রাজধানীর সায়েন্সল্যাব এলাকায় গতকালের বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত ভবনের একজন টেইলার ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদ। বহু বছর ধরে ভবনটিতে ব্যবসা করছেন তিনি। সেখানে বেস্ট টেইলার নামে একটি দোকান আছে তার। তিনি জানান, গতকালের বিস্ফোরণের সপ্তাহখানেক আগে অজ্ঞাত ৪-৫ জন লোক এই ভবনটি মাপজোক করেন। হঠ্যাৎ দোকানের ভেতরে মাপার কারণ সম্পর্কে তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন ভবনের মালিক মাপতে বলেছেন। মালিকের কথা শুনে আর জনা হয়নি তারা কেন এই মাপামাপি করছেন।

তিনি আরও বলেন, ভবনের দ্বিতীয় তলায় আমার দোকান আর বিস্ফোরণ হয়েছে তৃতীয় তলায়। ঘটনার সময় আমার দোকানে ৩ জন কর্মচারী ছিলেন। তারা অক্ষত আছেন। তারা জানায় জন্মের পর তারা এমন ভয়ঙ্কর শব্দ শোনেনি।

আব্দুর রশিদ বলেন, এই ভবনের তৃতীয় তলায় কাল বিস্ফোরণ হয়েছে। কিন্তু সেখানে কোনো গ্যাসের লাইন নেই। 

বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত ভবনটির নাম শিরিন ম্যানসন। ভবনটির কেয়ারটেকার আবুল কালাম। বিগত ৪০ বছর ধরে তিনি চাকরি করছেন ভবনটিতে। অসুস্থ থাকায় গতকাল তিনি কাজে আসতে পারেননি। বর্তমানে তিনি ৪ দিনের ছুটিতে উত্তরখানের বাসায় আছেন। তিনি জানান, বিধ্বস্ত ওই ভবনটির মালিক শিরিন শারমিন নামে এক ইংল্যান্ড প্রবাসী নারী। তার বোন জাকিয়া আবুল কালামের কাছ থেকে ভবনটির প্রতি মাসের ভাড়া বাবদ ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা নিয়ে থাকেন।   

আবুল কালাম বলেন, এই জায়গার মালিক ছিলেন শিরিন শারমিনের বাবা। শিরিন পৈত্রিক সূত্রে এই জায়গার মালিক হন। এখানে আগে টিনের ঘর ছিল। 

তিনি বলেন, ভবনে দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় গ্যাসের কোনো লাইন নেই। শুধু নিচ তলায় একটি খাবারের একটি হোটেল আছে। সেখানে রান্নার জন্য গ্যাসের লাইন আছে। 

টেইলার ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদ বলেন, পুরো ভবনটির আয়তন প্রায় ২ হাজার স্কয়ার ফিট। দ্বিতীয় তলার অধিকাংশ জায়গা জুড়ে আমার দোকান। সেখানে আমার প্রায় কোটি টাকার মতো পোশাক আছে। এখন পুলিশ বলছে দ্রুত সেখান থেকে মালপত্র সড়িয়ে নিতে কেননা ভবনটি ভেঙে ফেলা হবে। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেখান থেকে মালপত্র সড়িয়ে নিচ্ছি। 

তিনি বলেন, আমার দোকানে প্রায় ৫০ জন শ্রমিক কাজ করেন। রমজান-ঈদের সামনে এখন তাদের নিয়ে এখন কোথায় দাঁড়াবো কিছুই বুঝতে পারছি না।

আজ সকাল থেকে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ভবনটির চারপাশে নিরাপত্তায় রয়েছেন পুলিশ সদস্যরা।

নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, এই ঘটনায় এখনও কোনো মামলা হয়নি। তবে মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

এরআগে, রোববার সকাল পৌনে ১১টার ভবনটির তিনতলায় বিস্ফোরণ হয়। এতে তিনজন নিহত হন। আহত হন ১৫ জন। আহত ব্যক্তিরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ভবনে বিস্ফোরণ নিয়ে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট জানিয়েছে, জমে থাকা গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ হয়েছে। 

তবে ঠিক কোথায় ও কীভাবে গ্যাস জমে ছিল, কীভাবে বিস্ফোরণের সূত্রপাত হয়, সেটা গতকাল পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দলের কর্মকর্তারা জানান, কোনো আবদ্ধ জায়গায় স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি ঘনত্বের গ্যাস থাকলে বৈদ্যুতিক সুইচ, শর্টসার্কিট, দেশলাই বা লাইটারসহ এ ধরনের যেকোনো কিছু থেকে বিস্ফোরণের সূত্রপাত হতে পারে।


বিষয় : সায়েন্সল্যাব এলাকায় বিস্ফোরণ

মন্তব্য করুন