জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা, ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা বিন ইয়ামীন মোল্লা, অধিকারের আদিলুর রহমান ও নাসির উদ্দীন এলান নিবর্তনমূলক আইনে কারারুদ্ধ। এ সরকারের পতন না হলে তাদের মুক্তি মিলবে না। 

মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘নিপীড়নবিরোধী ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে আয়োজিত সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। আদিলুর রহমান ও নাসির উদ্দিন এলানের মুক্তির দাবিতে এ সমাবেশ আয়োজিত হয়।

সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক সিআর আবরার বলেন, বিদেশিরা নাক গলাচ্ছে, বলা হয়। রাষ্ট্র যখন সংবিধান নির্ধারিত ভূমিকা, নাগরিকের নিরাপত্তা, আইনের শাসন নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়, তখন মানুষ কার কাছে যাবে? মানবাধিকার বিশ্বব্যাপী সর্বজনীন একটা বিষয়। আজকে অন্যান্য দেশ আমাদের ব্যাপারে কথা বলছে। কথা বললে তো কাজ হয়। বিচারবহির্ভূত হত্যা তো কমে আসছে। এর আগে এত আহাজারি; মায়ের কান্না তো কাজে দেয়নি। 

তিনি বলেন, রায়ের সময় আদিলুর ও এলানকে মধ্যযুগীয় লোহার খাঁচায় আটকে রাখা হলো। তারা ডাকাত-চোর না। তাদেরকে নিয়ে যাওয়ার সময় জোর করে দুটো হাত আটকে রাখা হলো। আদিল-এলানের মুষ্টিবদ্ধ হাত ঐক্যবদ্ধ গণতন্ত্রের শক্তির প্রতীক। এটাকে তারা ভয় পায়। 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুল লতিফ মাসুম বলেন, মানুষের অধিকার যাতে স্বৈরাচার দখল করতে না পারে; মানবাধিকারকর্মীরা হলো তার আশ্রয়স্থল। আদিলুরসহ আরও অনেকে মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলার জন্য বেআইনিভাবে কারারুদ্ধ হয়েছে। আদিলুরকে যে হাত দাবিয়ে রেখেছে, সেই হাতকে গুঁড়িয়ে দিতে হবে। এ সরকারের পতন ছাড়া সেটি সম্ভব নয়। 

গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ সব বিদেশি দূতাবাস আদিলুর ও এলানের মামলার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করেছে। ইইউ উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রস্তাব পাস করেছে। তবে সরকার তোয়াক্কা করছে না। অর্থাৎ জাতীয় নির্বাচনের আগে সরকার মেসেজ দিচ্ছে– তারা হার্ডলাইনে, ড্যামকেয়ার। কাজেই যারা আন্দোলন করবে, তাদেরকে হয় জেলে নেওয়া হবে, না হলে ছাত্রলীগ-যুবলীগ অথবা হারুনের মতো পুলিশ দিয়ে পেটাবে।

সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক মাহবুব মোর্শেদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডলার চুরির মতো বড় অপরাধের বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নিতে দেখিনি। বরং মতপ্রকাশের অধিকার, সংবাদচর্চা-লেখার অধিকার রুদ্ধ করতে ডিজিটাল নিরাপত্তার মতো আইনগুলো ব্যবহার করছে। একের পর এক নাম বদলে একই আইন দিয়ে নিপীড়ন করার বিরুদ্ধে আমাদের দাঁড়াতে হবে। 

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান বলেন, হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে বাইরে পাঠানো হচ্ছে। সব ব্যাংক ফোকলা করে দেওয়া হয়েছে। একজন বিচারপতি যখন বলেন– আমরা ‘শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’, তখন বাংলাদেশে কী অবস্থা বিরাজ করছে, তা বোঝা যায়। তিনি বলেন, দু’চারটি ফ্লাইওভার নামে দুঃশাসন চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ সরকারের বিদায় না হলে বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার, গণমাধ্যমের অধিকার– কোনো কিছুই আমরা ফিরে পাব না।  

সভায় আরও বক্তব্য দেন গীতিকার অরূপ রাহী, নারীপক্ষের সংগঠক শিরিন হক, মায়ের ডাক-এর সমন্বয়ক আফরোজা আঁখি, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, মানবাধিকারকর্মী রেজাউর রহমান লেনিন, ছাত্র অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তারিকুল ইসলাম, ছাত্র ফেডারেশনের সৈকত আরিফ, ছাত্র ইউনিয়নের শিমুল কুম্ভকার প্রমুখ। 

সংহতি জ্ঞাপন করেন অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক নুরুল আমিন বেপারী, অধ্যাপক কামরুল আহসান, সাবেক সেনা কর্মকর্তা চৌধুরী হাসান সোহরাওয়ার্দী।