ইট-কাঠের এই যান্ত্রিক ঢাকা শহরে সবাই ব্যস্ত। ইচ্ছা থাকলেও পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে বসে আড্ডা দিয়ে সোনালি দিনের স্মৃতি রোমন্থন করার সুযোগ মেলে না বললেই চলে। কাঠখোট্টা এ শহরে তাই পূর্বপরিকল্পনা করেই মিলনমেলার আয়োজন করতে হয়। তাও হয় বছরে এক কী দু’বার। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ শতবর্ষী সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা প্রতি মাসের প্রথম শুক্রবার প্রাতঃরাশে মিলিত হন একসঙ্গে। গতকাল শুক্রবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি; বরং নিয়মিত এ আয়োজনই হয়ে ওঠে বিশেষ। কেননা, উপলক্ষটা ছিল প্রাণপ্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১০৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের ক্যান্টিনে এ মিলনমেলার আয়োজন করে কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ফেসবুক গ্রুপ ‘শতবর্ষী রাজেন্দ্র কলেজ : আমার ভালোবাসা।’

সকাল ৮টার দিকে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে গিয়ে দেখা যায়, কলেজের অর্ধশতাধিক প্রাক্তন শিক্ষার্থী তাঁদের পরিবার-পরিজন নিয়ে প্রাতঃরাশে অংশ নিতে এসেছেন। সবাই নিজেদের মধ্যে আড্ডা দিচ্ছেন, কেউবা তুলছেন সেলফি। আবার যাঁরা এই আয়োজনে অংশ নিতে পারেননি, তাঁরা ভিডিও কলের মাধ্যমে ‘দুধের স্বাদ ঘোলে’ মেটানোর চেষ্টা করছেন। সকাল ৮টা ২০ মিনিটে কলেজের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক কাটা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, প্রাক্তন উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক তারেক হোসেন খান, দৈনিক সমকালের প্রকাশক আবুল কালাম আজাদ, কলেজের ১৯৬৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী মরিয়ম বেগম, কাজী হোসনে আরা প্রমুখ।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আয়োজনের মূল উদ্যোক্তা কলেজের প্রাক্তন শিক্ষক অধ্যাপক ড. রানা চৌধুরী। সমাপনী বক্তব্য দেন ১৯৭১ ব্যাচের শিক্ষার্থী ম. র. ম আবদুল্লাহ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ১৯৮৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী সোহেল মাহবুব। এ ছাড়া অনেকে নিজেদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠানে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, রাজেন্দ্র কলেজের সঙ্গে আমাদের সেতুবন্ধন অন্য রকম। বিভিন্ন জায়গায় চাকরি করার পর আমি রাজেন্দ্র কলেজে শিক্ষকতার সুযোগ পাই। চাকরি জীবনের ৩১ বছরের মধ্যে ২১ বছরই সেখানে চাকরি করেছি। এই কলেজের সঙ্গে আমার আত্মার সম্পর্ক রয়েছে। কলেজজীবনের সেই স্মৃতিগুলো আজও আমাকে আন্দোলিত করে।

মরিয়ম বেগম বলেন, আমি আমেরিকা প্রবাসী। তবে প্রতি বছরই আমি কলেজের মিলনমেলায় উপস্থিত থাকার চেষ্টা করি। কলেজের মিলনমেলার জন্য কষ্ট হলেও আসি। কাজী হোসনে আরা বলেন, আমি রাজেন্দ্র কলেজে ১৯৬৬-১৯৭০ সাল পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। আমার ১০ ভাইবোনের মধ্যে ছয়জনই রাজেন্দ্র কলেজে পড়াশোনা করেছি। এখন কলেজে গেলে মনটা খারাপ হয়ে যায়। কলেজের অবকাঠামোগত পরিবর্তন হয়েছে। উন্নয়নের ছাপ ভেবে আনন্দও হয়। তবে আমি সেই পুরোনো কলেজকে মিস করি।

বক্তব্য শেষে সবাই প্রাতঃরাশে অংশ নেন। এরপর দলগত ছবি তোলার মাধ্যমে আয়োজনের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।