পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়ায় শত বছরের পুরোনো ডিআইটি পুকুর উদ্ধারে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে শুরু হওয়া এই অভিযানে পুকুরের জায়গা দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ দোকান ও মার্কেট উচ্ছেদ করা হয়। তবে এখনও সেখানে থাকা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের অস্থায়ী কার্যালয় উচ্ছেদ হয়নি। এই কার্যালয় উচ্ছেদে তিন দিনের সময় বেঁধে দিয়ে আপাতত অভিযান স্থগিত করেছে রাজউক। বিষয়টি নিয়ে জানতে ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাহানা আক্তারকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। গত বুধবার ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ডিআইটি পুকুর দখলমুক্ত করার ঘোষণা দেন।

এর আগে উচ্ছেদ অভিযানকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই ডিআইটি পুকুর সংলগ্ন এলাকায় বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়। অভিযান শুরুর আগে পুকুর দখল করে গড়ে ওঠা দোকানপাটের মালপত্র সরাতে মাইকিং করা হয়েছিল। দোকানিরা শুরুতে পাত্তা না দিলেও পরে মালপত্র সরাতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। উচ্ছেদ ঠেকাতে কাউন্সিলরের লোকজন জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের লাঠিচার্জ করে সরিয়ে দেয়। এ সময় রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শারমিন আরা, অভিযানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নকিব হাসান ও শ্যামপুর থানার ওসি নজরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া সকালে উচ্ছেদ অভিযান শুরুর আগে রাজউক কর্মকর্তাদের দেখে স্বাগত জানিয়ে পুকুর রক্ষার দাবিতে ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়ান এলাকাবাসী।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শারমিন আরা বলেন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে আমাদের অভিযান চলমান থাকবে।

ডিআইটি পুকুর রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক ইব্রাহিম আহমেদ রিপন বলেন, অভিযান শেষে সীমানা নির্ধারণ, চারদিকে হাঁটা ও বসার জায়গা, ঘাট নির্মাণসহ পুকুরের সৌন্দর্যবর্ধন করে সংরক্ষণেরও দাবি জানান তিনি।

স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে পুকুরটির মালিকানা দাবি করা নৌশাদ চৌধুরী গং এবং আমমোক্তার জাকির হোসেন রাজউকের বিরুদ্ধে মামলা লড়ছিলেন। পরে আদালত তাদের পক্ষে রায় দেন। এর পর স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাহানা আক্তার ও তাঁর বাবা পুকুরের চারদিক ভরাট করে দোকান ও স্থাপনা নির্মাণ শুরু করেন। এমনকি পুকুরের জায়গায় কাউন্সিলর তাঁর অস্থায়ী কার্যালয়ও তৈরি করেছেন। সম্প্রতি পুকুরটির পাড়ে আরও বালু ফেলে জোরেশোরে ভবন নির্মাণ শুরু হয়। গত শুক্রবার পুকুর দখলের প্রতিবাদে সেখানে মানববন্ধনের ঘোষণা দেয় এলাকাবাসী ও পরিবেশবাদী জোট বিএনসিএ। কিন্তু কাউন্সিলর ব্যাপক লোকজন জড়ো করায় ঝুঁকি এড়াতে স্থানীয়দের মানববন্ধন করতে দেয়নি পুলিশ।

বিষয়টি সব গণমাধ্যমে উঠে এলে তা আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

গত মঙ্গলবার পুকুর রক্ষায় সরকারের সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা ও পুকুর ভরাটকারী ব্যক্তিদের আইনি নোটিশ পাঠায় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। এ বিষয়ে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বেলা বলেছে, ডিআইটি পুকুরের পানি স্থানীয় বাসিন্দারা নানা কাজে ব্যবহার করতেন। এখন পুকুরের চারপাশে ছড়িয়ে আছে ময়লা-আবর্জনা। মাটি ফেলে ভরাট করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন স্থাপনা। ডিআইটি পুকুরটি ভরাট হলে আশপাশের এলাকায় পানি নিষ্কাশন সমস্যা হবে। এলাকাবাসীর দুর্ভোগও চরমে পৌঁছাবে। এ ছাড়া অগ্নিকাণ্ড মোকাবিলায়ও এমন জলাধার গুরুত্বপূর্ণ।