বৈষম্য হ্রাস ও দারিদ্র্য বিমোচনে জাতীয় বাজেটে সব স্তরের মানুষের প্রতিনিধিত্ব থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশিষ্টজন। তাঁরা বলছেন, ভূমি সংস্কারে এবং প্রান্তিক কৃষকদের জন্য কোনো বাজেট বরাদ্দ থাকে না। বাজেটে প্রান্তিক ও জুমচাষিদের জন্য রেশনিংয়ের ব্যবস্থা রাখতে হবে। সেই সঙ্গে নারী কৃষকদের স্বীকৃতি দিতে হবে কৃষক হিসেবে। আদিবাসী, দলিত, হরিজন এবং চা শ্রমিকদের জন্যও বাজেটে বরাদ্দ চাই। সর্বোপরি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে মাথাপিছু বরাদ্দ এখনকার তুলনায় ২০ গুণ বাড়াতে হবে।

বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে ‘জাতীয় বাজেটে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে অংশীদারিত্ব ও বাজেট ভাবনা এবং মনিটরিং’ বিষয়ক এক জাতীয় সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। এএলআরডি ও এইচডিআরসি যৌথভাবে এর আয়োজন করে।

মানবাধিকার কর্মী খুশী কবিরের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল, অর্থনীতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শফিক উজ জামান, মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরূপা দেওয়ান, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং প্রমুখ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অর্থনীতিবিদ ও গবেষক অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত।

রাশেদ খান মেনন বলেন, আগে বাজেটে প্রান্তিক ও আদিবাসীদের জন্য একটি অনুচ্ছেদ যুক্ত থাকত। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এখনকার বাজেটে তা থাকে না। তিনি জবাবদিহিতা ও মনিটরিং ব্যবস্থা আরও জোরদারের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।

মূল প্রবন্ধে ড. আবুল বারকাত বলেন, বৈষম্য হ্রাস ও দারিদ্র্য বিমোচনে জাতীয় বাজেট যথেষ্ট কার্যকর হাতিয়ার হতে পারে, যদি বাজেটের মূল লক্ষ্য হয় বৈষম্য হ্রাস ও দারিদ্র্য বিমোচন। বিষয়টি বাজেটের ব্যয় বরাদ্দ এবং আয় কাঠামোর ওপর নির্ভর করে। বাজেটে ব্যয় বরাদ্দে অগ্রাধিকার ও আয় কাঠমোতে জোর দিতে হবে।

আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরেন তিনি। সেগুলো হলো– বৈষম্য হ্রাসের লক্ষ্যে আসন্ন বাজেটে গ্রামীণ নারীদের জন্য মাথাপিছু বাজেট বরাদ্দ এখনকার তুলনায় কমপক্ষে দ্বিগুণ বৃদ্ধি করা, কৃষক হিসেবে নারী কৃষকদের স্বীকৃতি দিয়ে তা কার্যকরে বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ প্রদান, নারী কৃষকদের কৃষি ও স্বাস্থ্য বীমার জন্য বাজেটে যথেষ্ট পরিমাণে বরাদ্দ রাখা, বাজেট বৈষম্য হ্রাসে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আদিবাসী মানুষের জন্য মাথাপিছু বরাদ্দ এখনকার তুলনায় কমপক্ষে দ্বিগুণ বৃদ্ধি, সমতলের আদিবাসীদের জন্য ভূমি কমিশন গঠন ইত্যাদি।

অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বলেন, পারিবারিক কৃষিকে বাজেটে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। সেইসঙ্গে নারী কৃষকদের কৃষক হিসেবে দিতে হবে স্বীকৃতি। আদিবাসী, দলিত, হরিজন এবং চা শ্রমিকদের জন্য বাজেটে বরাদ্দ দিতে হবে।

শফিক উজ জামান বলেন, দেশের ২৫ শতাংশ আবাদি জমি কমে গেলেও উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে চলমান বৈষম্য কমাতে হলে কৃষিভিত্তিক শিল্পায়ন গড়ে তোলার জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখা বাঞ্ছনীয়।

নিরূপা দেওয়ান বলেন, জাতীয় বাজেটে সব স্তরের মানুষের প্রতিনিধিত্ব থাকা প্রয়োজন। সেইসঙ্গে সরকারের বিভিন্ন সেবা আরও সহজীকরণ করা দরকার।

সঞ্জীব দ্রং বলেন, সরকারের বাজেটের আকার যত বড় হোক না কেন বৈষম্য থাকলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কোনো কাজে আসবে না। পাহাড়ি আদিবাসীদের বিষয়গুলোকে অনুধাবন করতে হবে।