আগুনে ভষ্মীভূত রাজধানীর মোহাম্মদপুর নতুন কাঁচাবাজার মার্কেটের (কৃষি মার্কেট) ‘হাবীব ক্লাথ স্টোর’ পরিষ্কার করছিলেন রুবেল মিয়া। ছয় বছর তিনি এই দোকানের কর্মচারী হিসেবে কাজ করছেন। পরিষ্কারের সময় তাঁর চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছিল পুড়ে যাওয়া মালপত্রে। কাছে এগোতেই বললেন, ‘মাসে ১৪ হাজার টাকা বেতন পাই। এই টাকায় মোহাম্মদপুর কাটাসুর এলাকায় তিন সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকি। দুই সন্তান লেখাপড়া করছে। বড় ছেলে স্বর্ণকারের কাজ শিখছে। আমার চাকরির ওপরেই চলে পুরো পরিবার। খুব কষ্টে পরিবার নিয়ে চলছি। এর মধ্যে আগুন লেগে সব কেমন উল্টেপাল্টে গেল।’

গত বৃহস্পতিবার মার্কেটে আগুন লাগে। এতে অধিকাংশ দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সেখানে ঘুরে দেখা যায়, ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকেই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা দোকানের শ্রমিকদের নিয়ে দোকান পরিষ্কার করছেন। এ সময় অপরিচিত যাকেই দেখছেন, তার কাছে গিয়ে কর্মচারী ও মালিকরা নিজেদের অসহায়ত্বের কথা বলছেন। অনেকে আবার এগিয়ে এসে বলছেন, ‘ভাই আমার নামটা একটু লেখেন। তালিকা থেকে বাদ পড়লে তো সব হারাব।’

ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘ভাই দোকানের মালিক ও কর্মচারী কারও অবস্থা ভালো না। বিপদে সবাই। এমন পরিস্থিতি যেন কেউ কারও পাশে দাঁড়ানোর অবস্থায় নেই। আমাদের আহাজারি আর কেউ দেখছে না।’  
শুক্রবার আগুন নেভানোর ঘোষণার পর ব্যবসায়ীরাই দোকান পরিষ্কারে নেমে পড়েছেন। তবে কয়েকটি স্থানে দেখা গেছে, অনেক দোকানের দেয়াল ঝুঁকিপূর্ণ। এ ছাড়া অনেক দেয়াল ভেঙে পড়ছে। এমনি একটি ঘটনা ঘটে দুপুর ২টা ৫ মিনিট। মোহাম্মদপুর বস্ত্র বিতানের বিপরীত পাশে একটি দোকান পরিষ্কার করার সময় ঝুঁকিপূর্ণ দেয়ালের কিছু অংশ ভেঙে পড়ে। পরে সেখান থেকে কর্মচারীরা দৌড়ে বেরিয়ে যান। এ ছাড়া দোকানের ভেতর থেকে বের করে নিয়ে আসা ময়লা থেকেও ধোঁয়া বের হচ্ছে। তারপরও অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে মার্কেটে কাজ করছেন।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, কর্তৃপক্ষের কাছে সহায়তা চান না, তারা চান তাড়াতাড়ি মার্কেটে ব্যবসায়ীদের বসার ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক। সিটি করপোরেশন থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঠিক করে দিক। তারা শুধু ওপরের ছাউনি, ক্ষতিগ্রস্ত দেয়ালসহ অবকাঠামো ঠিক করে দিক।

বৃহস্পতিবার ভোরে মার্কেটের মাঝখানের শেডের দক্ষিণ পাশের তিন নম্বর দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে ধারণা ব্যবসায়ীদের। পরে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ১৭ ইউনিট পাঁচ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে ফায়ার সার্ভিস ২৮ ঘণ্টা পর মার্কেটের আগুন নির্বাপণের ঘোষণা দেয়। এর পর ব্যবসায়ীরা যার যার দোকান পরিষ্কার করতে শুরু করেন।

ক্ষতিগ্রস্ত মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, ‘মোহাম্মদপুর নতুন কাঁচাবাজার মার্কেট’ তিনটি শেডে ভাগ করা। প্রতিটি শেডে দুটি সারিতে চার লাইনে দোকান। মার্কেটের উত্তর পাশে মাছ-মুরগিসহ মাংসের শেড। আগুনে এই শেডে কোনো ক্ষতি হয়নি। মাঝের শেড থেকে আগুন লাগে। একটি সূত্র জানায়, মার্কেটে দক্ষিণ পাশের শেডে ১১২টি দোকান, মাঝখানের শেডে ১৩২টি দোকান ও উত্তর পাশের কাঁচাবাজার শেডে ৭৪টি দোকান। এ ছাড়া ভাড়ায়চালিত টোল দোকান আছে আরও ১২৯টি।

মোহাম্মদপুর নতুন কাঁচাবাজার মার্কেট সমিতির কোষাধ্যক্ষ ওয়াহিদুল হকের দাবি, এই মার্কেট কখনও ঝুঁকিপূর্ণ ছিল না। ফায়ার সার্ভিস ও সিটি করপোরেশন থেকে আগুন লাগার পর যে কথা বলেছে, সেটা ভুল। তাদের ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার কাগজপত্র দেখাতে বলেন। এটা পরিকল্পিত মার্কেট, কোনোভাবেই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল না। গতকাল সন্ধ্যায় মার্কেটের সভাপতি ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের বৈঠক হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, যার যেই দোকান, সে সেটাতেই বসবে। মেরামতের জন্য কাজ শুরু করা হবে।