প্রতিষ্ঠিত স্যানিটারি ব্যবসায়ী মমিন উদ্দিন সুমনের স্বজনের শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি। কেউ ছুটছেন হাসপাতালে; কেউ আহাজারি করছিলেন ধ্বংসস্তূপের সামনে। সুমনের ফোনের রিংটোন তখনও বাজছিল। তবে কোথাও সন্ধান মিলছিল না তাঁর। সিদ্দিকবাজারের বিধ্বস্ত ভবনে সুমনের রয়েছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। বিস্ফোরণের সময় নিজের প্রতিষ্ঠানেই ছিলেন তিনি। বিস্ফোরণের ২৪ ঘণ্টা পর গতকাল বুধবার বিকেলে বিধ্বস্ত সেই ভবন থেকে সুমনের মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। একই সঙ্গে মিলল তাঁর কর্মচারী রবিন হোসেনের লাশ। সুমনের দোকানের আরেক কর্মচারী সম্রাটের মরদেহ পাওয়া যায় মঙ্গলবার। শেষ পর্যন্ত কর্মচারীদের সঙ্গে অনন্তযাত্রায় ধনাঢ্য ব্যবসায়ী সুমন। পরিবারের পাশাপাশি স্যানিটারি ব্যবসায়ীর আট প্রতিষ্ঠানের শতাধিক কর্মীও অপেক্ষায়  ছিলেন– তাঁদের মালিক ফিরে আসবেন। তবে মালিকের নিথর দেহ পাওয়ার পর কর্মচারীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, বিস্ফোরণের পরপরই কেউ কেউ সুমনের আকুতি শুনেছেন। তিনি কয়েকবার বলছিলেন– ‘আমারে বাঁচাও।’ মঙ্গলবার রাতেও স্বজনরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে হন্যে হয়ে সুমনকে খুঁজছিলেন। জরুরি বিভাগের সামনে আহাজারি করছিলেন সুমনের কন্যা তানিশা। স্বজনরা তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়া চেষ্টা করছিলেন।

তানিশা বললেন, ‘আমার আব্বুরে তোমরা এনে দাও। আব্বুরে ছাড়া কীভাবে বাঁচব?’ এমন বিলাপের মধ্যে তানিশার এক স্বজন তাঁকে ফোনে তাঁর বোনের সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ করেন। তখন তানিশা বলছিলেন, ‘আপুরে, তুই চলে আয়। আব্বুরে খুঁজতে চলে আয়। বাবাকে খুঁজে পাচ্ছি না। আল্লাহ যেন আব্বুকে সুস্থ রাখেন।’

বিকেল ৫টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ধ্বংসস্তূপ থেকে দু’জনের মরদেহ উদ্ধারের কথা জানান। এর মধ্যে সুমনের মরদেহও রয়েছে। স্বজনরা জানান, সুমনের বড় মেয়ে মালয়েশিয়ায় পড়াশোনা করেন। বিস্ফোরণের কথা শুনে গতকালই বাংলাদেশে ফিরেছেন।

সুমনের অন্তত আটটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। সব মিলিয়ে ঢাকায় তাঁর কর্মী শতাধিক। সুমনের মৃত্যুতে এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছেন এসব কর্মী। বংশালের বাসিন্দা আনিকা এজেন্সির মালিক সুমনকে সবাই চেনেন স্যানিটারি পণ্যের একজন বড় ব্যবসায়ী হিসেবে। এলিফ্যান্ট রোডেও তাঁর স্যানিটারির দুটি শোরুম আছে। আমদানি করা পণ্যের ব্যবসার পাশাপাশি ছোটখাটো কারখানা রয়েছে তাঁর। বংশালে রয়েছে মোটরসাইকেলের শোরুম।