বিতর্ক পিছু ছাড়ছেই না ছাত্রলীগের। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও ইডেন কলেজের পর এবার রাজধানীর বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে ছাত্রী নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। শনিবার রাতে অনুসারীদের নিয়ে কলেজের নতুন ভবনের ২০০৭ নম্বর কক্ষে কয়েক ছাত্রীকে নির্যাতন ও জোর করে কয়েকজনের কক্ষ পরিবর্তন করে দেন কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবা আক্তার সাইমুন। এ সময় ভুক্তভোগীরা কক্ষ ছাড়তে না চাইলে তাঁদের বিছানাপত্র ফেলে দেওয়া হয়।

শনিবার রাতের ঘটনার বেশ কয়েকটি ভিডিও এবং অডিও রেকর্ড সমকালের হাতে এসেছে। শুধু তাই নয়, সাইমুনের বিরুদ্ধে সিট বাণিজ্য, শিক্ষার্থী থেকে হল চার্জ আদায় করে হল প্রশাসনকে না দেওয়া, প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে সংগঠনের পক্ষ থেকে ছাত্রীদের দেওয়া সাইকেল কবজায় নেওয়া, ছাত্রলীগের বিভিন্ন বড় অনুষ্ঠানে মেয়েদের জন্য উপহারের শাড়ি অনুষ্ঠানের পর ফেরত নিয়ে বিক্রি করাসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

সাইমুন কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী হিসেবে এত দিনে ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু তিনি বর্তমানে চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়নরত এবং বিভিন্ন বর্ষের কোর্স মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিচ্ছেন। ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের অনুসারী ছিলেন সাইমুন। বর্তমানে তিনি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের সমর্থক বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের একাধিক আবাসিক শিক্ষার্থী সমকালকে বলেন, সাইমুন নেতা হওয়ার পর থেকেই সিট বাণিজ্যে যুক্ত। প্রশাসনের নাম করে তিনি শিক্ষার্থীদের বার্ষিক হল চার্জের সাড়ে ৫ হাজার টাকা তুলে পকেটে রাখেন। তাঁর কারণে হলের ম্যামরা চার্জ চাইলে বিপদে পড়তে হয় ছাত্রীদের। বিষয়টি জানালে সাইমুন ম্যামদের কাছ থেকে লুকিয়ে থাকতে পরামর্শ দেন। বাধ্য হয়ে আবারও হল চার্জ দিতে হয় ছাত্রীদের। হোস্টেলের ডাইনিংয়ের বাজার খরচ থেকেও মাসে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা নেন সাইমুন। ডাইনিং ম্যানেজাররা দিতে অস্বীকৃতি জানালে দুর্ব্যবহার ও হুমকি-ধমকি দেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হলে ছাত্রী তোলার সময় সাইমুন প্রত্যেকের কাছ থেকে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা করে নেন। কিন্তু কক্ষে ঢুকিয়ে দিয়ে দায় সারেন। ফলে বাধ্য হয়ে ছাত্রীদের কক্ষের মেঝেতে থাকতে হয়। গত বছর ২৯ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে মেয়েদের ৭৬টি সাইকেল উপহার দেওয়া হয়। বিশেষ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বদরুন্নেসা কলেজের আট শিক্ষার্থী সাইকেল পান। কিন্তু সেই সাইকেলগুলো বর্তমানে সাইমুনের কবজায়। চাবি নিজের কাছে রেখেছেন। ইচ্ছা হলে চাবি দেন। তবে সাইকেল ব্যবহার শেষে আবার তাঁকে চাবি ফেরত দিতে হয়।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের চারজন করে আট মেয়ে সাইকেল পান। কৌশলে তাঁদের কাছ থেকে সাইকেল কবজায় নেন সাইমুন। এর পর সেগুলো বিক্রি করার প্রস্তাব দেন সভাপতিকে। তবে সভাপতি সম্মতি না দেওয়ায় সাইকেলগুলো বিক্রি করতে পারেননি তিনি। এ ছাড়া সাইকেল দেওয়ার সময় প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ৪ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। সেখান থেকে ২ হাজার টাকা করে সাইমুন নিয়েছেন। সাইমুনের বিরুদ্ধে সংগঠন থেকে বিভিন্ন সময় দেওয়া উপহারের শাড়ি অনুষ্ঠান শেষে ছাত্রীদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। একবার কয়েকজন শাড়ি দিতে না চাইলে তাঁদের কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন তিনি।

শনিবার রাতে সমকালের সঙ্গে সাইমুনের কথা হয়। এ সময় সব অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ইনান জানান, সাইমুনের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখছেন তাঁরা।

ছাত্রী নির্যাতনে তদন্ত কমিটি: এদিকে শনিবার রাতে নির্যাতনের ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষ সাবিকুন নাহার। তিনি বলেন, ভুক্তভোগীদের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। উভয় পক্ষের সঙ্গেই কথা বলছে তদন্ত কমিটি।