ঢাকা সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩

ডিএসসিসির হোল্ডিং ট্যাক্স 

২২ প্রতিষ্ঠানের বকেয়া ৯০ কোটি টাকা

২২ প্রতিষ্ঠানের বকেয়া ৯০ কোটি টাকা

লতিফুল ইসলাম

প্রকাশ: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০

সরকারি প্রতিষ্ঠান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গত ১০ বছরে এক টাকারও হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করেনি। এ প্রতিষ্ঠানের কাছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) হোল্ডিং ট্যাক্স বাবদ পাবে ২৬ কোটি টাকার বেশি। প্রায় একই অবস্থা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। এক দশকে তাদের বকেয়া ১৫ কোটি টাকার বেশি। অন্যদিকে, মগবাজারের ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত এক টাকাও হোল্ডিং ট্যাক্স দেয়নি।

এভাবে রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ২২টি প্রতিষ্ঠানের কাছেই হোল্ডিং ট্যাক্স বাবদ ৯০ কোটি টাকার বেশি পাবে ডিএসসিসি। দফায় দফায় নোটিশ দিয়েও বকেয়া ট্যাক্স আদায় করতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। ডিএসসিসির রাজস্ব আয়ের অন্যতম বড় উৎস হোল্ডিং ট্যাক্স। বছরে এ খাত থেকে আসে ৩৫০ কোটি টাকার মতো।

সিটি করপোরেশনের সূত্রমতে, বহুতল ভবনের আয়তন গোপন করে, বর্গফুট কম দেখিয়ে এবং আবাসিকের নামে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন করে হোল্ডিং ট্যাক্স ফাঁকি দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এসব কারসাজির সঙ্গে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন অঞ্চলের রাজস্ব বিভাগ এবং বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত।

ডিএসসিসির রাজস্ব বিভাগ বলছে, বছরের পর বছর হোল্ডিং ট্যাক্স অনাদায়ি থাকার কারণ দুর্বল ব্যবস্থাপনা এবং একশ্রেণির কর্মকর্তার দুর্নীতি।

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স অনাদায়ি-সংক্রান্ত কাগজপত্রে দেখা যায়, শীর্ষ খেলাপিদের মধ্যে আছেন দেশের নামকরা ব্যবসায়ী, খ্যাতনামা হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিপণিবিতান ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।

এ বিষয়ে ডিএসসিসির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস সমকালকে বলেন, ‘রাজস্ব আদায় আমাদের অন্যতম কর্মোদ্যোগ। রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে সিটি করপোরেশনের আয় বাড়ানো এবং এর মাধ্যমে স্বয়ংসম্পূর্ণতার পথে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন আমাদের। এজন্য আমরা প্রতি সপ্তাহে পর্যালোচনা সভা করি। আমার তিন বছর মেয়াদে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকার বকেয়া রাজস্ব আদায় করা হয়েছে।’

ডিএসসিসি থেকে পাওয়া তালিকায় দেখা যায়, ২০০২-০৩ অর্থবছর থেকে ইস্কাটন গার্ডেনের হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল ট্যাক্স দিচ্ছে না। তাদের বকেয়া ৫ কোটি ৪৪ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। শিল্পী হামিদুর রহমান সড়কের জাস্টিস আমিন আহমেদ ট্রাস্টের ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে চলতি অর্থবছর পর্যন্ত বকেয়া ১ কোটি ৬৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। ২০০১-০২ অর্থবছর থেকে এখন পর্যন্ত গুলিস্তানের মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের বকেয়া রয়েছে ৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কাছে ডিএসসিসির পাওনা ১ কোটি ৭ লাখ টাকা।  ২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকে এ পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের  কাছে বকেয়া রয়েছে ২৬ কোটি ১১ লাখ ৩২ হাজার টাকা। 

