- রাজধানী
- গুদামের কীটনাশক ব্যবহার হয়েছে বাসায়: ডিবি
বিষক্রিয়ায় দুই ভাইয়ের মৃত্যু
গুদামের কীটনাশক ব্যবহার হয়েছে বাসায়: ডিবি

ডিসিএস অর্গানাইজেশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান ও এমডি ফরহাদুল আমিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে - সমকাল
রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় পোকামাকড় নিধনের কাজে ডিসিএস অর্গানাইজেশন লিমিটেডের ব্যবহার করা কীটনাশক সাধারণত গুদাম, গার্মেন্টস, কলকারখানাসহ উন্মুক্ত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু তারা সেটি বাসা-বাড়িতে ব্যবহার করেছে। এ ছাড়া ভুক্তভোগী পরিবারকে যথাযথভাবে সর্তক না করায় দুর্ঘটনা ঘটেছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এ তথ্য জানান।
এর আগে এদিন সকালে নরসিংদী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্ত এলাকা থেকে ডিসিএস অর্গানাইজেশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান ও এমডি ফরহাদুল আমিনকে গ্রেপ্তার করে ডিবির লালবাগ বিভাগ।
সংবাদ সম্মেলনে ডিবি প্রধান জানান, ঘটনার পর প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও এমডি আত্মগোপন করেন। তারা গাড়িতে করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরতে থাকেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তাদের ব্যবহার করা কীটনাশকের অনুমোদন ছিল কিনা তা যাচাই-বাছাই চলছে।

কীটনাশক বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে হারুন অর রশীদ বলেন, অ্যালুমিনিয়াম ফসফেট সমৃদ্ধ এই কীটনাশক বড় গার্মেন্টস, বীজ গুদাম ও বাণিজ্যিক স্থানে ব্যবহার করা হয়। এগুলো বাসা বাড়িতে ব্যবহার করা যায় না। আর ব্যবহার করলেও ৭২ থেকে ৯৬ ঘণ্টা সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে হয়। এছাড়া বসুন্ধরার বাসাটিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক বিষ সঠিক অনুপাতে ছিল না। ফলে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। এই কীটনাশক কীভাবে কোথা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে, এর অনুমোদন ছিল কি-না, এর রাসায়নিক অনুপাত সঠিক ছিল কি-না‒ এসব বিষয়ে জানতে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ডিবি প্রধান বলেন, তীব্র দাবদাহের সময়ে কীটনাশক মানব জীবনের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে‒ পেস্টিসাইড কোম্পানির কর্মকর্তাদের বিষয়টি উপলব্ধি করা দরকার ছিল। কিন্তু অর্থের লোভে তারা স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি উপলব্ধি না করে এবং পরিবারের সদস্যদের যথাযথ নিরাপত্তা উপদেশ না দিয়েই আনাড়ি কর্মচারীদের দিয়ে কীটনাশক প্রয়োগ করেন। যার ফলশ্রুতিতে দুই শিশু-কিশোরের জীবন ঝরে যায়। অসুস্থ হন পরিবারের অন্য সদস্যরাও।
গত শুক্রবার বসুন্ধরার আই ব্লকের ১০ নম্বর রোডের একটি বাসায় ডিসিএস অর্গানাইজেশন নামের প্রতিষ্ঠানের পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিসের কর্মীরা তেলাপোকা মারার কীটনাশক প্রয়োগ করেন। এর দুদিন পর রোববার ভুক্তভোগী পরিবারটি ওই বাসায় ওঠে। বাসায় প্রবেশের কিছুক্ষণ পর অসুস্থ হয়ে পড়েন তারা। ওই দিনই এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকালে শাহিল মোবারত জায়ান (৯) মারা যায়। পরের দিন দুপুরে মারা যায় তার বড় ভাই শায়েন মোবারত জাহিন (১৫)। এ ঘটনায় তাদের বাবা মোবারক হোসেন তুষার গত ৫ জুন ডিএসএস অর্গানাইজেশনের তিনজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। ওই দিনই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা টিটু মোল্লাকে গ্রেপ্তার করে ভাটারা থানা পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে মোবারক হোসেন ভিডিও কলে যুক্ত হয়ে বলেন, আল্লাহ আমার দুই সন্তানকে তুলে নিয়েছে, নিশ্চয় আল্লাহ ভালো জানেন। কিন্তু ফুটফুটে দুই শিশুর এভাবে মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। যাদের কারণে দুই সন্তান হারিয়েছি, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত হোক, সুষ্ঠু বিচারে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। কোনোভাবেই তারা যেন পার না পায়। আমরা যেন ন্যায়বিচার পাই। আর কোনো বাবা-মাকে এভাবে যাতে আদরের সন্তান হারাতে না হয়।
তিনি বলেন, কোনো কাজ না পারলে সাধারণত আমরা বিশেষজ্ঞদের ডাকি। কিন্তু তারা টাকার লোভে দুইটা সন্তানকে মেরে ফেলল। আমি যতটা শুনেছি কোম্পানির প্রয়োগ করা কীটনাশক বাসা বাড়িতে দেওয়ার অনুমোদন ছিল না। সেটা গুদামে ব্যবহার করা কীটনাশক, কিন্তু তারা আমার বাসায় ব্যবহার করেছে।
/এসআর/
মন্তব্য করুন