- রাজধানী
- ছক কষেন মানি প্লান্টের কর্মী
ছক কষেন মানি প্লান্টের কর্মী

ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা লুটের ছক কষেন সিকিউরিটি এজেন্সি মানি প্লান্ট লিংক লিমিটেডের এক কর্মী। তাঁর নাম সোহেল রানা। তিনি মানি প্লান্টের সাবেক গাড়িচালক। চাকরি করার সময় এটিএম বুথে টাকা পরিবহনে প্রতিষ্ঠানটির নিরাপত্তা ত্রুটির বিষয় তাঁর নজরে আসে। সোহেলসহ ছিনতাই পরিকল্পনায় চার-পাঁচজন জড়িত। সব মিলিয়ে ১৩ থেকে ১৪ জন যুক্ত হন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ডাকাতির ঘটনায় জড়িত ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। ছিনতাই হওয়া টাকার মধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে ৭ কোটি ১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। মঙ্গলবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ জানান, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের টাকা ডাকাতির ঘটনায় বনানীর কড়াইল বস্তি ও নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর থেকে আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন– মো. হৃদয়, মিলন মিয়া ও মো. আকাশ। তাঁদের কাছ থেকে ৫৮ লাখ ৭ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লুটের মূল পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নকারী হিসেবে ছিলেন চার-পাঁচজন। তাঁদের মধ্যে সোহেল রানার সঙ্গে আকাশও ছিলেন। ঘটনার আগে তাঁরা নকল চাবি তৈরি করেন। মানি প্লান্টের গাড়িতে কোনো অস্ত্রধারী নিরাপত্তারক্ষী থাকেন না– এটা নিশ্চিত হয়ে বিনা অস্ত্রে ডাকাতরা অপারেশনের ছক করেন। বাধাহীনভাবেই তাঁরা মাইক্রোবাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন। ডাকাতির মূল হোতা আকাশ টাকা লুটের পর মাইক্রোবাসে উঠতে না পারলেও সেখান থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। ডাকাতদের কারও সন্দেহ ছিল, আকাশ হয়তো পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন। পরে টাকা ভাগাভাগির সময় আকাশ হাজির হন।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, টাকা লুটের আগে আকাশ তাঁর পূর্বপরিচিত ইমন ওরফে মিলনের সঙ্গে ডাকাতির পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন। এতে যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব দেন এবং জনবল সংগ্রহের দায়িত্ব দেন তাঁকে। ইমন তাঁর পরিচিত সানোয়ার হোসেনকে বিষয়টি জানান। তাঁকে জনবল ও সিম সংগ্রহ এবং মোবাইল ফোন কেনার দায়িত্ব দেন। সানোয়ার আটটি নতুন সিম এবং মোবাইল ফোনসেট জোগাড় করেন। তাঁর নিজ জেলা সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা থেকে ৯ জনকে সংগ্রহ করেন। ঘটনার দু’দিন আগে সবাই ঢাকায় একত্রিত হন। পরিকল্পনাকারীরা তাঁদের ঢাকায় এনে নতুন কাপড় ও জুতা কিনে দেন।
গোয়েন্দারা জানান, আকাশ ও সোহেল রানা ব্যাংকের টাকা লুটের বিষয়টি ইমন ও সানোয়ারের কাছে গোপন রাখেন। ইমন ও সানোয়ারকে বলা হয়– তাঁরা কিছু অবৈধ হুন্ডির টাকা লুট করবেন। সেখানে প্রশাসনের লোক থাকবে। ঘটনার দিন সবাই কুর্মিটোলায় একত্রিত হন। মাইক্রোবাসে ওঠার পর শেষের দু’জন বুঝতে পারেন বড় কিছু ঘটতে যাচ্ছে। টাকা লুটের পর আকাশ মাইক্রোবাসে উঠতে না পারায় সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। অন্যরা ধারণা করেন, আকাশ হয়তো ধরা পড়েছে। ধরা পড়ার ভয়ে অন্যরা ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত মোবাইল ফোনগুলো ৩০০ ফিট এলাকায় ফেলে দেন এবং তাড়াহুড়ো করে ট্রাঙ্ক ভেঙে টাকা নেন। পরে ডাকাতরা ৩০০ ফিট এলাকার নির্জন একটি জায়গায় গিয়ে ব্যাগ এবং বস্তায় টাকা ভরে নিয়ে যার যার মতো করে পালিয়ে যান।
ডাকাতিতে অংশগ্রহণকারীদের সুনামগঞ্জ, সিলেট, নেত্রকোনা, গোপালগঞ্জ ও বরিশাল থেকে ভাড়া করে আনা হয়। ডাকাতির পর তাঁরা বেশ কিছু টাকা বিভিন্ন খাতে খরচ করেন। তাই এ ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত, গ্রেপ্তার ও লুণ্ঠিত টাকা উদ্ধার করতে কিছুটা বিলম্ব হয়। লুট করা টাকার একটি বড় অংশ মূল হোতা আকাশ ও সোহেল রানা নিয়ে পালিয়ে যান। তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান গোয়েন্দারা।
গত ৯ মার্চ রাজধানীর তুরাগ থানার দিয়াবাড়ী এলাকা থেকে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথে টাকা পৌঁছে দেওয়ার সময় মানি প্লান্ট লিংক লিমিটেডের গাড়ি থেকে চার ট্রাঙ্ক ভর্তি টাকা লুট করা হয়।
মন্তব্য করুন