- রাজধানী
- সিআইডির ১১ মামলার চার্জশিট মাত্র ২টিতে
সিআইডির ১১ মামলার চার্জশিট মাত্র ২টিতে

মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে ১১টি ই-কমার্সের বিরুদ্ধে পৃথক ১১টি মামলা করেছিল পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এসব মামলায় ৭৬৩ কোটি টাকার বেশি দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে এ পর্যন্ত দুটি মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা দেওয়া হয়েছে আদালতে। অন্য একটির অভিযোগপত্র চূড়ান্ত হয়ে গেছে। জমা দেওয়া হবে যে কোনো সময়। বাকি আটটির তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। এর মধ্যে প্রায় দেড় বছর আগের মামলাও রয়েছে।
করোনা মহামারির সময় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের তৎপরতা বেড়ে যায়। মানুষের কাছেও এগুলো জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে কিছু অসাধু ব্যক্তি প্রতারণা করেছেন। প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ও তাঁদের সহযোগীরা গ্রাহকদের টাকা পাচার করেছেন বিদেশে, কেউ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা সরিয়ে ব্যবহার করেছেন অন্য প্রতিষ্ঠানে।
প্রতারণার শিকার হয়ে গ্রাহকরা দেশের বিভিন্ন থানায় মামলা করেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও জড়িতদের বিরুদ্ধে। ২৪টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ১০৫। এর মধ্যে সিআইডি মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে ১১টি মামলা করে। এগুলোর তদন্তও শুরু করে সংস্থাটি।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সর্বশেষ গত ১২ ফেব্রুয়ারি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ২৪টিকেট লিমিটেডের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। এর আগে গত বছরের ২৬ মে এসপিসি ওয়ার্ল্ডের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। এতে এসপিসি ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আল আমিন, তাঁর স্ত্রী ও প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক সারমিন আক্তার এবং পরিচালক মো. ইসহাককে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযুক্তরা প্রতিষ্ঠানের হিসাব নম্বর থেকে গ্রাহকের ১ কোটি ১৭ লাখ টাকা স্থানান্তর করে আত্মসাৎ করেছেন। ২০২০ সালে নিজেদের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান দাবি করে যাত্রা শুরু করে এসপিসি ওয়ার্ল্ড। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে।
২৪টিকেট লিমিটেডের মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক, তাঁর বোন একই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান নাসরিন সুলতানা, পরিচালক প্রদ্যোত বরণ চৌধুরী, মিজানুর রহমান সোহেল ও আসাদুল ইসলামকে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযুক্তরা গ্রাহকদের ৪ কোটি ১৭ লাখ টাকা অবৈধভাবে স্থানান্তর করে অন্য ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন। বিমানের টিকিট বিক্রির নামে এসব টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, ই-অরেঞ্জ শপের মামলার তদন্তও শেষ হয়েছে। অভিযোগপত্র চূড়ান্ত। শিগগিরই আদালতে জমা দেওয়া হবে। ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে ২৩২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা পাচারের অভিযোগে ২০২১ সালের অক্টোবরে মানি লল্ডারিং প্রতিরোধ আইনে গুলশান থানায় মামলা করেছিল সিআইডি। মামলার পরপরই ই-অরেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক ঢাকার বনানী থানার সাবেক পুলিশ পরিদর্শক সোহেল রানা ভারতে পালিয়ে যান। পরবর্তী সময়ে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের অভিযোগে দেশটিতে গ্রেপ্তার হন তিনি। অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে গত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি তাঁকে সাজা দেওয়া হয়। পরে জামিন পেয়ে আত্মগোপনে চলে যান তিনি।
এ ছাড়া আটটি মামলা এখনও তদন্তাধীন আছে। সেগুলো হলো– ধামাকা, সিরাজগঞ্জ শপ ডটকম, আনন্দের বাজার, আকাশ নীল ডটকম, রিং আইডি বিডি, আলিফ ওয়ার্ল্ড মার্কেটিং, দালাল প্লাস ডটকম ও থলায় ডটকম।
ধামাকার বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে বনানী থানায় মামলা হয়। এতে ধামাকার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জসীম উদ্দিন চিশতীসহ ছয়জন এবং তাঁদের তিনটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ১১৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়। অপর পাঁচ অভিযুক্ত হলেন– জসীম উদ্দিনের স্ত্রী সাইদা রোকসানা খানম, তাঁদের চার ছেলে তাশফির রেদোয়ান চিশতী, নাজিম উদ্দীন আসিফ, মাশফিক রেদোয়ান চিশতী ও সাফওয়ান আহমেদ। তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অর্থ আত্মসাৎ করার জন্য জসীম উদ্দিন ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ধামাকা শপিং চালু করেন।
সিরাজগঞ্জ শপ ডটকমের বিরুদ্ধে ৪ কোটি ৯ লাখ টাকা, আনন্দের বাজারের বিরুদ্ধে ৩১৫ কোটি ৫৯ লাখ, আকাশ নীল ডটকমের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ৫৫ লাখ, রিং আইডি বিডির বিরুদ্ধে ৩৭ কোটি ৪৯ লাখ, আলিফ ওয়ার্ল্ড মার্কেটিংয়ের বিরুদ্ধে ৭৮ লাখ ৮৮ হাজার, দালাল প্লাস ডটকমের বিরুদ্ধে ৪১ কোটি ৭ লাখ এবং থলায় ডটকমের বিরুদ্ধে ৪ কোটি ৯৪ লাখ টাকা মানি লন্ডারিংয়ের কথা বলা হয়েছে।
সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের বিশেষ পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির সমকালকে বলেন, বাকি মামলাগুলোরও তদন্ত শেষ পর্যায়ে। সবকিছু গুছিয়ে আনা হয়েছে। প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার পর আদালতে জমা দেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন