- রাজধানী
- ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে মারধর করে ৪ ঢাবিছাত্রকে হলছাড়া করার অভিযোগ
ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে মারধর করে ৪ ঢাবিছাত্রকে হলছাড়া করার অভিযোগ

ছবি: সমকাল
সাবেক শিক্ষার্থীকে কক্ষ ছেড়ে চলে যেতে বলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মাস্টারদা সূর্যসেন হলে চার শিক্ষার্থীকে রুমে ডেকে সংঘবদ্ধভাবে মারধর করে হল ছাড়া করার অভিযোগ উঠেছে হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিয়াম রহমানের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনজন আবাসিক শিক্ষককে নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হল প্রশাসন। মঙ্গলবার রাতে সিয়াম রহমানের ৪৫০ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। তবে সিয়াম রহমানের দাবি, ‘তাদের ফোনে পদ্মা সেতু নিয়ে সমালোচনামূলক পোস্ট পাওয়া গেছে। তাই তারা নিজেরাই স্বেচ্ছায় হল ছেড়েছে।’
অন্য অভিযুক্তরা হলেন হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হামিদ কারজাই, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ জামান অভি ও আব্দুল আহাদ, আপ্যায়ন সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম নীরব ও উপ-আইন সম্পাদক মুহাম্মদ তালহা।
বুধবার দুপুরে ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে এবং হলে কক্ষ ফিরে পেতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। ভুক্তভোগীরা হলেন ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের আলম বাদশা, একই বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের লুৎফুর রহমান, ২০১৮-১৯ সেশনের মনোবিজ্ঞান বিভাগের আল আমীন ও আরবি বিভাগের আশিকুর রহমান।
অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগীরা উল্লেখ করেন, তারা সবাই ৫৩২ নম্বর কক্ষের বাসিন্দা। ২০১৯ সাল থেকে তাদের কক্ষে ২০১৩-১৪ সেশনের সুমন আহমেদ নামে একজন সাবেক ছাত্র অবৈধভাবে থাকেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে তাদের মানসিক নিপীড়ন ও মারতে উদ্যত হন। গত শনিবার রুমে তার জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখতে বললে গালিগালাজ করে স্ট্যাম্প নিয়ে তাদের দিকে মারতে আসেন। তারা বিষয়টি আবাসিক শিক্ষক ড. আমীর হোসেনকে জানান। পরে সোমবার তারা সুমন আহমেদকে রুম থেকে বের করে দেন।
শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেন, মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে তাদেরকে সিয়াম রহমান ৪৫০ নম্বর কক্ষে ডাকেন এবং কক্ষে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে তাদের মোবাইল কেড়ে নিয়ে মোবাইল চেক করতে থাকেন। মোবাইলে কিছু না পেয়ে অভিযুক্ত সবাই তাদেরকে উপর্যুপরি কিল, ঘুষি ও লাথি মারতে থাকেন। তাদেরকে আর হলে দেখলে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। রাত ৮টার দিকে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হলে তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
ভুক্তাভোগী শিক্ষার্থীরা আরও উল্লেখ করেন, সিয়াম রহমান তাদের কাছ থেকে আলাদা চারটি মুচলেকা নেন, সেখানে লেখা হয়, ‘আমরা বর্তমানে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নই। সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে একমত নই। অন্যায়ভাবে সুমন আহমেদকে কক্ষ থেকে বের করেছি। হল থেকে স্বেচ্ছায় বের হয়ে যাব।’
অভিযোগের বিষয়ে সিয়াম রহমান সমকালকে বলেন, ‘আমি নিজেই তাদেরকে হলে তুলছি। আমার এলাকারই ছোট ভাই। কালকে তাদের কক্ষের সমস্যা সমাধানের জন্য বসছি। সেখানে জানলাম তারা ছাত্রলীগের নাম করে কক্ষে কাউকে উঠতে দিত না। পরে তার ফেসবুক পোস্টে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি, পদ্মা সেতু নিয়ে পোস্ট। তারপর সে আমাকে অনুরোধ করল ভাই থানায় অভিযোগ দিয়েন না। অভিযোগ দিলে চাকরি পেতে সমস্যা হবে। প্রশাসনের হাতে দিয়েন না ভাই, তাহলে আমাকে বহিষ্কার করে দেবে। আমি নিজেই হল ছেড়ে দিচ্ছি।’
সিয়াম রহমান বলেন, ‘এলাকার ছোট ভাই হিসেবে ফেভার করেছি। আজকে দেখি কার কার ইন্ধনে বলছে আমি নাকি রড দিয়ে মারছি। উপকার করতে গেলাম কিন্তু কার প্ররোচনায় পড়ে উল্টো দিকে দৌড়াচ্ছে।’
হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাকির হোসেন ভূঁইয়া সমকালকে বলেন, ‘অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনজন আবাসিক শিক্ষককে নিয়ে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তাদেরকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিয়ে বলা হয়েছে।’
মন্তব্য করুন