- রাজধানী
- নির্বাচনের আগে ষড়যন্ত্র মনে করছেন বিশিষ্টজনরা
ইউনূসকে নিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টে চিঠি
নির্বাচনের আগে ষড়যন্ত্র মনে করছেন বিশিষ্টজনরা

ড. মুহাম্মদ ইউনূস
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে ৪০ বিদেশির একটি বিজ্ঞাপন নিয়ে দেশে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। কোনো আলোচনায় না থাকলেও হঠাৎ করে ড. ইউনূসকে নিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টে বিজ্ঞাপন আকারে ওই ৪০ বিদেশির খোলা চিঠি প্রকাশকে বাঁকা চোখে দেখছেন দেশের বিশিষ্টজনরা। নির্বাচনের আগে এটিকে ষড়যন্ত্র ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করছেন তাঁরা।
শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের ‘অন্যায় আচরণের শিকার’- এমন অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাবর খোলা চিঠি লিখেছেন বিশ্বের ৪০ বিশিষ্ট ব্যক্তি, যা গত ৭ মার্চ ওয়াশিংটন পোস্টে সাত নম্বর পৃষ্ঠায় বিজ্ঞাপন আকারে প্রকাশিত হয়। বিজ্ঞাপনটি সাড়ে ১৮ ইঞ্চি, পাঁচ কলামে ছাপানো হয় (মোট ৯২.৫ ইঞ্চি)। ওই পৃষ্ঠায় মোট ছয় কলামের মধ্যে এক কলাম নিউজ ছিল। আর নিচের দিকে অন্য একটি বিজ্ঞাপন ছিল, যার মাপ আড়াই ইঞ্চি।
অনলাইনে পাওয়া তথ্য অনুসারে, বর্তমানে ওয়াশিংটন পোস্টে প্রতি কলাম ইঞ্চি বিজ্ঞাপনের দর ৮০৭ ডলার। সে হিসাবে এই বিজ্ঞাপন প্রকাশে খরচ পড়েছে ৭৩ হাজার ৩৩ ডলার। প্রতি ডলার ১০৭ টাকা ধরে বিজ্ঞাপনটি প্রকাশে খরচ দাঁড়ায় ৭৮ লাখ ১৪ হাজার ৫৮৪ টাকা। বিজ্ঞাপনের এ টাকা কে পরিশোধ করেছে, কোথা থেকে পরিশোধ হয়েছে, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।
ড. ইউনূসের পক্ষে ৪০ বিদেশির ওই চিঠির প্রতিবাদ জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু পরিষদ। বঙ্গবন্ধু পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক পরিষদের ৫০ বুদ্ধিজীবীর পক্ষে শনিবার এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মোহাম্মদ ইউনূসের ‘ভালো থাকা নিয়ে উদ্বেগ’ জানানো ৪০ বিদেশির বক্তব্য বাস্তবতাবর্জিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, জাতীয় সংসদের আগামী নির্বাচনের এক বছরের কম সময় বাকি থাকতে হঠাৎ করেই আলোচ্য ৪০ জন বিদেশি নাগরিকের ড. মোহাম্মদ ইউনূসের ‘মহান’ অবদানকে সমর্থন ও স্বীকৃতি দানের আহ্বানের নেপথ্যে বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। এর আগেও দেখা গেছে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সুপরিকল্পিতভাবে এই ব্যক্তিটিসহ একটি স্বার্থান্বেষী মহল পদ্মা সেতু প্রকল্পে কল্পিত দুর্নীতির অভিযোগ এনে বিদেশি ঋণ বাতিলে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিল। তাদের লক্ষ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ যাতে ক্ষমতাসীন হতে না পারে। কিন্তু তাদের সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলেও ষড়যন্ত্র থেমে নেই বলেই মনে হচ্ছে।
তাঁরা আরও বলেন, ড. ইউনূসের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ বিতরণসহ অন্যান্য ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনায় কোনো বাধা আছে বলে মনে হয় না। তিনি যদি ভালো কাজ করে থাকেন তা মূল্যায়ন করবে দেশের মানুষ। কিন্তু তাঁর ‘মহান’ অবদানকে সমর্থন ও স্বীকৃতিদানের জন্য ৪০ জন নাগরিকের আহ্বান জানানো এবং তা ওয়াশিংটন পোস্টের মতো পত্রিকার পৃষ্ঠাজুড়ে বিজ্ঞাপন আকারে প্রচারের বিষয়টি বোধগম্য নয়। বিদেশি নাগরিকদের এ তৎপরতার নেপথ্যে সরকারের ওপর প্রচ্ছন্ন চাপ ও বিশেষ ধরনের রাজনীতি রয়েছে বলে আমরা মনে করি। এ ধরনের অসত্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য সম্বলিত তৎপরতায় দেশের জনগণ বিভ্রান্ত হবেন না বলেই আমরা বিশ্বাস করি।
বিবৃতিতে বলা হয়, জাতিসংঘের প্রাক্তন মহাসচিব বান বি মুন জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উন্নয়নশীল দেশসমূহের রোল মডেল হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। বিখ্যাত আন্তর্জাতিক ব্যক্তিদের কাছ থেকে এ ধরনের প্রশংসা বাক্য আরও অনেক রয়েছে। কিন্তু আমাদের ধারণা অনেকেই ড. ইউনূসের কার্যক্রমের সঙ্গে পুরোপুরি অবহিত নন বলেই এ ধরনের বিতর্কিত বিজ্ঞাপন ওয়াশিংটন পোস্টের মতো একটি পত্রিকায় প্রকাশ করা সম্ভব হয়েছে।
অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ও অধ্যাপক আ ব ম ফারুক ছাড়া বিবৃতি প্রদানকারী অন্যরা হলেন, মো. আবুল কালাম আজাদ (ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বাসস), অজিত কুমার সরকার (সাংবাদিক), অধ্যাপক ড. আবদুল খালেক (প্রাক্তন উপাচার্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়), কবি ও স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান খান (প্রাক্তন উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়), অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত (অর্থনীতিবিদ), অধ্যাপক ড. আবুল আহসান চৌধুরী (কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়), অধ্যাপক ড. মাহাবুবুর রহমান (প্রাক্তন উপাচার্য, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়), অধ্যাপক ড. কামালউদ্দিন আহমেদ (প্রাক্তন উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়), মাহবুব উদ্দিন আহমদ, বীর বিক্রম ( মুক্তিযোদ্ধা), শফিকুর রহমান এমপি (সাংবাদিক), অধ্যাপক ড. হাবিবুর রহমান (উপাচার্য, ডুয়েট), অধ্যাপক ড. ফায়েক উজ্জামান (প্রাক্তন উপাচার্য, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়), অধ্যাপক ড. আবুল কাশেম (ইতিহাসবিদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়), অধ্যাপক ড. ছাদেকুল আরেফিন (উপাচার্য, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়), অধ্যাপক ড. ডালেম চন্দ্র বর্মন (প্রাক্তন উপাচার্য, আশা বিশ্ববিদ্যালয়), অধ্যাপক ড. এ জে এম শফিউল আলম ভূঁইয়া (টেলিভিশন ও ফিল্ম স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), অধ্যাপক নিসার হোসেন (ডিন, চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), অধ্যাপক ড. মো. মিজান উদ্দিন (প্রাক্তন উপাচার্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়), অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান, (হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়), অধ্যাপক ড. নাসিম আখতার (উপাচার্য, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়), অধ্যাপক কাজী ওমর সিদ্দিকী ((ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়) প্রমুখ।
অন্যদিকে ওয়াশিংটন পোস্টে বিজ্ঞাপন আকারে চিঠি প্রকাশকারী ৪০ বিদেশি হলেন– সংগীতশিল্পী ও অ্যাকটিভিস্ট বোনো, ভার্জিন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা স্যার রিচার্ড ব্র্যানসন, ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট লর্ড মার্ক ম্যালোক ব্রাউন, সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, রেজাল্টস অ্যান্ড সিভিক কারেজের প্রতিষ্ঠাতা স্যাম ডালি হ্যারিস, ড্যালেয়ার ইনস্টিটিউট ফর চিলড্রেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটির প্রতিষ্ঠাতা লে. জে. (অব.) রোমিও ডালাইরা, এমেরিটা চিলড্রেন'স ডিফেন্স ফান্ডের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট মারিয়ান রিট এডেলমান, মেক্সিকোর সাবেক প্রেসিডেন্ট ভিসেন্তে ফক্স, সংগীতশিল্পী পিটার গ্যাব্রিয়েল, নাসার সাবেক মহাকাশচারী রন গারেন, ইউনিসেফের সাবেক উপনির্বাহী পরিচালক ও জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব কুল গৌতম, গ্লাসগো ক্যালেডিনিয়ান ইউনিভার্সিটির সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর এবং এমিরেটাস অধ্যাপক পামেলা গিলিস, রকফেলার ফাউন্ডেশন ও ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউনের সিইও পিটার সি. গোল্ডমার্ক জুনিয়র, প্রাইমাটোলজিস্ট ও অ্যাকটিভিস্ট জেন গুডাল, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর, রোটারি ইন্টারন্যাশনালের সিইও জন হেওকো, সমাজসেবী ও উদ্যোক্তা মো. ইব্রাহিম, যুক্তরাজ্যের হাউজ অব লর্ডসের কেসি সদস্য ব্যারোনেস হেলেনা কেনেডি, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটসের প্রেসিডেন্ট কেরি কেনেডি ও টেড কেনেডি জুনিয়র, ভেনচার ক্যাপিটালিস্ট ভিনোড খোসলা, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, সংগীতশিল্পী ও অ্যাক্টিভিস্ট অ্যানি লেনক্স, মার্কিন সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক প্রধান আর্থার লেভিট, সাবেক মার্কিন কম্পট্রোলার অব দ্য কারেন্সি ও স্প্রিং হারবার হোল্ডিংসের জেন লাডউইগ, ভিএমওয়্যারের সাবেক সিইও পল মারিজ, ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব শিকাগোর সাবেক প্রেসিডেন্ট ও সিইও মাইকেল এইচ মস্কো, ইনফোসিসের প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তি, চ্যাথাম হাউজের সাবেক প্রধান নির্বাহী স্যার রবিন নিবলেট, বিশ্বব্যাংকের সাবেক ইউএস বোর্ড ডিরেক্টর ও সাউদার্ন ব্যানকরপোরেশনের উপদেষ্টা জ্যান পিয়ারসি, ইয়েল ল স্কুলের স্টার্লিং প্রফেসর অব ল রবার্ট পোস্ট, মিশিগানের সাবেক মার্কিন সিনেটর ও ব্যাংকিং, হাউজিং এবং নগর উন্নয়ন সংক্রান্ত সিনেট কমিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান ডোনাল্ড রিগেল, আয়ারল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট মেরি রবিনসন, এলেন সিডম্যান, অভিনেত্রী ইয়ার্ডলি স্মিথ, শ্যারন স্টোন, ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার প্রফেসর ইমেরিটাস ড. ডেভিড সুজুকি, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির সাইড স্কুল অব বিজনেসের সাবেক ডিন পিটার তুফানো, বৈশ্বিক নারী বিষয়ক সাবেক মার্কিন অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ মিলেন ভারভির এবং উইকিপিডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা জিমি ওয়েলস।
মন্তব্য করুন