- রাজধানী
- রোজা এলে যানজট বাড়ে, সঙ্গে বাড়ে দুর্ভোগও
রোজা এলে যানজট বাড়ে, সঙ্গে বাড়ে দুর্ভোগও

রোজার মাস এলেই যানজট পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। কয়েক দিন ধরে রাজধানীর সড়কে এমন স্থবির চিত্র পরিস্থিতি আরও খারাপের ইঙ্গিতই দিচ্ছে যেন। বৃহস্পতিবার তেজগাঁও সাতরাস্তা মোড়ে -মাহবুব হোসেন নবীন
বছরজুড়েই ঢাকা যানজটের নগরী হিসেবে পরিচিত। তবে প্রতিবছর রোজার শুরুতে নগরীতে যানজট অসহনীয় হয়ে ওঠে। রমজানের আগের দিন ও সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবারও রাজধানীতে ছিল তীব্র যানজট। ফার্মগেট, শাহবাগ, বিমানবন্দর সড়ক, মগবাজার, মহাখালী, মিরপুর, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় যানবাহন কার্যত স্থবির হয়ে ছিল। এতে দুর্ভোগে পড়েন বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীরা। কেউ কেউ ফ্লাইট ধরতে পারেননি। অনেককেই যানবাহন থেকে নেমে হেঁটে যেতে দেখা যায়।
ট্রাফিক পুলিশ সূত্র জানায়, সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস হওয়ায় বৃহস্পতিবার এমনিতেই রাস্তায় যানবাহনের চাপ থাকে। সেই সঙ্গে রমজান মাস শুরুর আগের দিনে প্রয়োজনীয় কাজ সারতে অনেকেই বের হয়েছিলেন। এ ছাড়া ভিভিআইপি যাতায়াতের কারণে কিছু সময় সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এসব কারণে দেখা দিয়েছিল তীব্র যানজট।
প্রায় প্রতিবছর রমজানের শুরু থেকেই প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়া ঢাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। এ ছাড়া সরকার অফিসের সময়সূচি নতুনভাবে নির্ধারণ করে। এবার রমজানে সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সরকারি অফিস চলবে। অফিস থেকে অনেকেই বাসায় ফিরে ইফতার করতে চান। আবার সকালে কর্মক্ষেত্রের উদ্দেশে হাজারো মানুষ রওনা হন। এতে দিনের শুরু ও শেষে তীব্র যানজট দেখা দেয়। এর পাশাপাশি রমজানে ব্যবসায়িক কাজে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ঢাকায় মানুষের আগমন বেশি হয়।
রমজানে যানজট পরিস্থিতি সহনীয় রাখতে পাঁচটি বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। এর মধ্যে রয়েছে– অফিসের সময়সূচি বদল, বড় ইফতার মাহফিল, বিপণিবিতান ঘিরে ভিড় ও সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি। ট্রাফিক পুলিশ বলছে, মানুষের দুর্ভোগ কমাতে ট্রাফিক বিভাগের সব সদস্য রাস্তায় থাকবেন। তাঁরা রাজপথেই ইফতার করবেন। তাঁদের সহায়তার জন্য বাড়তি পুলিশও মোতায়েন করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে যানবাহন চলাচল, যাত্রী ওঠানামাসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ১৫টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ঢাকা কোনোভাবে আদর্শ শহর নয়। রাস্তায় নামলেই মনে হয়, সবাই যুদ্ধ করছে। রমজান এলেই বেশি বেশি কেনাকাটা ও দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় নামেন ব্যবসায়ীরা।
ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মুনিবুর রহমান বলেন, রমজানের প্রথম সপ্তাহের পর থেকেই বিপণিবিতানগুলোয় ভিড় বাড়তে থাকবে। এটাও যানজটের বড় কারণ। আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে, মানুষ যেন নির্বিঘ্নে ঘরে ফিরে স্বজনের সঙ্গে ইফতার করতে পারেন। এমন সব কারণ বিবেচনায় নিয়ে এবারের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সাজানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকায় বসবাসকারীর তুলনায় সড়ক কম। আবার সেই সড়কের তুলনায় যানবাহন কয়েক গুণ বেশি। এ কারণে সারাবছরই ঢাকার রাস্তায় যানজট লেগেই থাকে। রমজানে তা অসহনীয় রূপ ধারণ করে। কাছাকাছি সময়ে সব অফিস-আদালত ছুটি হয়, সবাই একসঙ্গে রাস্তায় নামেন। ফলে যানজট অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে। প্রতিবার মানুষকে অশেষ দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অনেকেই পথে ইফতার করতে বাধ্য হন। নানা রকম ব্যবস্থার পরও এবার যে সেই চিত্র পুরোপুরি পাল্টে যাবে– এমনটা ট্রাফিক কর্মকর্তারাও আশা করছেন না। বরং তাঁরা বলছেন, পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করবেন।
