তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে অর্থনৈতিক সংকট সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলে তা মুদ্রাস্ফীতি এবং মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেবে। দেশে বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের কষ্ট হলেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এবারের বাজেটে সুস্পষ্ট কোনো দিক নির্দেশনা নেই। ক্রমবর্ধমান আয় বৈষম্যের কারণে সামাজিক অসন্তোষ তৈরি হতে পারে। রিজার্ভ পতনের কারণে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমছে। ফলে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। আমাদের রিজার্ভের হিসাব অতিরঞ্জিত, যা আন্তর্জাতিক মানের নয়। প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপির টার্গেট ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হলেও তা বাস্তবতা বিবর্জিত। বাংলাদেশে কর আহরণের পরিমাণ বিশ্বে সর্বনিম্ন। এছাড়া বিদ্যুৎ, গ্যাসের সমস্যা দূর করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ ব্যাহত হবে। বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রী পাচারকৃত টাকা দেশে ফেরত না আসা প্রসঙ্গে টাকা পাচার না হওয়ার যে মন্তব্য করেছেন তা সঠিক নয়। ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের অভাবে অপরিশোধিত ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। এ অবস্থার উত্তরণ না হলে আমানতকারীদের আস্থাহীনতা বাড়বে। জাতীয় সংসদে সরকারি দলের একক আধিপত্য থাকায় বাজেট নিয়ে কার্যকর আলোচনা হয় না। এছাড়া বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় জনঅংশগ্রহণ সন্তোষজনক নয়। 

শনিবার রাজধানীর এফডিসিতে ‘এবারের বাজেট টেকসই উন্নয়নে সহায়ক হবে কি না’ এ সংক্রান্ত ছায়া সংসদে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় তিনি এসব কথা বলেন। ইউসিবি পাবলিক পার্লামেন্ট শিরোনামে প্রতিযোগিতার আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। 

সভাপতির বক্তব্যে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, বর্তমান মূল্যস্ফীতির প্রেক্ষাপটে দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা নির্বাচনী বছরের বাজেটে সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। প্রস্তাবিত বাজেটের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকারের চেষ্টা থাকলেও প্রকৃতপক্ষে জনজীবনে এর ইতিবাচক প্রভাব দেখা যায়নি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানি, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। দেশ ও আন্তর্জাতিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে সরকার প্রস্তাবিত বাজেটে যথেষ্ট সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে। তবে দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় এবারের বাজেটে তেমন প্রতিফলন ঘটেনি। আয় করযোগ্য সীমার নিচে থাকা প্রত্যেক টিআইএন ধারীকে দুই হাজার টাকা কর পরিশোধের বিধান রাখা হয়েছে। এতে জনগণ টিআইএন গ্রহণ ও কর প্রদানে অনুৎসাহী হতে পারে। 

তিনি আরও বলেন, টাকা ছাপিয়ে সরকারের অর্থের সংকট মোকাবেলা করার চেষ্টা মুদ্রাস্ফীতি বাড়াবে। এই বাজেটে সরকার ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকার ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, তা মূল্যস্ফীতিকে আরও উসকে দেবে। এছাড়া সরকার যদি ব্যাংকিং খাত থেকে বেশি ঋণ নেয়, তা ব্যক্তিখাতে ঋণের প্রবাহ কমিয়ে দেবে। ফলে বেসরকারি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। বিদ্যমান ডলার সংকট ও আমদানিতে বিধিনিষেধ নতুন অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য পূরণ ব্যাহত করবে। আর্থিকখাতের সুশাসনের অভাব ও দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে না পারায় প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়বে।

ছায়া সংসদে স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশকে পরাজিত করে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির বিতার্কিকরা চ্যাম্পিয়ন হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক ড. শাকিলা জেসমিন, সাংবাদিক দৌলত আক্তার মালা ও সাংবাদিক বাবু কামরুজ্জামান। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।