
সবুজবাগের ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারে ইফতারি নিচ্ছেন নিম্ন আয়ের লোকজন সমকাল
বিকেল থেকেই রাজধানীর সবুজবাগের ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারের মূল ফটক ঠেলে ভেতরে জড়ো হয়েছেন অনেক রোজাদার। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ সংখ্যা আরও বেড়ে যায়। পরে কয়েকজন বৌদ্ধ ভিক্ষু এসব রোজাদারের হাতে তুলে দেন ইফতারির প্যাকেট।
পবিত্র রমজান মাসজুড়ে এখানে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ইফতারের আয়োজন করে বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ। ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে ইফতারের এ উপহার গ্রহণ করেন মুসলমানরা। মঙ্গলবার বিকেলে এ বিহারে গিয়ে দেখা যায়, ইফতারি বিতরণে উপস্থিত হয়েছেন বৌদ্ধ কৃষ্টি সংঘের সিনিয়র সহসভাপতি পুলিশের সাবেক ডিআইজি পিআর বড়ুয়া, সহসভাপতি সরকারের সাবেক যুগ্ম সচিব রনজিত কুমার বড়ুয়া, সহসভাপতি স্বরূপানন্দ ভিক্ষু, বিউটি বিল্ডার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাইম শেখ প্রমুখ।
২০০৮ সালে এ আয়োজন শুরু করেন বৌদ্ধ কৃষ্টি সংঘের সভাপতি শুভানন্দ মহাথের। ২০২০ সালে তিনি মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পরও এ আয়োজন অব্যাহত রেখেছেন তাঁর উত্তরসূরিরা। পথচারী, হকার, ভিক্ষুকসহ সবার জন্যই উন্মুক্ত এ ইফতারসামগ্রী।
বৌদ্ধ কৃষ্টি সংঘের নেতা স্বরূপানন্দ ভিক্ষু সমকালকে বলেন, ‘সমাজ এবং মানবতার সেবার জন্য আমাদের এই আয়োজন। আমরা বুড্ডিস্ট; বুদ্ধের আদর্শ মেনে চলি। আর সে আদর্শ মেনেই সবার প্রতি সহানুভূতি, সহমর্মিতার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে আমাদের এই আয়োজন।’
প্রতিদিন ১৫০ জনকে ইফতারি দেওয়া হয় বলে জানান তিনি। কয়েক দিন পরে আরও বাড়ানো হবে। এখনও অনেকে ঠিকমতো জানেন না। তাই মানুষের সংখ্যা বাড়লে ইফতারির পরিমাণও বাড়ানো হবে।
সংগঠনটির কর্মকর্তাদের অর্থে ইফতারের আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর চিত্তরঞ্জন দাসও এ আয়োজনে সহায়তা করেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
ইফতারি নিতে এসেছিলেন বাসাবোর জরিনা বেগম (৬০)। তাঁর স্বামী বেঁচে নেই, থাকেন মেয়ের সঙ্গে। এ বছরও দ্বিতীয় দিন থেকে ইফতারি নিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ধর্মই সমান। ধর্ম মানুষের পাশে থাকতে বলেছে।’ ইফতারি নিতে আসা বৃদ্ধা সখিনা বলেন, ‘আমরা সবাই মানুষ। কে কোন ধর্মের, তার কোনো দরকার নেই। কেউ ছোট না, কেউ বড় না।’
প্রতি বছর এখানে ইফতারি নিতে আসেন মমতাজ বেগম নামে এক নারী। তিনি বলেন, ‘আমি যখন প্রথম ঢাকায় আইছি, তখন পোলাপান নিয়া এই মন্দিরের ভাত খাইয়া দিন কাটাইছি। হেরা আমারে প্রতিদিন খাবার দিত। সেই খাবার খাইয়াই পোলাপান নিয়া বাঁচছি।’ ইফতারি নিতে জড়ো হন অনেক অমুসলিমও। তাঁদেরই একজন নীল চন্দ্র দাস। তিনি বলেন, ‘আমি মুসলমান না। কিন্তু প্রতি বছরই ইফতারি নিতে আসি।’
বজলুর রহমান নামে ইফতারি নিতে আসা এক ব্যক্তি বলেন, ‘আগে রেলওয়েতে কাজ করতাম। এখন শারীরিক অসুস্থতার কারণে আর কাজ করতে পারি না। আর্থিক অবস্থাও খুব একটা সুবিধার না। এই ইফতারি পেয়ে উপকার হচ্ছে আমাদের।’
মন্তব্য করুন