পুরোনো বিরোধের জেরে গতকাল রোববার ফের সংঘর্ষে জড়িয়েছেন ঢাকা কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় দফায় দফায় সংঘর্ষের এক পর্যায়ে পুলিশ দু’পক্ষকে সরিয়ে দিতে গেলে শিক্ষার্থীরা তাদের ওপর চড়াও হন। পুলিশ এ সময় টিয়ার গ্যাসের শেল ছোড়ে। এতে মিরপুর সড়ক রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষে আহত হন অন্তত ১০ জন। এ ঘটনার পর ঢাকা কলেজ তিন দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।

গতকাল সকালে সায়েন্স ল্যাব এলাকায় ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণে বহু মানুষ হতাহতের মধ্যে সংঘর্ষে জড়ানোয় শিক্ষার্থীদের মানবিক মূল্যবোধ নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের ভাষ্য, বিস্ফোরণে বিপদগ্রস্তদের পাশে যখন শিক্ষার্থীদের দাঁড়ানোর কথা, তখন উল্টো গন্ডগোল করে দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছেন তাঁরা। বিস্ফোরণ ও পরে সংঘর্ষের কারণে মিরপুর সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে বিপাকে পড়েন বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীরা।

এদিকে, প্রতিবছর ঈদের আগে ঢাকা কলেজ এলাকায় সংঘর্ষের পেছনে ছাত্রনেতাদের আধিপত্য ও চাঁদাবাজি জড়িত বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা। যদিও ছাত্রনেতারা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের নিউমার্কেট জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহেন শাহ সমকালকে বলেন, সংঘর্ষ নয়, শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। মৃদু অ্যাকশনে দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে।

পুলিশ ও শিক্ষার্থী সূত্রে জানা যায়, ঢাকা কলেজের সঙ্গে আইডিয়াল ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের বিরোধ পুরোনো। বিভিন্ন সময়ে কটূক্তি বা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। প্রায়ই তা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, এমনকি সংঘর্ষে রূপ নেয়। সর্বশেষ গত সোমবার আইডিয়াল কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের দুই ছাত্রকে মারধর করেন ঢাকা কলেজের একদল ছাত্র। এরই জেরে বৃহস্পতিবার ঢাকা কলেজের একটি বাস ভাঙচুর করেন আইডিয়ালের শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে দু’পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। গতকাল সকাল থেকেই দুই কলেজের ছাত্ররা আলাদা স্থানে জড়ো হতে থাকেন। দুপুর ১২টার দিকে সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় তাঁরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় আইডিয়ালের সঙ্গে যুক্ত হয় সিটি কলেজের শিক্ষার্থী। দুপুর পৌনে ২টার দিকে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে আইডিয়ালের শিক্ষার্থীদের কলেজ ক্যাম্পাসে পাঠিয়ে দেয়। বিকেল ৩টার দিকে আবারও ঢাকা কলেজের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে লাঠিসোটা নিয়ে আইডিয়ালের দিকে যেতে দেখা যায়। এ পর্যায়ে কলেজ ছাত্রলীগের নেতাদের ইন্ধনে অনার্স-মাস্টার্সের ছাত্ররাও রাস্তায় নেমে আসেন। পুলিশ তাঁদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালায়। তখন ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুর ও ইটপাটকেল ছোড়েন তাঁরা। পরে টিয়ার গ্যাসের শেল ছুড়ে সবাইকে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ।

এদিকে, ভবনে বিস্ফোরণ ও থেমে থেমে চলা সংঘর্ষের কারণে মিরপুর সড়কে দীর্ঘ সময় যান চলাচল বন্ধ থাকে। এতে ওই সড়কসহ আশপাশের এলাকায় দেখা দেয় তীব্র যানজট। বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীদের দীর্ঘ সময় থেমে থাকতে হয়। অনেকে পরিবহন থেকে নেমে হাঁটতে শুরু করেন। সংঘর্ষের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ওই এলাকার বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ীরাও। বিকেল ৪টা পর্যন্ত তাঁদের দোকান বন্ধ রাখতে হয়। নিউমার্কেট এলাকার এক ব্যবসায়ী জানান, শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের কারণে মাঝেমধ্যেই দোকান বন্ধ রাখতে হয়। দিনের পর দিন এসব ঘটনায় তাঁরা অতিষ্ঠ।

এর আগে গত বছরের এপ্রিলে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রাণঘাতী সংঘর্ষ হয়। স্থানীয় সূত্র বলছে, প্রতি বছরই ঈদের আগে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা নানা কারণে সংঘর্ষে জড়ান। এসব বিরোধকে পেছন থেকে উসকে দেন ছাত্রনেতারা। এর মধ্য দিয়ে তাঁরা আধিপত্য ধরে রাখার চেষ্টা চালান। কারণ, ঈদ ঘিরে বিপুল অঙ্কের চাঁদাবাজি হয়। এ ক্ষেত্রে যাঁর গ্রুপের প্রভাব-প্রতিপত্তি বেশি, তিনি টাকাও বেশি পান।

ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের বিলুপ্ত আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রহমত উল্লাহ সমকালকে বলেন, এবার একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্ররা বাইরের কোনো বিষয় নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়। এর সঙ্গে কলেজ বা রাজনৈতিক সম্পর্ক নেই। চাঁদাবাজি অতীতে হলেও এখন সবাই ‘ক্লিন ইমেজের’ নেতা বলে দাবি করেন তিনি।

ঢাকা কলেজ তিন দিন বন্ধ: সংঘর্ষের ঘটনায় তিন দিনের জন্য ঢাকা কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অনিবার্য কারণে ৬ মার্চ কলেজের সব ক্লাস স্থগিত থাকবে। এ ছাড়া দোলযাত্রা উপলক্ষে ৭ মার্চ ও শবেবরাত উপলক্ষে ৮ মার্চ কলেজের সব ক্লাস বন্ধ থাকবে। ৮ মার্চ ছাড়া আগের দু’দিন অফিস ও বিভাগগুলো খোলা থাকবে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাসহ যাবতীয় কার্যক্রম যথারীতি চলবে। তবে ঢাকা কলেজের সব অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা স্থগিত থাকবে।