- রাজধানী
- ছিন্নমূল মানুষের জন্য ফ্রি সেহরি-ইফতার
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন
ছিন্নমূল মানুষের জন্য ফ্রি সেহরি-ইফতার

রমজানে ছিন্নমূল মানুষের মধ্যে সেহরি ও ইফতারির বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। রোববার কারওয়ান বাজারে - সমকাল
ঘড়ির কাঁটায় তখন বিকেল ৫টা। রাজধানীর কারওয়ান বাজার মোড়ের কাছাকাছি একটি ঘরের সামনে কয়েকশ ছিন্নমূল মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। ঘরের মধ্যে প্রবেশ করতেই দেখা গেল বেশ কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী ইফতারির প্লেট সাজাচ্ছেন। সারাদিন রোজা রাখা ছিন্নমূল মানুষের মধ্যে বিনামূল্যে ইফতার বিতরণ করতে এ আয়োজন।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের ‘সবাই মিলে বাংলাদেশ’ প্রকল্পের আওতায় রমজান মাসজুড়ে এসব মানুষের মধ্যে ইফতার বিতরণ করা হবে।
রাজধানীতে ঘুরে ঘুরে চকলেট বিক্রি করে ১০ বছর বয়সী সাইফুল ইসলাম। তার বাড়ি পটুয়াখালীতে। ছোট থাকতেই বাবা মারা যান তার। মা অন্যত্র বিয়ে করায় মায়ের সঙ্গে থাকে না সাইফুল। ইট-কাঠের এই শহরে নিজের বলতে কেউ নেই তার। অন্য সময়ে কিছুটা বেচাকেনা হলেও রমজানে তেমন আয় নেই তার। সেও এসেছে ইফতার করতে। সাইফুল বলে, বেচাকেনা এখন কম। কষ্ট করে কোনো রকমে দিন কাটাচ্ছি। গতবার রোজায় আমি ঢাকায় ছিলাম। তখনও এখানে খাবার খেয়েছি। এখানে ভালো খাবার দেওয়া হয়।
রোববার সেই গলিতে দেখা যায়, এক পাশে আঁটোসাঁটো হয়ে বসেছিলেন ষাটোর্ধ্ব জোবেদা বেগম। তাঁরও ঢাকায় কেউ নেই। থাকেন তেজগাঁও এলাকায়। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহে। সেখানে তাঁর একমাত্র ছেলের অভাবের সংসার। ছেলের কাঁধের বোঝা হতে চান না বলে চলে এসেছেন ঢাকায়। অসুস্থ থাকার কারণে কোথাও কাজ করতে পারেন না তিনি। মানুষের সহায়তায় কোনো রকমে দিন চলে তাঁর। তিনি বলেন, এখানে তিনি গতবারও এসেছিলেন। এ বছরও ইফতার করার জন্য এসেছেন। এখানকার খাবারের মান অনেক ভালো। এভাবে ভালোবেসে কেউ তাঁকে খাবার দেয় না। তাই রোজা রেখে কষ্ট করে তিনি এখানে প্রতিদিন আসেন।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রতি বছরের মতো এ বছরও সিলেট বিভাগ বাদে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সারাদেশে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন রমজানে ছিন্নমূল মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ করছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার আরও বড় পরিসরে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
এ বছর সারাদেশের প্রায় তিন লাখ মানুষের মধ্যে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হবে। প্রতিদিন ৯ হাজার মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। রাস্তার ছিন্নমূল ও গরিব-দুঃখী মানুষের মধ্যে ইফতার ও সেহরি বিতরণ করা হচ্ছে। এসব মানুষের সঙ্গে প্রতিদিন দেশের গণ্যমান্য ব্যক্তিও ইফতার করবেন।
ঢাকাতে প্রতিদিন ৫০০ পরিবারের জন্য সেহরির আয়োজন করা হয়। সেহরিতে ভাতের সঙ্গে গরুর মাংস, মুরগির মাংস অথবা মাছ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ইফতারে ফলফলাদিও থাকে। তবে ভাজাপোড়া অনেক খাবারই ইফতারের মেন্যুতে থাকে না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতি বছর ঈদকে কেন্দ্র করে ফাউন্ডেশনের কর্মসূচি থাকে। তবে এবার রমজানে মাসব্যাপী ‘হ্যাপিনেস সুপার স্টোর’ নামে একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে মানুষকে নামমাত্র মূল্যে পণ্য নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। পল্লবীতে তাঁদের এ স্টোর। এই স্টোরের মাধ্যমে একটি পরিবার ১০ টাকায় ৫০০ টাকার পণ্য পাবে। ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবকরা বস্তিগুলোতে গিয়ে পরিবারের মধ্যে টোকেন বিতরণ করছেন। এটি দেখিয়ে এসব গরিব-অসহায় পরিবার পণ্য কিনতে পারবে। ঈদের সময় এই স্টোরে ঈদের কাপড়সহ সেমাই-চিনিও পাওয়া যাবে।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের হেড অব কমিউনিকেশন সালমান খান ইয়াসিন সমকালকে বলেন, সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতার ভাগাভাগির মাধ্যমে আমরা পরস্পরের কাছাকাছি আসি। আমাদের এই উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা একটা বার্তাই দিতে চাই, সবাই যেন তাঁর আশপাশের মানুষকে অভুক্ত রেখে নিজে না খান। তাঁরা যেন প্রতিবেশীর সঙ্গে খাবার ভাগাভাগি করে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হন।
রোববার এসব মানুষের সঙ্গে ইফতার করতে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম তারেক। তিনি এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং বিত্তবানদের এসব গরিব-দুঃখী মানুষের সহযোগিতায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
মন্তব্য করুন