- রাজধানী
- কিশোর অপরাধ রোধে প্রয়োজন শিশু আইনের সংস্কার : ডিএমপি কমিশনার
কিশোর অপরাধ রোধে প্রয়োজন শিশু আইনের সংস্কার : ডিএমপি কমিশনার

চ্যাম্পিয়ন দলের সঙ্গে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। ছবি: সংগৃহীত
কিশোর অপরাধ রোধে শিশু আইনের সংস্কার প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
তিনি বলেছেন, প্রচলিত শিশু আইনে কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ জটিল। বর্তমান আইন অনুযায়ী কিশোর অপরাধীদের সংশোধন কেন্দ্রে পাঠানো হলেও তারা কতখানি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে সেটি প্রশ্ন সাপেক্ষ। কিশোর অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে হলে আইনের সংস্কার প্রয়োজন।
আজ শনিবার বাংলাদেশ চলচিত্র উন্নয়ন করপরেশনে কিশোর অপরাধ বৃদ্ধির কারণ নিয়ে আয়োজিত এক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে ‘ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’। সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে কিশোর অপরাধীরা আশকারা পেয়ে থাকে। রাজনৈতিক সদিচ্ছাই কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে কোনো রাজনৈতিক চাপ নেই।
তিনি বলেন, জুনিয়র-সিনিয়র বিরোধ, হিরোইজম, প্রযুক্তির অপব্যবহার, পারিবারিক বন্ধনের শিথিলতা, ত্রুটিপূর্ণ সামাজিকীকরণে কিশোর অপরাধের মাত্রা বাড়ছে। ঢাকা শহরে ৮০টি কিশোর গ্যাং রয়েছে, যাদের সদস্য সংখ্যা ৩৩৯ জন। ২০১০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত রাজধানীতে কিশোর অপরাধ সংশ্লিষ্ট ৪৬টি মামলা হয়েছে। যার মধ্যে একটি মামলার বিচার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশ কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। এক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করতে হলে অভিভাবকসহ সমাজের সব অংশীজনকে সম্পৃক্ত করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে জনাব হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, তথ্য প্রযুক্তি অপব্যবহার সমাজে অপরাধ প্রবণতা বাড়িয়ে তুলছে। বিতর্কিত অ্যাপ টিকটকসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তারকা বানিয়ে আর্থিক প্রলোভন দেখিয়ে নিম্নআয়ের পরিবারের মেয়েদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ফাঁদে ফেলছে এসব অপরাধীরা। এমন কি সুকৌশলে এসব কিশোরী মেয়েদের ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করা হচ্ছে।
‘বিশেষ করে টিকটক, লাইকি, ইমু, ফেসবুক, মাইস্পেস, হাইফাইভ, বাদু ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার কিশোর-তরুণদের বিপথগামী করে তুলছে। তৈরি হচ্ছে টিকটক হৃদয়, অপু, সজীব, নয়ন বন্ড, সুজন ফাইটারের মতো অপরাধীরা।’
তিনি আরও বলেন, কিশোর তরুণদের জন্য বর্তমানে নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে ওয়েব সিরিজ। কিছু কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্মে তুমুল অশ্লীলতা, নোংরা সংলাপ, উদ্ভট গল্প দিয়ে ওয়েব সিরিজ প্রদর্শিত হচ্ছে। নির্লজ্জতায় ভরা এসব ওয়েব সিরিজগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণে সহজেই কিশোর-কিশোরীরা আসক্ত করে ফেলছে। হিন্দির পাশাপাশি বাংলাও নোংরা এসব ওয়েব সিরিজগুলো নেট দুনিয়ায় সমালোচনার ঝড় তুলেছে।
অনুষ্ঠানে কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান ১০ দফা সুপারিশ করেন।
‘তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহারের কারণেই কিশোর অপরাধ বাড়ছে’ শীর্ষক ছায়া সংসদে সামসুল হক খান স্কুলকে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হয় নওগাঁর মান্দা থানা আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক খন্দকার ফারজানা রহমান, ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক মোরছালীন বাবলা, সাংবাদিক অনিমেষ কর, সাংবাদিক দিপু সিকদার প্রমুখ। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি ও সনদপত্র দেওয়া হয়।
মন্তব্য করুন