বরেণ্য নির্মাতা মৃণাল সেনের জন্মশতবার্ষিকীর শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাতে প্রয়াত পরিচালকের জীবন ও তাঁর সময়ের গল্প নিয়ে সৃজিত মুখার্জি তৈরি করছেন সিনেমা ‘পদাতিক’। এতে মৃণাল সেনরূপে অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী। পর্দায় মৃণাল হয়ে ওঠা গল্প জানালেন এই অভিনেতা 

চলচ্চিত্রকার মৃণাল সেনকে ধারণ করা কঠিন কাজ। কারণ, আমি কখনও বায়োপিকে অভিনয় করিনি। একটি বায়োপিকের কাজ দর্শক যখন দেখেন, তখন গুণী মানুষটির শতভাগ মেলাতে চান। যে অভিনয় করছেন আর যাঁর চরিত্রে অভিনয় করছেন– দু’জন মানুষ কিন্তু এক নয়। কিছু তফাত থাকবেই। ফটোশুটের পর যখন দেখা গেল লুক কাছাকাছি তখন এপার বাংলা ও পশ্চিমবঙ্গের দর্শকের আগ্রহ বাড়তে থাকল। বলিউড ‘শাহেনশাহ’ অমিতাভ বচ্চনের কাছ থেকেও প্রশংসা পেয়েছি। মৃণাল সেনের বায়োপিকে তাঁর কলকাতায় যাওয়া, চাকরিবাকরি, সিনেমার সঙ্গে যুক্ত হওয়া, স্ট্রাগল, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি– সবকিছুই উঠে এসেছে।

একরকম দেখতে তো কত মানুষ আছেন। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন, ব্যক্তিত্ব, দর্শন তো আর এক হবে না। এ বিষয়গুলো নিয়েও অনেক কাজ করতে হয়েছে। অভিনয় করতে গিয়ে মৃণাল সেনের আদর্শিক জায়গাটা বোঝার চেষ্টা করেছি। এ ব্যাপারে নির্মাতা সৃজিত মুখার্জি আমাকে সহযোগিতা করেছেন। মৃণাল সেনকে আমরা একজন নির্মাতা হিসেবে চিনি। যখন আমি সেই চরিত্রে অভিনয় করতে গেলাম গল্পের প্রয়োজনে তাঁর জীবনযাপন চিনতে ও বুঝতে হয়েছে। এভাবে কাজটি শেষ করেছি। এই সিনেমার শুটিং আগামী মাসে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মৃণাল সেনের শততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎসবে এটি প্রদর্শনের কথা ভেবে নির্মাতা ফেব্রুয়ারিতে শুটিং করেছেন। 


কলকাতায় এই সিনেমার যখন দৃশ্যধারণ চলছিল তখন আমার বাবা মারা যান। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। সেই অবস্থায়ও কাজটি করার চেষ্টা করেছি। হয়তো আমার প্রস্তুতিতে কিছুটা কমতি ছিল। যতটুকু মানসিকভাবে মনোযোগ দেওয়া উচিত ছিল বাবার মৃত্যুর কারণে কিছুটা হলেও বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এর পরেও চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে চেষ্টা করেছি চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলতে। বাকিটা দর্শক পর্দায় দেখবেন। সৃজিত মুখার্জি গুণী একজন নির্মাতা। তিনি তাঁর সর্বোচ্চটা দিয়েছেন। সিনেমাটি এখনও মুক্তি পায়নি। যেহেতু এটি নিয়ে বেশি কিছু বলার সুযোগ এখন নেই। শুনেছি, এ বছরই কলকাতায় ছবিটি মুক্তি পাবে। পাশাপাশি বাংলাদেশেও সিনেমাটি মুক্তি দেওয়ার ইচ্ছা আছে নির্মাতার। মৃণাল সেন আমাদের গর্ব। এ মানুষটির জন্ম, বেড়ে ওঠা ফরিদপুরে। তাঁর সফলতা বা অর্জনের অংশীদারিত্ব আমাদেরও আছে। আমরাও চাই মৃণাল সেনকে ধারণ করতে। তাঁকে আমাদের মানুষ বলে শ্রদ্ধা জানাতে। দুঃখজনকভাবে নব্বইয়ের ঘরে তিনি আটকে গেলেন। শতায়ু হতে পারলেন না। এ আক্ষেপ তো আমাদের সব সময়ই থাকবে।