রাজধানীর গুলিস্তানে বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত সাততলা ভবনটি নাম কুইন স্যানেটারি মার্কেট। ওই ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ডই বিস্ফোরণের উৎসস্থল। ভবনটির বেইজমেন্টে পার্কিংয়ের কথা থাকলেও সেখানে একসময় রান্না ঘর ছিল। পরে ‘বাংলাদেশ স্যানিটারি’ নামে একটি কমার্শিয়াল প্রতিষ্ঠানে স্যানেটারি মালামাল বিক্রি করতো। প্রায় এক হাজার আটশ স্কয়ার ফিটের এ আন্ডার গ্রাউন্ডে সম্পূর্ণ গ্লাসে ঘেরা ছিল। বড় বড় দুইটি এসিতে ঠান্ডা করা হয় এ দোকান। বেইজমেন্টে কার পার্কিং থাকলে বাতাসের ভেন্টিলেশন থাকত, কোনো গ্যাসের জমা হতো না। এতে হয়তো বিস্ফোরণও হতো না।

বৃহস্পতিবার পর্যবেক্ষণে পাওয়া ত‌থ্যের বরাত দি‌য়ে এসব তথ্য জানান ডিএমপির বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলের প্রধান অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) রহমত উল্লাহ চৌধুরী।

তিনি বলেন, যে ভবনটিতে বিস্ফোরণ ঘটে তার নাম কুইন স্যানিটারি মার্কেট। একসময় এটার নাম ছিল কুইন ক্যাফে। ১০ তলা ভবনের প্ল্যান করা হলেও ১৯৯২ সাল পর্যন্ত বেইজমেন্ট ও একতলা কমপ্লিট ছিল। এর বেইজমেন্টে ছিল রান্নাঘর আর একতলায় ছিল খাবারের হোটেল। এই রান্নাঘরে কমার্শিয়াল গ্যাসের বড় লাইন ছিল, যা পরে লিখিতভাবে তিতাসের কাছে সারেন্ডার করা হয়। ২০০৪ সালে ভবনটির সাততলা পর্যন্ত কমপ্লিট করা হয়। বর্তমানে একটি আন্ডারগ্রাউন্ড বেইজমেন্টসহ সাততলা পর্যন্ত ভবনটি কমপ্লিট আছে। ভবনটির প্রকৃত মালিক মরহুম হাজী মোহাম্মদ রেজাউর রহমান। ২০১১ সালে তার মৃত্যুর পর বর্তমানে তার তিন ছেলে, দুই মেয়ে ও স্ত্রী ভবনটির মালিক।

এডিসি রহমত উল্লাহ বলেন, বিস্ফোরিত ভবনটির আন্ডারগ্রাউন্ডে একটি বড় পানির ট্যাংকও ছিল। সাততলা ভবনের কোথায় সুয়ারেজ সেপটিক ট্যাংক অবস্থিত তা ভবনের মালিকরা নিশ্চিত না। ধারণা করা হ‌চ্ছে, উত্তর পাশের ভবনের সঙ্গে যে আড়াই থে‌কে তিন ফুট গলি আছে সেখানেই দুই ভবনের সেপটিক ট্যাংক অবস্থিত।

‘সাততলা ভবনের বেইজমেন্টসহ তিনটি ফ্লোরের কমার্শিয়াল লোকজন, বাসা-বাড়ির লোকজনের  পয়োবর্জ্য যেখানে জমা হয় দীর্ঘ সময় সেই জায়গা পরিষ্কার না করায় সেখানেও বায়ো গ্যাসের জন্ম হতে পারে। যা বিভিন্ন কারণে বিস্ফোরিত হয়ে ব্যাপক ক্ষতির সৃষ্টি করে।’

তিনি আরও বলেন, একসময় এ বেইজমেন্টের রান্নাঘরে কমার্শিয়াল বড় লাইনে গ্যাস সরবরাহ করা হতো। পরে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু বাড়ির অন্যান্য ফ্লোরের ডোমেস্টিক লাইন এখনো চলমান। ফলে এই লাইন সম্পূর্ণ বন্ধ না হয়ে সেখান দিয়েও তিতাস গ্যাস লিক হতে পারে। কোনোভাবে জমা গ্যাসে স্পার্কের মাধ্যমে বিস্ফোরণের হতে পারে।

ডিএমপির বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলের প্রধান বলেন, ভবন মালিকদের তথ্য মতে মূল ক্ষতিগ্রস্ত ভবন ও তার উত্তর পাশে ব্র্যাক ব্যাংকের ভবনের মাঝখানে সরু একটি গলি আছে। এ গলিতে পয়োবর্জ্য পদার্থের সেপটিক ট্যাংকি, এসির আউটার ইত্যাদি অবস্থিত। বিস্ফোরণে সেপটিক ট্যাংকের পাশের দেওয়ালগুলো সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পয়োবর্জ্য পদার্থের বায়ো গ্যাসের বিস্ফোরণে এমনটি হতে পারে।

তিনি বলেন, এ ভবনটির আন্ডারগ্রাউন্ডতে পাওয়ার ফুল এসি ব্যবহার করা হতো। এসিগুলো নিয়মিত সার্ভিসিং না করালে বা ত্রুটিপূর্ণ থাকলে তা থেকেও বিস্ফোরণের কারণ হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, ভবনটি কোনো পরিত্যক্ত পাবলিক স্পেস বা ভবন নয়। ব্যক্তি  মালিকানাধীন। বিভিন্ন ব্যবসায়ির সার্বক্ষণিক নজরদারি ও সিসি ক্যামেরার সার্ভিলেন্স এ ছিল এটি। ফলে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির জন্য যে পরিমাণ বিস্ফোরক প্রয়োজন তা এখানে সবার অজান্তে জমা রাখা প্রায় অসম্ভব। 

বিস্ফোরণের প্রকৃত কারণ সম্পর্কে ফায়ার সার্ভিস, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, ঢাকা মহানগরীর সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল টিম আলাদা আলাদাভাবে তদন্ত করছে। বিভিন্ন দিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তারা প্রতিবেদন দিলে প্রকৃত কারণ যা  যাবে বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।

মঙ্গলবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে গুলিস্তানে বিআরটিসি বাস কাউন্টারের পাশে সিদ্দিক বাজারের নর্থসাউথ রোডে অবস্থিত কুইন স্যানেটারি মার্কেট ভবনের বেজমেন্টে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২১ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ।

ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, বিস্ফোরণে সাততলা ভবনের পাশে আরেকটি পাঁচতলা ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কোনো ভবন ধসে পড়েনি।