‘বন্ধু’ শান্তর ইট-বালুর ব্যবসায় দুই লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন কলেজছাত্র ইকরাম হোসেন মোল্লা (২২)। প্রতিমাসে লভ্যাংশের টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও পরে টালবাহানা শুরু করেন শান্ত। একপর্যায়ে ইকরাম তার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা ফেরত চান। আর তাতেই শুরু হয় দ্বন্দ্ব। এরপর সিদ্দিক নামে তাদের আরেক বন্ধুর সঙ্গে বসে ইকরামকে হত্যার পরিকল্পনা করেন শান্ত।

পরিকল্পনা অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবার মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে খিলক্ষেতের ডুমনী এলাকায় ইকরামকে হত্যা করেন তারা। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

খিলক্ষেত থানার ওসি সাহান হক জানান, হত্যায় জড়িত সিদ্দিক ও শান্তকে শনিবার রাতে ডুমনী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ রোববার তাদের আদালতে পাঠানোর পর হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন শান্ত। সিদ্দিককে দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

ইকরাম তেজগাঁও কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। ডুমনী এলাকায় একটি বাসায় মা-বাবার সঙ্গে থাকতেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।

এ ঘটনায় তাঁর বাবা খিলক্ষেত থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরে শনিবার দুপুরে ডুমনীর বালুচর এলাকার একটি ডোবায় তাঁর মরদেহ পাওয়া যায়। এরপর হত্যা মামলা করেন ইকরামের বাবা।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, শান্ত, সিদ্দিক ও ইকরামের বাসা একই এলাকায়। একে অপরের বন্ধু ছিল তারা। পাওনা টাকা চাওয়ায় শান্তর সঙ্গে বিরোধ তৈরি হয় ইকরামের। অপরদিকে সিদ্দিকের বেপরোয়া চলাফেরার কথা তার মাকে জানান ইকরাম। মায়ের বকুনির পর সিদ্দিক পাঁচ দিন ঘরছাড়া ছিলেন। এতে ইকরামের ওপর তিনি ক্ষুব্ধ হন; ঘুরতে থাকেন প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য।

এদিকে সিদ্দিকের সঙ্গে ইকরামের বিরোধের বিষয়টি জেনে যান শান্ত। এক পর্যায়ে ইকরামকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন তারা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাকে ফোন করে ডুমনী বালুচর এলাকায় যেতে বলেন শান্ত। আগে থেকেই তারা ভোমর, হাতুড়ি ও কাঁটার সংগ্রহ করে রাখেন। ডোবার পাশে বসে তিনজন গল্প করেন। এক পর্যায়ে সিদ্দিক পেছন থেকে ভোমর দিয়ে ইকরামের মাথা ও পিঠে আঘাত করেন। মাটিতে পড়ে গেলে শান্ত হাতুড়ি দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করতে থাকেন। পরে কাটার দিয়ে গলা কেটে হত্যা নিশ্চিত করেন তারা। হত্যার পর মরদেহ গুমের উদ্দেশে ডোবার কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে রাখেন তারা।

তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় শান্ত ও সিদ্দিককে শনাক্ত করে পুলিশ। এরপরই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। ভোমর ও হাতুড়ি ঘটনাস্থলের পাশে এবং একটু দূরে বর্জের মধ্যে রক্তাক্ত কাটার ফেলে রেখেছিলেন তারা। সেগুলো জব্দ করা হয়েছে।