- রাজধানী
- সমঝোতার পর আর বিচার চান না বাদী
চট্টগ্রামে অবহেলায় শিশু মৃত্যু
সমঝোতার পর আর বিচার চান না বাদী

অবহেলায় ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগাংয়ে (ইউএসটিসি) শিশুর মৃত্যু ও রোগীর মা-বাবাকে মারধর করার অভিযোগে চট্টগ্রামের খুলশী থানায় একটি মামলা হয়। এক বছরের মধ্যেই খোদ শিশুটির বাবা রাজীব চক্রবর্তী মামলা তুলে নিতে আদা-জল খেয়ে নেমেছেন। লাখ টাকায় সমঝোতা হওয়ার পর এখন বিচারই চান না বাদী রাজীব। দায়ের করা মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য তিনি আবেদন করলেও আদালত তা ফিরিয়ে দিয়েছেন।
এদিকে শিশু মৃত্যুর চাঞ্চল্যকর মামলার তদন্ত করে পুলিশ পাঁচ চিকিৎসককে শুধু মারধরের ধারায় অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। তবে মামলার এজাহারে অবহেলায় শিশু মৃত্যুর ধারা থাকলেও অভিযোগপত্রে এর কোনো ব্যাখ্যা তুলে ধরা হয়নি। কৌশলে শিশু মৃত্যুর অভিযোগ এড়িয়ে যান তদন্ত কর্মকর্তা। ফলে শুধু মারধরের ধারায় অভিযোগপত্র নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
ওই মামলায় অভিযুক্ত ইউএসটিসির ইন্টার্ন চিকিৎসকরা হলেন– শওকত হোসেন, মিজবাউল হক, মো. সাব্বির, এস এম নাহিদ হাসান ও আবদুল্লাহ আল মামুন রিজভী। সব আসামিই পলাতক। তাঁদের বিরুদ্ধে জারি হয়েছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা।
মামলার বাদী রাজীব চক্রবর্তী সমকালকে বলেন, ‘অবহেলায় আমার ছেলে মারা গেছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রতিবাদ করায় আমাকে ডাক্তাররা মারধরও করেছেন। মামলা করার পর থেকেই ওই ডাক্তাররা প্রভাবশালী ব্যক্তি ও এলাকার চেয়ারম্যানদের নিয়ে এটি সমঝোতা করার জন্য বারবার চাপ দিতে থাকেন। পরে ডাক্তাররা স্ট্যাম্প দিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন। আমার চিকিৎসার খরচ বাবদ এক লাখ টাকা দিয়েছেন। তারপর মামলাটি প্রত্যাহার করার জন্য আদালতে আবেদন করি। ৫ এপ্রিল আবেদন জমা দিলেও আদালত তা গ্রহণ না করে ফেরত দিয়েছেন। আগামী ৭ মে পরবর্তী শুনানিতে ফের মামলা প্রত্যাহারের আবেদন জমা দেব।’
চট্টগ্রাম সাবেক মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট ফখরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, অবহেলায় শিশু মৃত্যুর অভিযোগটি এ মামলার মূল অভিযোগ। অভিযোগপত্রে শিশুটি অবহেলাজনিত কারণে মারা গেল, না স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে এর ব্যাখ্যা সুনির্দিষ্টভাবে তুলে ধরতে হবে পুলিশকে। এ অভিযোগের কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা অভিযোগপত্রে না থাকা মানে তদন্ত সঠিক পথে ছিল না। এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক পিপি বলেন, ফৌজদারি মামলা বাদী চাইলেও প্রত্যাহার করার সুযোগ
আইনে নেই।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খুলশী থানার এসআই খাজা এনাম এলাহী বলেন, তদন্ত করে যা পেয়েছি তা অভিযোগপত্রে তুলে ধরেছি। ঊর্ধ্বতনদের অনুমতি নিয়ে অভিযোগপত্র আদালতে জমা দিয়েছি। এ তদন্তে সন্তুষ্ট না হলে বাদী পুনর্তদন্ত চেয়ে নারাজি দিতে পারেন। অবহেলায় শিশু মৃত্যুর অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে বিষয়টি নিয়ে জবাব না দিয়ে এড়িয়ে যান এসআই খাজা এনাম।
গত বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি বিকেলে দুই মাস ২৬ দিনের ছেলে অনুরাজ চক্রবর্তী হঠাৎ অসুস্থতাবোধ করলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে ওইদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে ওই শিশুকে ইউএসটিসি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাকে নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (এনআইসিইউ) রাখা হয়। এনআইসিইউতে দু’দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ওই শিশু সুস্থ হয়ে ওঠে। ২৪ ফেব্রুয়ারি কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে সাধারণ বেডে নিয়ে আসেন। তবে ওই দিন রাতে আবার শিশুর শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। ভুক্তভোগী শিশুর মা বিষয়টি ওয়ার্ডের চিকিৎসক ও নার্সকে জানান। চিকিৎসক তাদের কথায় কোনো সাড়া না দিয়ে গল্পগুজব করতে থাকেন। শিশুর অবস্থা আরও আশঙ্কাজনক হয়ে পড়ে। তার বাবা অনুরোধ করতে থাকেন শিশুকে আবার এনআইসিইউতে ভর্তির জন্য। একপর্যায়ে চিকিৎসকরা ক্ষিপ্ত হয়ে উল্টো রোগীর স্বজনকে মারধর করেন। মারধরের পর শিশুর মৃত্যু হয়েছে জানিয়ে চিকিৎসকরা দ্রুত সটকে পড়েন।
স্বজনরা এ ঘটনা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করে জানান। ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ ঘটনায় ২৫ ফেব্রুয়ারি শিশুটির বাবা রাজীব চক্রবর্তী বাদী হয়ে মামলা করেন। গত ৫ এপ্রিল চট্টগ্রাম ম্যাজিস্ট্রেট আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। ওই দিন বাদী মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করলে আদালত তা ফিরিয়ে দেন।
মন্তব্য করুন