ট্রাফিকের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, অফিসের বদলে যাওয়া সময়সূচি অনুযায়ী নির্দিষ্ট এলাকাগুলোয় বাড়তি ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করা হবে। সেই সঙ্গে রমজানের প্রথম কয়েক দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে। এ কারণে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের যাতায়াতের সময়টিতেও বিশেষ নজর থাকবে পুলিশের। ছুটির দিনে মার্কেটগুলো ঘিরে যানজটের সৃষ্টি হয়। এ জন্য সেদিন ফোকাস থাকবে মার্কেটকেন্দ্রিক সড়কগুলোয়। এ ছাড়া সারাবছর যানজটের একটি বড় কারণ সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি। তাই সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে বলা হয়েছে, খুব জরুরি না হলে তারা যেন রমজানে খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ রাখে।
ব্যাংকপাড়া হিসেবে পরিচিত মতিঝিল এলাকায় অফিস ছুটির সময় সড়কে যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়। এই এলাকা ঘিরে তাই রয়েছে বিশেষ পরিকল্পনা। ট্রাফিকের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ মইনুল হাসান বলেন, বাড়তি পুলিশ তো থাকবেই, সেই সঙ্গে কমিউনিটি ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরাও কাজ করবেন। কুইক রেসপন্স টিম প্রস্তুত থাকবে। সড়কে কোনো কারণে বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি হলে তারা সামাল দেবে। আর ঈদের এক সপ্তাহ আগে যেহেতু ঘরমুখো মানুষের চাপ বেড়ে যায়, তাই তখন আলাদা ব্যবস্থা থাকবে।
অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে এবার রমজানে যানজট সহনীয় রাখতে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা চালাবেন বলে জানালেন ট্রাফিকের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার সাহেদ আল মাসুদ। তিনি বলেন, ট্রাফিকের অতিরিক্ত কমিশনার থেকে শুরু করে সব জনবল ইফতারের আগে সড়কে থেকে যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা বজায় রাখার চেষ্টা করবেন।
রমজানের যানজট পরিস্থিতি মোকাবিলাসহ অন্যান্য বিষয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে সম্প্রতি দু’দিন বৈঠক করেছেন ডিএমপি কমিশনার। উত্তরা ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার নাবিদ কামাল শৈবাল জানান, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা ও পরিকল্পনা অনুযায়ী রমজানের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সাজানো হয়েছে।
ট্রাফিকের ১৫ নির্দেশনা: রমজান উপলক্ষে ১৫টি নির্দেশনা দিয়েছে মহানগর ট্রাফিক পুলিশ। এর মধ্যে দূরপাল্লার ও আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের বাইরে যাত্রী ওঠানামা এবং প্রধান সড়কে বাস দাঁড়ানোর ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত যাত্রী ও মালপত্র বহন থেকে বিরত থাকতেও বলেছে পুলিশ। রুট পারমিট বা অনুমোদনহীন কোনো রুটে বাস চালানো যাবে না। পাশাপাশি ঢাকার ভেতরে অল্প দূরত্বে যাত্রীদের হেঁটে চলার পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ।
মন্তব্য করুন