগামী প্রজন্মকে।

মাহবুব জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক প্রকৌশলী ড. শামিম জেড বসুনিয়া, অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর স্ত্রী সেলিনা নওরোজ চৌধুরী, আমরা একাত্তরের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃণাল সরকার, বিশ্বখ্যাত তরুণ অনুজীব বিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী টিসা খন্দকার, ঢাকা আগা খান স্কুলের শিক্ষার্থী যারিয়া মুশাররাত পারিজাত প্রমুখ। অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী পার্থিব প্রিয়।

হলি আর্টিজানে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার ৭ জাপানি নাগরিক এবং পদ্মা সেতুর তিন জন প্রয়াত প্রকৌশলী পরামর্শক সদস্যদের স্মরণে অনুষ্ঠানে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিশিষ্ট আবৃত্তি শিল্পী লায়লা আফরোজ। সেন্টার ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (সিসিডিএ), বাসা ফাউন্ডেশন, ওয়েভ ফাউন্ডেশন এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে আগত সমাজসেবক ড. মনোয়ারা বেগমের যৌথ সহায়তায় আমরা একাত্তর এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।