২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে এ পর্যন্ত ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ বকেয়া রেখেছে ১২ কোটি ৯২ লাখ ৩৬ হাজার টাকা।  ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে পপুলার ডায়াগনস্টিক লিমিটেডের ভবনের মালিক এম এ হান্নান পরিশোধ করেননি ৮৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কাছে জমে আছে ৯৯ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। ২০০৮-০৯ অর্থবছর থেকে নর্দান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিশোধ করেনি ৩ কোটি ২৩ লাখ ৩১ হাজার টাকা।

এভাবে ২০১১-১২ অর্থবছর থেকে সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল ১ কোটি ৬৬ লাখ ৬৩ হাজার টাকা, ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৫ কোটি ২৭ লাখ ২৫ হাজার, ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে বড় মগবাজারের বিটিসিএল টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ১ কোটি ৩৯ লাখ ৯২ হাজার, ২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকে রেলপথ মন্ত্রণালয় (৫ কোটি ৩৪ লাখ ৪২ হাজার, ২০১৪-১৪ অর্থবছর থেকে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ৯৪ লাখ ১১ হাজার, ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে রেলওয়ের বিভাগীয় প্রকৌশলী-৩ এর কাছে ২ কোটি ৭৬ লাখ ৯১ হাজার, ২০০২-০৩ অর্থবছর থেকে পুরান ঢাকার মৌলভীবাজার রোডের মজিবুর রহমান গং ১ কোটি ২৩ লাখ ৮৩ হাজার টাকা বকেয়া রেখেছে।

এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, রেলপথ মন্ত্রণালয় এবং মজিবুর রহমান খান গং প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত এক কিস্তিও হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করেনি।

মেয়র তাপস জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক, বারডেম হাসপাতাল, রাজউক, হাউজ বিল্ডিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স করপোরেশন, শিক্ষা ভবন, বার্ন ইউনিট, প্রিয়াঙ্গণ শপিং সেন্টার, আল্পনা কমপ্লেক্সের মতো প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দীর্ঘদিনের প্রায় ৩৭ কোটি টাকা বকেয়া আদায় করা হয়েছে। অন্যদের বকেয়া বিষয়ে প্রতি সপ্তাহে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। আশা করছি, সব বকেয়া আদায় করতে পারব।’

ডিএসসিসির রাজস্ব বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, তাদের এলাকায় দশটি অঞ্চলে হোল্ডিং রয়েছে ২ লাখ ৯৮ হাজার। কিছু প্রতিষ্ঠান এই হোল্ডিং ট্যাক্স সময়মতো পরিশোধ না করে বছরের পর বছর আটকে রেখেছে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের উপপ্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা শাহজাহান আলী সমকালকে জানান, করপোরেশনের বড় অঙ্কের খেলাপিদের মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানই বেশি। তাদের কাছে দফায় দফায় চিঠি চালাচালি ও সরাসরি যোগাযোগ করা হয়েছে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠান বাজেট সংকটের অজুহাতে হোল্ডিং ট্যাক্সের টাকা পরিশোধ করছে না।

বিপুল ট্যাক্স বকেয়া রাখা হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এস এম হুমায়ুন কবির বলেন, এ হাসপাতাল একটি চ্যারিটি প্রতিষ্ঠান। আইনে আছে, চ্যারিটি প্রতিষ্ঠানগুলোকে কর পরিশোধ করতে হবে না। তারা আদালতে একটা মামলাও করেছে। এর কপিও করপোরেশনকে দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক মমতাজ উদ্দীন আহমেদ সমকালকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি নতুন ভবন করার সময়ই হোল্ডিং ট্যাক্স ধরেই বাজেট করা হয়। পরিশোধও করা হয়। এ ক্ষেত্রে আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে কর পরিশোধ করি। এখন সিটি করপোরেশন বলছে, অনেক দিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের হোল্ডিং ট্যাক্স বকেয়া আছে। ইউজিসির কাছে অর্থ চাওয়া হয়েছে। তারা অর্থ দিলেই পরিশোধ করা হবে।

আরও পড়ুন