বলছি ময়না নামে এক লড়াকু নারীর গল্প। তিন সন্তানের মা। আড়াই বছর আগে স্ত্রী-সন্তানকে ফেলে চলে গেছে স্বামী। ছোট-ছোট সন্তানের ভরণপোষণ নিয়ে অথৈ সাগরে তখন। 

জীবন বাঁচানোর তাগিদে বেছে নিয়েছিলেন ভিক্ষাবৃত্তি। কিন্তু মানুষের কাছে হাত পাততে তার ভালো লাগতো না। সিদ্ধান্ত নেন অন্যের মুখাপেক্ষী থাকবেন না। কাজ করে সংসারের হাল ধরবেন।

কি কাজ করবেন- এই ভাবতে ভাবতে হাতে তুলে নেন রিকশা। গত ১৫-২০ দিন ধরে রাজধানীর কারওরান বাজার, ফার্মগেট, তেজগাঁও, সাতরাস্তা এলাকায় চালাচ্ছেন রিকশা। 

সকাল-সন্ধ্যা রিকশা চালাতে গিয়ে হচ্ছে নানা অভিজ্ঞতা। কেউ দিচ্ছেন উৎসাহ। কেউ বা শুনিয়ে দিচ্ছে কটু কথা। তবুও থেমে যেতে চান না সাহসী-সংগ্রামী ময়না। 

বৃহস্পতিবার বিকেলে তেজগাঁও শিল্প এলাকার শহীদ তাজউদ্দিন অ্যাভিনিউয়ে ময়নার সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের।

সমকালকে তিনি বলছিলেন, ‘জীবনের তাগিদে এই পেশায় এসেছি। প্রথমে ভাইয়ের কাছ থেকে রিকশা চালানো শিখেছি। এক মাস প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন রিকশা চালাচ্ছি। তবে নারী চালক হওয়ায় পুরুষ যাত্রী ওঠতে চান না। যাত্রীরা ভয় পান। তাদের ডেকে বলি, আমি চালাতে পারি।’

নারী চালক হিসেবে রাস্তায় রিকশা নিয়ে বের হওয়ায় পুরুষ রিকশাচালক বা অন্য পুরুষদের কাছ থেকে নানা ধরনের বাজে কথাও শুনতে হয় বলে অভিযোগ ময়নার।

তিনি বলেন, ‘অনেক পুরুষ রিকশাচালক আমাকে সহজভাবে নিতে পারেন না। কেউ কেউ বাজে কথা বলেন। আর নারী চালক হওয়ায় অনেক পুরুষ যাত্রী ভয়ে উঠতে চান না আমার রিকশায়। কারণ আমি চালাতে পারব কিনা তা তারা বিশ্বাস করতে পারেন না। যদি পুরুষ যাত্রীরা সহজভাবে বিষয়টা নিতেন বা আমি চালাতে পারি সেটা বিশ্বাস করতে পারতেন তাহলে আয় বেশি করতে পারতাম।’

কাকডাকা ভোরে সংসার সামলে প্রতিদিন সকালে যাত্রীদের গন্তব্যে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রাস্তায় বের হন ময়না। সন্ধ্যা পর্যন্ত চালান রিকশা। 

ময়না বলছিলেন, সব পুরুষই যে তাকে কুট কথা বলে, এ কাজে নিরুৎসাহিত করে তা কিন্তু নয়। অনেকে উৎসাহও দেয়।’ সবার সমর্থন পেলে বেশ আয় হতো বলে আক্ষেপ তাঁর।  

নিজের রোজগার নিয়ে বলেন, প্রতিদিন ৪০০-৫০০ টাকার মতো আয় হয়। তবে সব যাত্রী রিকশায় উঠলে আয় হয়তো ৭০০ টাকার মতো হতো।

সন্তান ও পরিবারের প্রতি দায়িত্বশীল ময়না বলেন, ‘আমার ছোট ছোট তিন সন্তান। ছেলে মাদ্রাসায় পড়ে। মেয়ে পড়ে এতিমখানায়। আমি চাকরি করতে পারব না বা অন্যের বাসায় কাজ করতে পারব না। তাই রিকশা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

স্বামীর কথাও বলেন ময়না। ‘মাঝে মাঝে ঢাকায় আসে। তবে সন্তানদের জন্য কোনো খরচ দেয় না। মাদকে আসক্ত।’ 

ময়নার বাবার বাড়ি নরসিংদীতে। বিয়ে হয় গাজীপুরে। বাবার কোনো জমি না থাকায় জীবনের তাগিদে রাজধানীতে আঁকড়ে রয়েছেন। মাকে নিয়ে থাকেন। তার মা-ও ভাঙারি কুড়িয়ে মেয়ের সংসারে বাড়তি আয়ের জোগান দেওয়ার চেষ্টা করেন।