‘হায় খোদা! কী যে দেখলাম! বিকট শব্দে বাসের জানালা গুলা ফাইটা ফাইটা ঝুরঝুরাইয়া পড়ল। রিকশাগুলা ইট-কাচে চাপা পইড়া ভাইঙা ভাইঙা পড়ল। পাশের গলিতে ভ্যানগুলাও ভাইঙা ভাইঙা পড়ল। চোখের সামনে ঝইলসা গ্যাল চালকগো শরীর। আর চারদিকে ভাইসা উঠল খালি আহাজারি।’ 

বলছিলেন রাজধানীর গুলিস্তানে বিআরটিসি কাউন্টারের পাশে সাততলা ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মো. নুরনবী। তিনি পাশের ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচতলা ভবনে থাকা বাংলাদেশ স্যানিটারীর স্বত্তাধিকারী। তার বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে।

মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে তিনি সমকালের কাছে ভয়াবহ ওই বিস্ফোরণের বর্ণনা দেন।

নুরনবী বলেন, ‘আমি দুপুরে খেয়ে দোকান থেকে একটু বের হইছি। হঠাৎ করে বিকট শব্দ। বাইরে আইসা দেখি চারদিকে ধূলা আর ধোঁয়া। এরকম ছিল প্রায় ১০ মিনিট। বিস্ফোরণের তেজে আশেপাশের দূরের ভবনেরও কাঁচ ভাইঙা পড়ে। বিকট শব্দে বাসের জানালা ভাইঙা পড়ে। এসি ফাটলে কী এমন ভয়ঙ্কর হয়, আল্লাহ মালুম! আমি একটু দূরে ছিলাম, নইলে তো এতক্ষণে আমিও শ্যাষ!’

তিনি বলেন, ‘আমাগো দোকানের উপরে ব্র্যাক ব্যাংক। নিচে সবগুলো স্যানিটারী দোকান। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হইছে আজাদ স্যানিটারী, আনিকা স্যানিটারী আর আমাগো দোকান। কোটি কোটি টাকার মালামাল ছিল। সব চুরমার হইয়া গেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিস্ফোরণে নিচতলার ফ্লোর ধ্বসে বেসমেন্টের স্যানিটারী দোকান পুরা ধ্বংস হয়ে গেছে। দোকানের তিনজন কর্মচারীর এখনো খোঁজ পাই নাই। তাই এইখানে (ঢামেক) আসছি।’

তার সঙ্গে থাকা আরেক দোকানী জানান, দুপুরে খাবারের বিরতিতে বাসায় বিশ্রাম করছিলেন। খবর শুনে দৌড়ে যান। গিয়ে দেখেন সব তছনছ। উদ্ধারকর্মীরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

মঙ্গলবার বিকেল পৌনে পাঁচটায় বিআরটিসি কাউন্টারের পাশে সাততলা ভবনের বেসমেন্টে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ঢাকা মেডিকেলের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক ১৭ জন নিহত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক।

নিহতদের মধ্যে ইতোমধ্যে ১৬ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ঢামেক হাসপাতালে বর্তমানে ১৯ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নিচ্ছেন আহত আরও ১০ জন।