- রাজধানী
- ডিজিটালের মতো আরও আইন তৈরির পাঁয়তারা
নাগরিক স্মরণসভায় বক্তারা
ডিজিটালের মতো আরও আইন তৈরির পাঁয়তারা

প্রতীকী ছবি
সরকার তার অবৈধ ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করেছে। তার অন্যতম হলো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। সামনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকার ডাটা প্রটেকশন অ্যাক্ট, ডিজিটাল বিজনেস অ্যাক্ট নামে আরও কয়েকটি ভয়াবহ আইন বানানোর পাঁয়তারা করছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাগারে মৃত্যুবরণকারী লেখক মুশতাক আহমেদের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক নাগরিক স্মরণসভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।
তাঁরা আরও বলেন, বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সব গণবিরোধী আইন বাতিল করতে হবে। এ মামলার ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। মিথ্যা মামলার দোসরদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
গতকাল শনিবার সকালে ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতালের গেরিলা কমান্ডার মেজর এটিএম হায়দার বীরউত্তম মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। স্মরণসভায় বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও অধ্যাপক মানস চৌধুরী। সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) নির্বাহী প্রধান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।
স্মরণসভায় আরও বক্তব্য দেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারা নির্যাতিত আলোকচিত্রী শহীদুল আলম, সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল, সমাজকর্মী ইমতিয়াজ আহমেদ কাজল, রাজনীতিবিদ শহিদুল হক হায়দারী, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নেতা প্রীতম দাশ ও দিদারুল ভূঁইয়া।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এই আইনে শুধু বিরোধী পক্ষরাই কারান্তরীণ হয় এবং কারাগারে বিরোধী মতাবলম্বীদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালানো হয়। অমানুষিক নির্যাতনের মাধ্যমে বন্দিদের কাছ থেকে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়। এই সরকার বদলালে যে সরকার আসবে সেই সরকার কি ডিজিটাল আইন বাতিল করবে? তখন এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিরাপত্তা দেয় কিনা দেখা যাবে। আমাদের এই শাসন কাঠামোর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ইতিহাসের জঘন্যতম আইন হিসেবে উল্লেখ করে আসিফ নজরুল বলেন, এই আইনটি সংবিধান সমর্থন করে না। আইনে পুলিশকে অবাধ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। এই আইন বিচারের আগেই শাস্তি দেওয়ার আইন। শুধু এই আইনের বিরুদ্ধে দাঁড়ালে হবে না, এ ধরনের আরও অসংখ্য আইন করা হয়েছে এবং হচ্ছে। সবগুলোর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে।
জোনায়েদ সাকি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বলে মুশতাককে হত্যা করা হয়েছে। এই আইন করা হয়েছিল ডিজিটাল মাধ্যমের নিরাপত্তার কথা বলে। কিন্তু এই আইন এখন নির্যাতনের অস্ত্র। এ আইনের বিরুদ্ধে আমাদের লড়তে হবে। কেবল আইনের বাতিল নয়, এমন নিবর্তনমূলক আইন বানানোর ক্ষমতা কাঠামোকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে হবে। কারাগারে বিচার না পেয়ে, চিকিৎসা না পেয়ে লেখক মুশতাক যেভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন, আমরা এর বিচার চাই।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, কর্তৃত্ববাদী সরকারের হাতিয়ার হলো নিপীড়নমূলক আইন। এসব আইনে প্রতিবাদী মানুষদের ভুক্তভোগী হয়। আসল অপরাধীরা নির্বিঘ্নে বালু উত্তোলন, পাহাড় কাটাসহ পরিবেশ এবং দেশবিধ্বংসী কার্যক্রম নির্বিঘ্নে চালাতে পারে। এসব আইনে শুধু ভুক্তভোগীদের জান, জবান এবং সম্মানের অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়, মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়। ভুক্তভোগীর পরিবারকেও ভুগতে হয়।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন মূলত কোনো আইন নয়, এটা অস্ত্র। এই অস্ত্র ব্যবহার করে বাকস্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে। ভয়ের সংস্কৃতি সৃষ্টি করা হয়েছে। মুশতাক প্রাণ দিয়েছে, অনেকে জেলে গিয়েছে। আমরাও শঙ্কামুক্ত নই। শুধু এই আইনটাই নয়, আরও অনেক আইন হচ্ছে কণ্ঠ রুখে দেওয়ার জন্য।
শহিদুল আলম বলেন, আমাকে যখন গ্রেপ্তার করা হয়, তখন আমার মুক্তির দাবি জানিয়েছিলেন মুশতাক। সেই মুশতাককেই এ রকম একটা আইনে গ্রেপ্তার হয়ে কারাবন্দি অবস্থায় প্রাণ দিতে হবে আমরা সেটা ভাবতেই পারিনি।
স্মরণসভা সঞ্চালনা করেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারা নির্যাতিত আর্কিটেক্ট গোলাম মাহফুজ জোয়ার্দার।
মন্তব্য করুন