- রাজধানী
- ভিডিও করলে কি ভাই ফিরে আসবে?
সাংবাদিকদের নিহত সুমনের বোনের প্রশ্ন
ভিডিও করলে কি ভাই ফিরে আসবে?
-samakal-64096d14cc725.jpg)
ছবি: সমকাল
মায়ের জন্য ইফতারি কিনতে গিয়ে বের হয়ে গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণে মারা যান মো. সুমন। গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে তাঁর লাশ নিতে এসে হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা। এ সময় সাংবাদিকরা তাঁদের তথ্য জানতে চান, কেউ ধারণ করেন ভিডিও। একপর্যায়ে বিরক্ত হয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশে চিৎকার করে প্রশ্ন ছুড়ে দেন সুমনের বোন সোমা। তিনি বলতে থাকেন, আপনারা কি আমাদের নিস্তার দেবেন না? ভিডিও করলে কি ভাই ফিরে আসবে?
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন দুর্ঘটনায় ঢামেকের জরুরি বিভাগে আনা হয় অনেক ভুক্তভোগীকে। ঘটনাটি দেশের মানুষকে জানাতে সেখানে হাজির হন গণমাধ্যমকর্মীরা। তাঁরা তথ্য সংগ্রহ করে সেটি সংবাদমাধ্যমে তুলে ধরেন। তবে এ সময় একটি সংকট তৈরি হয়।
একদিকে ভুক্তভোগী ও তাঁর স্বজনের মানসিক অবস্থা প্রতিকূল থাকে। অন্যদিকে গণমাধ্যমকর্মীদের সঠিক তথ্য সংগ্রহ এবং সময়ানুবর্তিতার তাড়া। দুই মিলিয়ে একের পর এক গণমাধ্যমকর্মী তাঁদের প্রশ্ন করতে থাকেন। এতে দু’পক্ষের মধ্যে তৈরি হয় তিক্ততার। অনেক সময় রোগীর আত্মীয়স্বজনকে সাংবাদিকদের মারতেও উদ্যত হতে দেখা যায়। এমন পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের আরও ধৈর্যশীল ও মানবিক হওয়া উচিত বলে মনে করেছেন গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, একজন মৃত্যুপথযাত্রী এবং তাঁর স্বজনের মানসিক অবস্থা উপলব্ধি করে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে হবে। রোগী হাসপাতালে প্রবেশের সময় তাঁকে দাঁড় করিয়ে প্রশ্ন করা অপেশাদারি মনোভাব। কেউ তাঁদের প্রিয়জন হারিয়েছেন, অনেক বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন, ফলে স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে চাইবেন না তাঁরা। আমাদের বুঝতে হবে কতটুকু আমরা যেতে পারি। এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দরকার। তথ্য সংগ্রহ ও প্রচারের পাশাপাশি মানবিকতাবোধও জরুরি।
ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল মনসুর আহমেদ বলেন, সাংবাদিক জনগণকে সঠিক তথ্যই দিতে চান। এটা তাঁদের মৌলিক দায়িত্ব। আবার যাঁরা আত্মীয় হারিয়েছেন তাঁদের মানসিক অবস্থা পূরণ করার মতো নয়। এটি একটি কঠিন পরিস্থিতি। সাংবাদিকরা ব্যথিত হবেন পাশাপাশি তাঁরা দায়িত্ব পালন করবেন।
ঢাবির টেলিভিশন ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক আবু জাফর মো. শফিউল আলম ভূঁইয়া বলেন, এটা আসলে একটা নৈতিক ইস্যু। সারা পৃথিবীতে মুমূর্ষু রোগীর মন্তব্য নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হয় না। সাংবাদিকতার নীতিমালার জায়গা থেকে হতাহতদের সুরক্ষার বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে সংবাদ সংগ্রহ নিশ্চিত করতে হবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ. আল মামুন বলেন, বেশিরভাগ সাংবাদিকদের মধ্যে তাড়াহুড়া থাকে। রোগী অথবা রোগীর আত্মীয়ের সঙ্গে অবস্থা বুঝে কথা বলার মতো মানসিকতা কম দেখা যায়। মাঝেমধ্যে এমন প্রশ্ন করে থাকেন, যেটি রোগীর পরিবারের জন্য কষ্টদায়ক হয়ে দাঁড়ায়। তবে ভালো সাংবাদিকরা কাজটি করতে পারেন। একটু অপেক্ষা করা, একটু ধৈর্য ধরা।
মন্তব্য করুন