সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কবিতার আঙ্গিকের বদল হয়। আর এই পরিবর্তনকে গ্রহণ করেই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও কালজয়ী কবিতার সৃষ্টি করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিভিন্ন দশকের কবিরা।

শনিবার সন্ধ্যায় ‘তিন দশকের কবিতায় অর্জন ও বিসর্জন’ নিয়ে ‘পরস্পর’ এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় কবিতা নিয়ে আলোচনা আড্ডার।  

রাজধানীর কাটাবনের পাঠক সমাবেশ কেন্দ্রে এই আড্ডায় আশির দশক, নব্বই দশক এবং শূন্য দশকের কবিতা নিয়ে আলোচনা করেন কবিরা। তুলে ধরেন নিজ নিজ সময়ের কবিতার বিভিন্ন দিক।

আলোচক হিসেবে অংশ নেন আশির দশকের কবি ফরিদ কবির, নব্বই দশকের কবি চঞ্চল আশরাফ এবং শূন্য দশকের কবি সোহেল হাসান গালিব। আয়োজন সঞ্চালনা করেন কুমার চক্রবর্তী। উপস্থাপনা করেন সেঁজুতি জাহান।

আলোচনায় ফরিদ কবির বলেন, আশির দশকের কবিতায় একটা ভাগ দেখা যায়। এই ভাগের মধ্য স্লোগানমুখর যে কবিতাগুলো ছিল, আবেগপ্রবণ যে কবিতাগুলো ছিল, যেসব কবিতাগুলো আমরা হাটে-মাঠে-ঘাটে পড়তে শুনেছি, সেই কবিতাগুলো কিন্তু এখনকার কবিরা লিখছেন না। আশির দশকের সময়টাতে যারা কবিতা লিখেছেন, যারা এই কবিতার বদলের বাঁকে বাঁকে ছিলেন, তাদের মধ্যে যে কবিতার বদল এসেছিল, এই বদলের হাওয়ায় পরবর্তী সময়ে প্রচলিত কবিতার যে স্রোত ছিল, সেটা নব্বই দশকে আস্তে আস্তে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যায়। 

চঞ্চল আশরাফ বলেন, নব্বই দশকের কবিতার একটা বড় সময় কেটেছে দ্বিধা, দ্বন্দ্ব, অস্পষ্টতা, দোদল্যমানতার ভেতর দিয়ে। এই দশকের কবিরা নিজেদের যখন বুঝতে পারলো, তখন কিন্তু দশকটা শেষ হয়ে গিয়েছে এবং ২০০০ সালের পরে বেশিরভাগ কবিই কিন্তু খণ্ড খণ্ড কবিতা লিখেছেন। দীর্ঘ কবিতা লিখেছে এমন কবি খুঁজে পাওয়াই মুশকিল। এছাড়া এই দশকের বেশকিছু কবির মধ্যে ছন্দ নিয়ে এক ধরনের অনীহা ছিল। তবে তারা শেষ পর্যন্ত দাঁড়াতে পারেনি। এটা বাস্তবতা।

সোহেল হাসান গালিব বলেন, নতুন যে কবিতাগুলো এসেছে, সেগুলোতে সাম্প্রতিক বিষয়গুলোকে মোকাবিলা করার একটা ব্যাপার দেখা যায় বিপুলভাবে। যেমন, আমরা রাজনৈতিক কবিতা থেকে অনেক দূরে সরে এসেছিলাম, সেগুলোকে আমরা নতুনভাবে বুঝতে চাইছি এবং কবিতায় নতুনভাবে চিত্রিত করতে চাইছি। আরেকটা ব্যাপার হলো, কবিতার মধ্যে যে স্বীকার্য বিষয়গুলো আমরা ধরে নিয়েছিলাম, যে-কবিতার মধ্যে কোনো বার্তা দেওয়া বা একটা বক্তব্য হাজির করা, এই জিনিসগুলো পূর্ব দশকে বর্জন করে এলেও আমাদের শূন্য দশকে এসে দেখা গেলো সেই ব্যাপারটা নতুন করে নতুনভাবে ফিরে এসেছে। অর্থাৎ কবিতার শুধু ভাষা বা অভিজ্ঞান নয়, চেতনাগত জায়গা থেকেও এই সময়ের কবিতাগুলো পাঠককে আক্রান্ত করতে চাইছে।

বক্তারা বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কবিতার আঙ্গিকের বদল হবে, শব্দ, ছন্দ, চিত্রকল্পের ব্যবহারে পরিবর্তন ঘটবে। কবিতার এই বাঁকবদলকে স্বাভাবিকভাবেই গ্রহণ করে এমন কিছু সৃষ্টি করতে হবে যা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও কালজয়ী হবে।

সন্ধ্যার এই আয়োজনে এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন সময়ের কবি, সাহিত্যিক, শিক্ষার্থী এবং সাহিত্য অনুরাগীরা।

বিষয় : কবিতায় অর্জন ও বিসর্জন কবিতা আড্ডা-আলোচনা

মন্তব্য করুন