ঢিল থেকে রক্ষা পেল না মেট্রোরেলের ট্রেনও। রেলওয়ের ট্রেন পাথরে আক্রান্ত হচ্ছে প্রায় প্রতিদিন। হতাহত হচ্ছেন যাত্রী ও ট্রেন পরিচালনায় সংশ্লিষ্টরা। খোলা প্রান্তর, জনপদ দিয়ে চলা ট্রেনে পাথর ছুড়া বন্ধ করা যাচ্ছে না পাহারা বসিয়েও। এবার মাটি থেকে প্রায় ৪০ ফুট উপরের উড়াল রেলপথে চলা মেট্রোরেলের ট্রেনেও ঢিল ছুড়েছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলা হয়েছে। কে বা কারা ঢিল ছুড়েছে- তা শনাক্তে তদন্তে নেমেছে পুলিশ।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে–গত রোববার আগারগাঁও থেকে উত্তরার দিকে মেট্রোরেল ছেড়ে যায়। বেলা ১১টা ৫মিনিটে ট্রেনটি কাজীপাড়া স্টেশনে ঢোকার মুখে পূর্ব কাজীপাড়ার কোনো ভবন থেকে কে বা কারা ঢিল ছুঁড়ে। 

পুলিশ জানিয়েছে, মেট্রোরেল আইনের ৩৫ এবং ৪৩ ধারায় মামলা হয়েছে। ৩৫ ধারায় সর্বোচ্চ সাজা পাঁচ বছরের জেল অথবা ৫০ লাখ টাকা জরিমানা। ৪৩ ধারায়ও একই সাজা। 

মামলার বাদী দিয়াবাড়ী-কমলাপুর মেট্রোরেল পথের (এমআরটি-৬) সহকারী ব্যবস্থাপক সামিউল কাদির। তিনি সমকালকে বলেন, ঢিলে ট্রেনের বগির জানালার কাঁচ ভেঙেছে। ট্রেনের ক্ষয়ক্ষতি ও যাত্রীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার উদ্দেশ্যে ঢিল নিক্ষেপ করা হয়েছে। কাঁচ ভাঙায় প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

এমআরটি-৬ এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক (আরএস) এ.বি.এম. আরিফুর রহমান সমকালকে জানিয়েছেন, জানালার কাঁচটি মেরামত করা হয়েছে। যাত্রী সেবা অব্যাহত রাখতে কাঁচ লেমিনেটিং করা হয়েছে। পরবর্তীসময়ে কাঁচ বদল করা হবে। জাপান থেকে আনার প্রয়োজন নেই। দেশেই মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের কাছে স্পেয়ার জানালার কাঁচ রয়েছে।  

কাফরুল থানার ওসি হাফিজুর রহমান সমকালকে বলেন, ধারণা করছেন স্টেশনে আশপাশের বহুতল ভবন থেকে ঢিল ছোঁড়া হয়েছে। তদন্ত শুরু হয়েছে। কে বা কারা ঢিল ছুড়েছে তা শনাক্তে ঘটনাস্থলের পাশের ভবনের বাসিন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। 

মেট্রোরেলের কাজীপাড়া স্টেশনের আশপাশে ১৫-১৬টি বহুতল আবাসিক ভবন রয়েছে। ঘটনার আগে-পরে এসব ভবনে কারা যাতায়াত করেছে তা অনুসন্ধান করা হচ্ছে। ঘটনাস্থলে সিসি ক্যামেরা নেই। তাই কোন ভবন থেকে ঢিল ছোঁড়া হয়েছে তা তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। ঢিলটি ছোট আকৃতির হতে পারে, ট্রেনের জানালার কাঁচে আঘাতের চিহ্ন দেখে এমনই ধারণা পুলিশের।

এদিকে মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৭ জুন দিন ঠিক করেছেন আদালত। মঙ্গলবার ঢাকা মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শান্ত ইসলাম মল্লিক মামলার এজাহার গ্রহণ করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য এ দিন ঠিক করেন।

থার্টি ফাস্ট নাইটে পোড়ানো ফানুস মেট্রোরেলের বৈদ্যুতিক তারে আটকে চলতি বছরের প্রথম দিনে ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হয়। আশপাশের ভবনের ছাদে শুকাতে দেওয়া লুঙ্গি উড়ে তারে আটকেও ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়েছিল একবার। এবার ঘটল ঢিলের ঘটনা। যাত্রীদের ভাষ্য, দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। যেন আর কেউ এ ধরনের অপরাধ করতে সাহস না পায়।