
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের রাশিয়া সফরে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে বলে আশা করা হলেও শেষ পর্যন্ত তা ঘটেনি। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকের পর দুই নেতার যৌথ ঘোষণায় শান্তি আলোচনা অথবা যুদ্ধবিরতি নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো অঙ্গীকার করা হয়নি। তবে তাঁরা সংকট নিরসনের ‘দায়িত্বশীল সংলাপ’-এর ওপর জোর দিয়েছেন। মস্কো শান্তি আলোচনার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। খবর বিবিসি, আলজাজিরা ও এএফপির।
মঙ্গলবার ক্রেমলিনে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শেষে দুই নেতার যৌথ ঘোষণায় বলা হয়, চীন ও রাশিয়া একমত হয়েছে– পরমাণু যুদ্ধ কখনোই হওয়া উচিত নয়। এ ধরনের যুদ্ধে কেউ জয়ী হয় না। জিনপিং বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধে চীন নিরপেক্ষ থাকবে। তিনি সংলাপের তাগিদ দিয়েছেন।
বৈঠকের পর জিনপিং বলেছেন, তিনি রাশিয়ার সঙ্গে সমন্বয় ও সহযোগিতা জোরদার করতে চান। পুতিন বলেছেন, বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা মেটাতে প্রস্তুত মস্কো। বৈঠক শুরুর আগে ক্রেমলিনে জিনপিংকে লালগালিচা অভ্যর্থনা এবং গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। বৈঠকে জিনপিং বলেছেন, চীন ও রাশিয়া কৌশলগত অংশীদার এবং মহান প্রতিবেশী শক্তি। তিনি পুতিনকে চলতি বছরেই বেইজিং সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
পুতিন বলেছেন, ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে চলমান যুদ্ধ অবসানের ভিত্তি হতে পারে চীনের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনা। কিয়েভ ও পশ্চিমারা রাজি হলে সমাধান সম্ভব। জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে পুতিন আরও বলেছেন, তিনি ও চীনা প্রেসিডেন্ট একান্ত বৈঠকে বেইজিংয়ের শান্তি প্রস্তাব মনোযোগ দিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, চীনের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনার বেশ কয়েকটি দফা আমরা বিশ্বাস করি। চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। চীন ও রাশিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি অনেক ক্ষেত্রে খুব কাছাকাছি।
ইউক্রেন যুদ্ধের এই সময়ে চীন শান্তি প্রতিষ্ঠায় নিজেদের ভূমিকা উজ্জ্বল করার চেষ্টা করছে। রাশিয়ায় চীনা প্রেসিডেন্টের সফর মস্কোর সঙ্গে বেইজিংয়ের চিরঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে তাদের চ্যালেঞ্জকে সামনে নিয়ে এসেছে।
এর আগে জিনপিং ও পুতিন সোমবার চার ঘণ্টার বেশি সময় কথা বলেছেন। একসঙ্গে নৈশভোজ করেছেন এবং একে অপরকে ‘প্রিয় বন্ধু’ বলে সম্বোধন করে উষ্ণ প্রশংসাও করেছেন। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, সোমবার দুই নেতা ইউক্রেনে যুদ্ধের তীব্রতা কমানো নিয়ে আলোচনা করেন।
জিনপিংয়ের মস্কো সফরের মধ্যেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনার জন্য কিয়েভে পৌঁছেছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা। এটাকে চীনের পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সোমবার ভারত সফর করেন কিশিদা। সেখান থেকে পোল্যান্ড হয়ে তিনি হঠাৎ ইউক্রেনে যান। ট্রেনে সীমান্ত পেরিয়ে ইউক্রেনে পৌঁছেন তিনি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম জাপানের কোনো প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধ চলতে থাকা কোনো দেশ ভ্রমণ করলেন। সফরকালে তিনি সরাসরি ইউক্রেনকে জাপানের দৃঢ় সমর্থন এবং সংহতির বার্তা দেন। গত মাসে জাপান ইউক্রেনের জন্য ৫০০ কোটি ডলারেরও বেশি মানবিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। জিনপিংয়ের মস্কো সফরের মধ্যেই গতকাল জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তিনি সংলাপের জন্য চীনকে কিয়েভে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
এদিকে ইউক্রেনে ‘যুদ্ধাপরাধ বন্ধ করতে’ পুতিনকে চাপ দিতে জিনপিংয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ওয়াশিংটন। ইউক্রেন থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নিতে রাশিয়াকে আহ্বান জানাতে জিনপিংয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি।
মন্তব্য করুন