- রাজধানী
- যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশ করা বার্ষিক প্রতিবেদনটি আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি
যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশ করা বার্ষিক প্রতিবেদনটি আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি

ড. মিজানুর রহমান- ফাইল ছবি
মানবাধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশ করা বার্ষিক প্রতিবেদনটি ২০২২ সালের পরিস্থিতির ওপর হলেও বিস্ময়করভাবে তাতে বাংলাদেশের ২০১৮ সালের নির্বাচনের বিষয়টি টেনে আনা হয়েছে। বিষয়টি ২০১৮ বা ২০১৯ সালের প্রতিবেদনে প্রাসঙ্গিক হতে পারত। সে সময়ে বিষয়গুলো প্রকাশ না করে, প্রায় চার বছর পর আরেকটি জাতীয় নির্বাচনের কয়েক মাস আগে প্রকাশ করার বিষয়টি স্বভাবতই প্রশ্নের সৃষ্টি করে। অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিচার বিভাগের যোগ্যতা ও সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের বিচার বিভাগ নিয়ে এ ধরনের মন্তব্য তারা করতে পারে না। এ ধরনের মন্তব্য জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনের সম্পূর্ণ পরিপন্থি।
হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু নিয়ে প্রতিবেদনটিতে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২২ সালে হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ নিয়ে এই প্রতিবেদনে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত খবরে জানা যায়, সরকারের পক্ষ থেকে এই আইনটির আপত্তিকর ধারা সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মার্কিন এই প্রতিবেদনে গুম বিষয়ে বাংলাদেশের দুটি মানবাধিকার সংগঠনের বরাত দেওয়া হয়েছে, যাদের রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
এ দুটি সংগঠনের একটি ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের অভিযানে হতাহতের সংখ্যা নিয়ে এমন তথ্য প্রদান করেছে, যা তারা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়নি। একটি দায়িত্বশীল, জবাবদিহিমূলক ও গণতান্ত্রিক সরকারের কাছ থেকে আমরা আরও দায়িত্বশীল প্রতিবেদন প্রত্যাশা করি। এ রকম বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থবিবর্জিত নয়। এ ছাড়া সব রাষ্ট্রের মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিও এই রাষ্ট্রটির সমান মনোযোগ থাকে না। তা ছাড়া একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল এবং তা স্পষ্টতই জাতিসংঘ সনদের পরিপন্থি।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনের শ্রম অধিকার বিষয়ে উল্লিখিত ইস্যুতে সরকারের বিবেচনা করা ও যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মনে করি। এ বিষয়ে গত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে রচিত প্রবন্ধে আমি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। বাংলাদেশের শ্রমিকদের তুলনামূলক কম মজুরি দিয়ে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অতিরিক্ত মুনাফা লাভের পথ তৈরি করা দীর্ঘমেয়াদি জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থি।
লেখক: জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান।
মন্তব্য করুন