রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার কলিমহর ইউনিয়নের হোসেনডাঙ্গা এলাকায় স্কুলশিক্ষক মিজানুর রহমান মকু হত্যাকাণ্ডের পর থেকে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। গত রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাড়ি ফেরার পথে মিজানুর রহমানকে মাথায় গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় মঙ্গলবার নিহতের স্ত্রী শাহানারা বেগম পাংশা থানায় মামলা করেছেন। 

পরে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানিয়েছেন রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার এমএম শাকিলুজ্জামান। তবে, পাংশা থানার ওসি মাসুদুর রহমান গ্রেপ্তারের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

এদিকে মিজানুর হত্যাকাণ্ড নিয়ে ক্ষুব্ধ উপজেলার বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক। আগামীকাল বুধবারের মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তার করা না হলে উপজেলার সব স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে মানববন্ধন করে আলটিমেটাম দিয়েছেন তারা।

মিজানুর রহমান মকু কলিমহর ইউনিয়নের বসা কুষ্টিয়া গ্রামের ইব্রাহীম মণ্ডলের ছেলে। তিনি পাংশা পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। পাশাপাশি হোসেনডাঙ্গা বাজারে সার, কীটনাশক ও ভুসিমালের ব্যবসা করতেন। 

এলাকাবাসী জানান, রোববার হোসেনডাঙ্গা বাজারে মিজানুর রহমানের ভুসিমালের দোকানে হালখাতা ছিল। হালখাতা শেষ করে রাত সাড়ে ৯টার দিকে হোসেনডাঙ্গা গ্রামের কৃষক মো. মিজান ও দক্ষিণ খোকসা গ্রামের হরুই মিয়াকে নিয়ে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। এ সময় দুর্বৃত্তরা তাদের পথরোধ করে। তারা মিজানুরকে মোটরসাইকেল থেকে নামিয়ে হালখাতার টাকাভর্তি ব্যাগ চায়। কিন্তু মিজানুর টাকার ব্যাগ ছেলেকে দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। এ সময় সন্ত্রাসীরা কৃষক মিজান ও হারুইকে দৌড়ে পালিয়ে যেতে বলে। মিজান ও হারুই পালিয়ে যাওয়ার সময় দেখেন, সন্ত্রাসীরা মিজানুরকে মাথায় গুলি করে হত্যা করেছে। ঘটনার পর থেকে কৃষক মিজান, হারুই ও তাদের পরিবার চরম আতঙ্কে আছেন বলে জানিয়েছেন। গোটা হত্যাকাণ্ডে ৮-১০ জন সন্ত্রাসী ছিল বলে জানিয়েছেন কৃষক মিজান।

নিহতের চাচাতো ভাই মনোয়ার হোসেন জানান, কিছুদিন আগে মিজানুরের কাছে সম্রাট নামে স্থানীয় এক সন্ত্রাসী চাঁদা দাবি করে। কিন্তু মিজানুর চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানান। এ ছাড়া ব্যবসা নিয়ে এলাকার এক ব্যক্তির সঙ্গে আমার ভাইয়ের বিরোধ ছিল। ধারণা করছি, এর যে কোনো একটি কারণে মিজানুরকে হত্যা করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে পাংশা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সুমন কুমার সাহা জানান, হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। কারা, কেন ওই শিক্ষককে হত্যা করেছে, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।

চাঁদাবাজ ও এলাকাবাসীর আতঙ্কের বিষয়ে রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার এমএম শাকিলুজ্জামান বলেন, এটা পুরোপুরি সঠিক নয়। এলাকায় কিছু খারাপ মানুষের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব আছে। আমরা বিষয়গুলো দেখছি। পুলিশি নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। 

এদিকে মিজানুর রহমান হত্যার প্রতিবাদে সোমবার দুপুরে পাংশা-কালুখালী উপজেলা শিক্ষা কল্যাণ ট্রাস্টের আয়োজনে পাংশা পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় এক সমাবেশে শিক্ষা কল্যাণ ট্রাস্টের সভাপতি ও আখরজানি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মখলেছুর রহমানের সভাপতিত্বে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকরা বক্তব্য দেন। বুধবারের মধ্যে মিজানুর রহমানের খুনিদের গ্রেপ্তার করা না হলে উপজেলার সব স্কুল এবং ক্লাস বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন তারা।